ভারত ও থাইল্যান্ডে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের হার বাড়ছে। তবে বাংলাদেশে শনাক্তের হার বাড়েনি, আগের মতোই আছে। এর পরও সংক্রমণের হার বৃদ্ধি প্রতিরোধে দেশের যেসব জায়গায় আগে করোনা পরীক্ষা করা হতো, সেসব জায়গায় আবার পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে জনসাধারণকে আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
বুধবার (১১ জুন) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুতিবিষয়ক এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু জাফর জনসাধারণের জন্য ১১ দফা নির্দেশনা দেন।
এদিকে বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় (গত মঙ্গলবার সকাল থেকে গতকাল বুধবার সকাল) ১০৭ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১০ জনের করোনা শনাক্ত হয়। এর আগের ২৪ ঘণ্টায় ১০১ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১৩ জন, তারও আগের ২৪ ঘণ্টায় ৪১ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক ডা. আবু জাফর বলেন, জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত দেশে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১২ থেকে ১৩ শতাংশের মধ্যে। এ হার এখনো একই রকম আছে। এ হার আশপাশের দেশের তুলনায় কম। তবে এখন পরীক্ষা কম হচ্ছে। সর্দি-কাশি হলে যখন বেশি বেশি মানুষ পরীক্ষা করাতে আসবে, তখন প্রকৃত অবস্থা বোঝা যাবে। তখন পরিস্থিতি বুঝে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে আগে দেশের যেসব জায়গায় করোনা পরীক্ষা করা হতো, এখন আবার সেসব জায়গায় পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এখন রোগী যে সংখ্যা, তাতে ডেডিকেটেড হাসপাতাল জরুরি হয়ে পড়েনি। কারণ আক্রান্তদের বেশির ভাগই বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছেন।
সবার জন্য এখন পরীক্ষার দরকার নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘হাসপাতালে এলে ডাক্তাররা যদি মনে করেন তার পরীক্ষা করা লাগবে, তাহলে পরীক্ষা করতে পরামর্শ দেবেন। বৃহস্পতিবার (আজ) দেশের হাসপাতালে কিট পৌঁছে দেওয়া হবে। আমরা মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতে চাচ্ছি। তবে কোনো প্যানিক সৃষ্টি করে নয়। মানুষ যেন ভীত হয়ে না যায় যে অবস্থা বুঝি খারাপ। ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। তবে মানুষকে সচেতন হতে হবে।’
১১ দফা নির্দেশনা বিষয়ে তিনি বলেন, করোনা প্রতিরোধে জনসমাগম যথাসম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে, উপস্থিত অনিবার্য হলে সে ক্ষেত্রে মাস্ক ব্যবহার করুন। শ্বাসতন্ত্রের রোগ থেকে নিজেকে রক্ষায় মাস্ক ব্যবহার করুন। হাঁচি বা কাশির সময় বাহু বা টিস্যু দিয়ে নাক-মুখ ঢেকে রাখুন। ব্যবহৃত টিস্যু দ্রুত ঢাকনাযুক্ত ময়লার ঝুড়িতে ফেলুন। সাবান ও পানি কিংবা হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে ঘন ঘন অন্তত ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধুতে হবে। অপরিষ্কার হাতে চোখ, নাক, মুখ স্পর্শ করবেন না। আক্রান্ত ব্যক্তিদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন, কমপক্ষে ৩ ফুট দূরত্ব বজায় রাখুন।
সন্দেহজনক রোগীদের ক্ষেত্রে নির্দেশনায় তিনি বলেন, জ্বর-কাশি এবং শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হলে সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত রোগীদের বাড়িতে অবস্থান করতে বলবেন। রোগীর নাক ও মুখ ঢাকার জন্য মাস্ক ব্যবহার করতে বলুন। রোগীদের সেবাদানকারী ব্যক্তি সতর্কতা হিসেবে মাস্ক ব্যবহার করবেন। প্রয়োজন হলে কাছাকাছি হাসপাতাল, আইইডিসিআর কিংবা স্বাস্থ্য বাতায়ন ১৬২৬৩ নম্বরে যোগাযোগ করুন।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে প্রস্তুতি চলমান আছে বলে জানান অধ্যাপক ডা. আবু জাফর। তিনি বলেন, করোনাভাইরাস নির্ণয়ে আরটিপিসিআর, র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট, ভ্যাকসিন, বিভিন্ন ব্যবস্থাপনার নির্দেশিকা, ওষুধ, অক্সিজেন, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, আইসিইউ, কোভিড চিকিৎসা বিশেষায়িত্ব সুবিধাসংবলিত নির্দিষ্ট হাসপাতাল প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এ ছাড়া সেবাদানকারীদের জন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তাসামগ্রী যেমন মাস্ক, পিপিই, ফেস শিল্ড ইত্যাদি প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করে কিট সংগ্রহ করার চেষ্টা চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। আশা করছি কিটের কোনো সমস্যা হবে না। দেশে ২৮ হাজার র্যাপিড অ্যান্টিজেন কিট এসেছে। ১০ হাজার আরটিপিসিআর অ্যান্টিজেন কিট আজকের (বুধবার) মধ্যে পাব। কালই (বৃহস্পতিবার) কিটসহ যাবতীয় জিনিসপত্র হাসপাতালগুলোতে পৌঁছে দেওয়া হবে।’