
কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ সহিংতা ও চলমান কারফিউতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী ও নওগাঁতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছেন আমচাষি ও আম ব্যবসায়ীরা। হাটবাজারগুলোতে সহজে ক্রেতা মিলছে না। আবার ইন্টারনেট না থাকায় অনলাইনে বিক্রিও হচ্ছে না। এতে তারা লোকসানে পড়েছেন। এসব এলাকায় কেজিতে ১০০ টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে না আম। কিন্তু রাজধানীতে সেই আম ১৫০ টাকার কমে মিলছে না।
বুধবার (২৪ জুলাই) বিভিন্ন বাজার ও মোকামের সংশ্লিষ্ট আম ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
বর্তমানে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী ও নওগাঁর বাগানগুলোতে বারি-৪, ফজলি, আম্রপালি জাতের আম রয়েছে। কিন্তু কারফিউর কারণে খুব বেশি আম বিক্রির জন্য হাটে আনতে পারছেন না বাগানি ও ব্যবসায়ীরা। চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাট, রাজশাহীর বানেশ্বর, নওগাঁ জেলার সাপাহার সবচেয়ে বড় আমের মোকাম। এসব হাটে কারফিউর কারণে ক্রেতা-বিক্রেতারা আসতে পারছেন না। দু-একজন আম নিয়ে এলেও ক্রেতাসংকটের কারণে তা বিক্রি হচ্ছে না। ফলে প্রত্যাশিত দামও পাচ্ছেন না আমচাষি ও ব্যবসায়ীরা। ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় অনলাইনেও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আম বিক্রি হচ্ছে না। ফলে তারাও বিপাকে পড়েছেন। কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।
জানতে চাইলে সাপাহার বাজারের আম ব্যবসায়ী মঈনুল হোসেন খবরের কাগজকে বলেন, ‘জ্বালাও-পোড়াওয়ের কারণে কয়েক দিন ধরে দেশে কারফিউ চলছে। এতে ব্যাপারীরা আসতে পারছেন না। আবার ইন্টারনেট না থাকায় অনলাইনেও বিক্রি করা যাচ্ছে না। বিক্রি একেবারে কমে গেছে। কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে আম। তবে গতকাল কারফিউ শিথিলের সময় বাড়ানো হলে কাস্টমারের চাপ বাড়ে। সবচেয়ে ভালো আম্রপালি আম ৮৮ টাকা থেকে ১০০ টাকার ওপরে বিক্রি হয়েছে। পরিস্থিতি ভালো হলে আরও বেশি দামে বিক্রি করা যেত। এতে আমবাগানের মালিক ও আম ব্যবসায়ীরা ভালো দাম পেতেন।’
এদিকে রাজশাহীতেও কারফিউ জারির কারণে নগরজুড়ে থমথমে পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ায় হাটগুলোতে আম বিক্রি কমে গেছে। আবার ইন্টারনেট সেবা বন্ধ থাকায় অনলাইনেও বিক্রি হচ্ছে না। ফলে গাছ থেকে আম নামাতে না পারায় গাছেই পেকে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ১০০ টাকা কেজিও বিক্রি হয় না বলে আম বিক্রেতারা জানান।
কিন্তু রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। অনেক বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। কারওয়ান বাজারের ফলের আড়তেই বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
জানতে চাইলে এই বাজারের শাহ আলী বাণিজ্যালয়ের জাহিদ বলেন, ‘আমের মৌসুম শেষ হয়ে আসছে। খিরসাপাতি ও হিমসাগর শেষ। আম্রপালি, বারি-৪ চলছে। বুধবার থেকে আমের দাম একটু বেশি। আম্রপালি ১২০-১৪০ টাকা কেজি ও বারি-৪ আম ১০০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।’
সেই আম্রপালি বিভিন্ন বাজারে খুচরা বিক্রেতারা আরও বেশি দামে বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বুধবার সরেজমিনে গেলে মোহাম্মদপুরের টাউন হল বাজারের ফল বিক্রেতা জসিম বলেন, আম্রপালি ১৪০-১৫০ টাকা, বারি-৪ আম ১৩০-১৪০ টাকা। ভালো আম। দাম বেশি। মৌসুম শেষ হয়ে আসছে। এ জন্য আর দাম কমবে না। এই বাজারের অন্য আম ব্যবসায়ীরাও বেশি দামে আম বিক্রি করছেন। কারওয়ান বাজারেও বেশি দামে আম বিক্রি হতে দেখা যায়। ১২০-১৪০ টাকার কমে কোনো আম পাওয়া যায় না। জামালসহ অন্যান্য বিক্রেতারা বলছেন, মোকামে বেশি। এ জন্য দাম চড়া।