কোটা আন্দোলন ঘিরে সরকারি বিভিন্ন স্থাপনায় হামলার ঘটনায় করা মামলায় ৪৪ জনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। এ ছাড়া ২৯৯ জনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
শুক্রবার (২৬ জুলাই) ঢাকা চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত ও ঢাকা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সিজেএম) আদালত এই আদেশ দেন।
কারাগারে পাঠানো আসামিদের মধ্যে রয়েছেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক সংসদ সদস্য মিয়া গোলাম পরওয়ার, গণ অধিকার পরিষদের একাংশের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নূর এবং বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু। আর রিমান্ডে পাঠানো আসামিদের মধ্যে রয়েছেন সাংবাদিক হাফিজ আল আসাদ (সাঈদ খান)।
এদিকে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাবেক কার্যনির্বাহী সদস্য হাফিজ আল আসাদকে (সাঈদ খান) গ্রেপ্তারের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ডিআরইউ। শুক্রবার ডিআরইউর সভাপতি সৈয়দ শুকুর আলী শুভ ও সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন এক বিবৃতিতে এই উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
শুক্রবার সিএমএম আদালতে সাংবাদিক সাঈদসহ ৩৩০ জনকে হাজির করা হয়। তাদের মধ্যে ৩২ জনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। ২৭১ জনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া ২৭ জনকে জরিমানা করে জমিন দেওয়া হয়েছে।
আর সিজেএম আদালতে শুক্রবার ৪০ জনকে হাজির করা হয়। তাদের মধ্যে ২৩ জনকে রিমান্ড শেষে আদালতে হাজির করলে আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। বাকি ১৭ জনকে নতুন করে আদালতে হাজির করা হয়, এর মধ্যে ১২ জনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত, বাকি ৫ জনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে, আগামীকাল রবিবার তাদের রিমান্ড আবেদনের ওপর শুনানির জন্য দিন ধার্য করা হয়েছে। সব মিলিয়ে সিজেএমে হাজির করা ৪০ জনের মধ্যে আদালত ১২ জনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন এবং ২৮ জনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
সিএমএম আদালতে দায়িত্বরত পুলিশের ওসি (হাজত) মুরাদ হোসেন এবং সিজেএম আদালতে দায়িত্বরত পুলিশের ওসি (হাজত) আবদুল মান্নান খবরের কাগজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
কোটা আন্দোলনের মধ্যে সম্প্রতি রাজধানীতে সরকারি স্থাপনা সেতু ভবনে হামলার ঘটনায় করা মামলায় গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নূরকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে তাকে আদালতে হাজির করে কারাগারে পাঠানোর আবেদন করলে তা মঞ্জুর করেন আদালত। আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. শাকিল আহম্মদ শুক্রবার এই আদেশ দেন।
এদিন নূরকে আদালতে হাজির করে এই মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। অন্যদিকে তার আইনজীবী জামিন চেয়ে আবেদন করেন। উভয় আবেদনের ওপর শুনানি শেষে আদেশ দেন আদালত।
নূরকে কারাগারে আটক রাখার আবেদনে বলা হয়, ‘বর্তমান সরকারকে উৎখাত করার বিষয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম ও সারজিস আলম এবং গণ অধিকার পরিষদের একাংশের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নূরের মধ্যে আলোচনা হয়। গত ১৮ জুলাই রাত ১০টায় মোবাইল ফোনকল এবং মেসেজের মাধ্যমে এ আলোচনা হয়।’ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ক্যান্টনমেন্ট জোনাল টিমের পরিদর্শক আবু সাইদ মিয়া এই আবেদন করেন।
এদিকে রাজধানীতে সরকারি আরেক স্থাপনা মেট্রোরেলের দুটি স্টেশনে নাশকতার ঘটনায় ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সাংগঠনিক সম্পাদক হাফিজ আল আসাদ ওরফে সাঈদ খানসহ ছয়জনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল আদালত তাদের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রাজধানীর কাফরুল থানার মামলায় ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আরোবিয়া খানম গতকাল এই আদেশ দেন। রিমান্ডে যাওয়া অপর আসামিরা হলেন সানাউল হক নিরু, আলমগীর, মহিউদ্দিন আহমেদ ভূঁইয়া ওরফে নাইম, আব্দুল আজিজ সুলতান ও মাইন। শুনানি শেষে রিমান্ডের আদেশ দেন। সাঈদ খানের পক্ষে আইনজীবী দেলোয়ার জাহান রুমী রিমান্ড বাতিল ও জামিন চেয়ে আবেদন করেন। সব আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে আদালত জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে প্রত্যেকের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
কোটা আন্দোলনের সময় রাজধানীতে সরকারি আরেক স্থাপনা বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) ভবনে ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় করা মামলায় জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুসহ ছয়জনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। রিমান্ড শেষে শুক্রবার তাদের আদালতে হাজির করে কারাগারে পাঠানোর আবেদন করলে আবেদনের ওপর শুননি নিয়ে এই নির্দেশ দেন আদালত। কারাগারে পাঠানো অন্যরা হলেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী সায়েদুল আলম বাবুল, দলটির ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্যসচিব আমিনুল হক, বিএনপির এম এ সালাম ও মাহমুদুস সালেহীন। সব আবেদনের ওপর শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আরোবিয়া খানম তাদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এদিকে ডিআরইউ থেকে দেওয়া বিবৃতিতে নেতারা বলেন, ডিআরইউর সদস্যরা তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করার জন্য বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করে থাকেন। তারা যাতে পেশাগত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারেন, সেদিকে লক্ষ রেখে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানান তারা।