
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক কোটা সংস্কার আন্দোলন ও সহিংসতার রেশ প্রত্যাশিতভাবেই আছড়ে পড়েছে প্রতিবেশী ভারতের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও। ওই আন্দোলনের ছবি বা ভিডিও বলে দাবি করে বহু পোস্ট ভারতের ফেসবুক, হোয়াটস্অ্যাপ বা এক্সেও দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়েছে। এসব কনটেন্টের অনেকই রীতিমতো সাম্প্রদায়িক।
বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে এসব বলা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিবিসির নিজস্ব অনুসন্ধানে বা ভারতেরও বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য ফ্যাক্ট-চেকিং সাইটের প্রতিবেদনে দেখা গেছে যে, এই সব ভিডিওর বেশির ভাগই অনেক পুরোনো, যেগুলোকে বিকৃত ন্যারেটিভে পেশ করা হচ্ছে। এর অনেকটিতেই সম্পূর্ণ ভুল তথ্য দেওয়া হয়েছে, কিংবা একটা ঘটনার ছবি বা ভিডিও সম্পূর্ণ অন্য ঘটনার বলে চালানো হচ্ছে। সোজা কথায়, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাবলির সঙ্গে সম্পর্কিত দাবি করে ভারতে যেসব পোস্ট ছড়িয়ে পড়েছে, তার বেশির ভাগই এখন ‘ফেক নিউজ’ বলে প্রমাণিত হচ্ছে।
বিবিসি প্রতিবেদনে বলা হয়, এসব পোস্টের অনেকটিতেই দাবি করা হয়েছে ওই আন্দোলনের চরিত্র ছিল ‘হিন্দু-বিরোধী’ বা ‘ভারতবিরোধী’। যদিও তার সমর্থনে কোনো নির্ভরযোগ্য প্রমাণ তারা দিতে পারেননি। “ঢাকার একটি ‘হিন্দু হোস্টেলে’ জামায়াতের আক্রমণের শিকার হিন্দু ছাত্ররা ৬ তলার ছাদের কার্নিশ থেকে ঝুলছে। কতজন ছাদ থেকে নিচে পড়ে গেল দেখুন!” অথচ এই ভিডিওটি চট্টগ্রামে ছাত্রলীগের কর্মী ও সমর্থকদের ওপর হামলার দৃশ্য ছিল বলে জানা গেছে।
এ ছাড়া ‘ভারত যাদের মামাবাড়ি, বাংলা ছাড়ো তাড়াতাড়ি- এই স্লোগান দিয়ে ঢাকার রাজপথে ভারতবিরোধী মিছিল যাচ্ছে।’ কিন্তু পরে দেখা গেছে, এই মিছিল আদৌ কোটা আন্দোলনের সময়কার নয়, বরং গত জুন মাসে ভারতকে ‘রেল ট্রানজিট’ দেওয়ার বিরোধিতা করে বাংলাদেশের একটি রাজনৈতিক সংগঠনের কর্মসূচির অংশ ছিল সেটি।
ঢাকার রাস্তায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে দুজন বোরখা পরিহিত তরুণী স্কুটারে করে এসে পানির বোতল বিতরণ করছেন, এমন একটি ভিডিও অনলাইনে পাওয়া গেছে। অথচ ভারতে এই ভিডিওর প্রচারে দাবি করা হয়েছে, ‘এর মাধ্যমে যে নারীরা বোরখা পরে নেই (অর্থাৎ হিন্দু নারীরা) তাদের ধর্ষণে উৎসাহিত করা হচ্ছে!’
একটি ‘মিম’ ভারতে খুব ছড়িয়ে পড়েছে, যার বক্তব্য হল “বাবা কলকাতার আর এন টেগোর হাসপাতালে ভর্তি আর ছেলে ঢাকার রাস্তায় স্লোগান দিচ্ছে- ভারত যাদের মামাবাড়ি, বাংলা ছাড়ো তাড়াতাড়ি।” অর্থাৎ প্রশ্ন তোলা হচ্ছে, পরিবার-পরিজনের চিকিৎসার জন্য যাদের প্রায়ই ভারতে আসতে হয়, তারা কীভাবে ঢাকায় ভারত-বিরোধী স্লোগান দিতে পারেন?
বাংলাদেশের কোটা আন্দোলনকে দমন করতে ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটি কোম্পানি পশ্চিমবঙ্গ থেকে বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে বলেও একাধিক পোস্টে দাবি করা হয়েছিল। যথারীতি সেই দাবিও সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ছিল। এ ছাড়া ‘গত ২১ জুলাই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সশস্ত্র বাহিনীর তিন প্রধানের জরুরি বৈঠকে ভারতীয় হাইকমিশনারও উপস্থিত ছিলেন’, এমনো দাবি করা হয়েছিল কোনো কোনো পোস্টে। এটাও পুরোপুরি ‘ফেক নিউজ’ ছিল, বলাই বাহুল্য। বিবিসি বলছে, এ ধরনের পোস্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছিল অজস্র।
এ অবস্থায় পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির এক প্রতিনিধিদলও সোমবার কলকাতায় বাংলাদেশ উপদূতাবাসে গিয়ে অনেক ভিডিওর কপি তাদের হাতে তুলে দিয়ে বলে এসেছেন, বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় ভারতবিরোধী স্লোগান উঠেছে এবং তার বিরুদ্ধে সরকার যেন যথাযথ ব্যবস্থা নেয়।
ওই প্রতিনিধিদলে থাকা বিজেপির এক বিধায়কের কাছে বিবিসি জানতে চেয়েছিল, ‘ওই ভিডিওগুলো যে আসল এবং কোটা আন্দোলনের সময়েই তোলা, তারা সে ব্যাপারে কীভাবে নিশ্চিত হলেন?’ জবাবে ওই বিজেপি নেতা বলেন, ‘সেটা তো যাচাই করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। এই জন্যই ভিডিওগুলো বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দিয়ে অনুরোধ করেছি, আপনারা দেখুন এগুলো সত্যি ঘটেছে কি না!’