ঢাকা ১৮ বৈশাখ ১৪৩২, বৃহস্পতিবার, ০১ মে ২০২৫
English
বৃহস্পতিবার, ০১ মে ২০২৫, ১৮ বৈশাখ ১৪৩২

সরকারের পদত্যাগের দাবিতে গণমিছিল কর্মসূচি ঘোষণা ছাত্র-জনতার

প্রকাশ: ০২ আগস্ট ২০২৪, ০৫:০৭ পিএম
আপডেট: ০২ আগস্ট ২০২৪, ০৫:১২ পিএম
সরকারের পদত্যাগের দাবিতে গণমিছিল কর্মসূচি ঘোষণা ছাত্র-জনতার
ছবি : খবরের কাগজ

কারফিউ প্রত্যাহার, গণগ্রেপ্তার বন্ধ, বন্দিদের মুক্তি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া ও সরকারের পদত্যাগের দাবিতে আগামী রবিবার (৪ আগস্ট) বিকেল ৩টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে গণমিছিল করবেন ছাত্র, জনতা, শিক্ষক ও সংস্কৃতিকর্মীরা।

শুক্রবার (২ আগস্ট) বিকেল ৪টায় দ্রোহ যাত্রা কর্মসূচি থেকে তাদের পক্ষে এ ঘোষণা দেন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি ও গণতান্ত্রিক ছাত্রজোটের সমন্বয়ক রাগীব নাঈম। 

তিনি বলেন, ‘আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কারফিউ প্রত্যাহার, গণগ্রেপ্তার বন্ধ, বন্দিদের মুক্তি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে হবে এবং সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। না হলে আমরা আগামী রবিবার জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে গণমিছিল করব।’

এর আগে বিকেল ৩টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে দ্রোহ যাত্রা কর্মসূচি শুরু হয়। এতে বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক আনু মুহম্মদ। পরে বিক্ষোভ মিছিলটি প্রেস ক্লাব থেকে দোয়েল চত্বর, টিএসসি ঘুরে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে আসে। 

জয়ন্ত/সালমান/

বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৮তম বর্ষ উদযাপিত

প্রকাশ: ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১০:০৮ পিএম
বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৮তম বর্ষ উদযাপিত
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএমইউ) ২৮তম বর্ষ উদযাপিত হয়েছে। জাতীয় পতাকা উত্তোলন, বেলুন ও পায়রা ওড়ানো, বর্ণাঢ্য র‌্যালি, গবেষণা মঞ্জুরি প্রদান, পূবালী ব্যাংকের সৌজন্যে দুটি নতুন স্টাফ বাসের উদ্বোধন, আলোচনা সভা, প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শনী ইত্যাদি নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বুধবার (৩০ এপ্রিল) দিবসটি উদযাপিত হয়। 

দিবসটির থিম ছিল ‘ইনোভেট-এডুকেট-এলিভেট ড্রিমস টু দ্য রিয়েলিটি।’ এই উদযাপনের অংশ হিসেবে ৫৬ শিক্ষক-চিকিৎসককে গবেষণা অনুদান প্রদান করা হয়।

এ বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, চিকিৎসক, রেসিডেন্ট শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, নার্স, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও কর্মচারীরা তাদের জন্য আপ্যায়ন বাবদ বরাদ্দ করা অর্থ সাধারণ রোগী ও জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহতদের জন্য উৎসর্গ করেন। এই অর্থ দিয়ে গণ-অভ্যুত্থানে আহত রোগীদের মধ্যে যারা বিএমইউতে চিকিৎসাধীন এবং সাধারণ রোগীদের উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হয়। 

দিবসটি উপলক্ষে দুপুরের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদার অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান বলেন, ‘গবেষণার জন্য শুধু গবেষণা নয়, গবেষণাকে হতে হবে জনকল্যাণ ও উদ্ভাবনমূলক। নিত্যনতুন জ্ঞানের সৃষ্টি, ওষুধ আবিষ্কার, ভ্যাকসিন আবিষ্কারে অবদান রাখতে হবে। উচ্চতর চিকিৎসাশিক্ষাসহ স্বাস্থ্য খাতে সঠিক নীতিনির্ধারণে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিতে বিএমইউকে ভূমিকা রাখতে হবে; যা কেবল গবেষণার মাধ্যমেই সম্ভব। বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়কে স্বাস্থ্য খাতে দক্ষ ও বিশেষজ্ঞ জনবল তৈরিতে নেতৃত্ব দেওয়ারও আহ্বান জানা তিনি।

ওই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএমইউর ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম। রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. মো. নজরুল ইসলামের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মো. আবুল কালাম আজাদ, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. মুজিবুর রহমান হাওলাদার, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নাহরীন আখতার প্রমুখ।

 

ডেঙ্গুতে এক নারীর মৃত্যু

প্রকাশ: ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৩৮ পিএম
ডেঙ্গুতে এক নারীর মৃত্যু
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে রাজধানীতে এক নারীর (৪০) মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ২৯ জন।

বুধবার (৩০ এপ্রিল) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার অ্যান্ড কন্টোল রুম ডেঙ্গুবিষয়ক নিয়মিত বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয় মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত এই ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু নিয়ে বরিশালে ২২, চট্টগ্রামে ১, ঢাকা বিভাগে ১, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ৩, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ১ এবং ময়মনসিংহে একজন ভর্তি হয়েছেন।

কন্ট্রোল রুম জানায়, চলতি বছরের এ পর্যন্ত ডেঙ্গু নিয়ে ২ হাজার ৫৭২ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে ২০ জনের। জানুয়ারিতে ১০, ফেব্রুয়ারিতে ৩ এবং এপ্রিলে ৭ জন প্রাণ হারিয়েছেন।

আরিফ সাওন/এমএ/

শ্রম আইন শিগগিরই সংশোধন করা হবে: শ্রম উপদেষ্টা

প্রকাশ: ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ০৭:২৬ পিএম
শ্রম আইন শিগগিরই সংশোধন করা হবে: শ্রম উপদেষ্টা
সচিবালয়ে মহান মে দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। ছবি: পিআইডি

শ্রমিক ও মালিক উভয় পক্ষের স্বার্থ রক্ষা করে শিগগিরই শ্রম আইন সংশোধন করা হবে বলে জানিয়েছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন।

বুধবার (৩০ এপ্রিল) সচিবালয়ে মহান মে দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি। এ সময় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব এ এইচ এম শফিকুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন।

শ্রম উপদেষ্টা জানান, শ্রম আইনে অনেক কিছু পরিবর্তন আসছে। এখনো চূড়ান্ত না হলেও অনেক পরিবর্তন আসছে। কবে নাগাদ আইনের সংশোধনী চূড়ান্ত হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি থাকতে থাকতে একটা শ্রম আইন পাকাপোক্ত করে দিতে চাই।’

তিনি আরও বলেন, ‘এর আগে দেখেছি, শ্রমিকদের সঙ্গে সরকারের ও মালিকদের একটা গ্যাপ ছিল এবং আছে। এই গ্যাপ আমরা কমাতে চাচ্ছি। সরকার অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে, এর ৯৯ শতাংশ শ্রমিকদের পক্ষেই গেছে। স্টেটমেন্টগুলা শ্রমিকদের পক্ষে গেছে।’ তিনি বলেন, ‘অনেক ভালো ভালো মালিক আছেন। না হলে আমাদের দেশের শিল্পগুলো এগোত না। সবাই এক রকম না।’

উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা শ্রমিকদের অনেক কিছুই করতে পারিনি। যেমন তাদের স্বাস্থ্যগত বিষয়, তাদের আবাসিক এলাকার বিষয়, যেগুলো হওয়া উচিত, আমরা এখনো করতে পারিনি। তা ছাড়া শ্রম সংস্কার কমিশন কতগুলো প্রস্তাব দিয়েছে, সেগুলোও দেখা হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের সরকারের প্রচেষ্টা হচ্ছে হিউম্যান রাইটস এবং ওয়ার্কার রাইটস যেন সমানভাবে থাকে। শ্রমিক এবং শ্রম আইন নিয়ে প্রতিদিন কাজ করছি। এ জন্য শ্রমিকদের সহযোগিতা দরকার, মালিকদের সহযোগিতা দরকার। সরকারের পক্ষ থেকে শুধু শ্রম মন্ত্রণালয়ের কাজ না এটা। বেশ কিছু মিনিস্ট্রি আছে। সেখানে কমার্স মিনিস্ট্রি আছে, বিডা আছে, সবাই মিলে কন্ট্রিবিউট করলে শ্রমিকদের এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব।’

উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘বড় প্রশ্ন আসছে অপ্রচলিত শ্রমের কিছু ক্ষেত্রের বিষয়ে। অপ্রচলিত শ্রমিকদের বেশির ভাগ নির্মাণশ্রমিক। এর মধ্যে শিপ বিল্ডিংও আছে, রিয়েল এস্টেটের লোকজন আছে। সরকার সবাইকে একই ফোল্ডের মধ্যে নিয়ে আসতে চাইছে।’

আধুনিক বিমানবাহিনী গড়ার প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে: প্রধান উপদেষ্টা

প্রকাশ: ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ০৫:১০ পিএম
আধুনিক বিমানবাহিনী গড়ার প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে: প্রধান উপদেষ্টা
রাজধানীর বীর উত্তম এ কে খন্দকার ঘাঁটিতে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর অনুশীলন পর্যবেক্ষণ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, দেশের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতার প্রতি যে কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সদা প্রস্তুত আধুনিক বিমানবাহিনী গড়ে তোলার লক্ষ্যে সরকারের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

তিনি বুধবার (৩০ এপ্রিল) রাজধানীর বীর উত্তম এ কে খন্দকার ঘাঁটিতে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর অনুশীলন পর্যবেক্ষণ অনুষ্ঠানে একথা বলেন।

দেশপ্রেম ও পেশাদারত্ব আগামী দিনের নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ার মূল ভিত্তি উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বিমানবাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, ‘বিমানবাহিনীর সকল সদস্যের প্রতি যুগোপযোগী ক্ষমতা ও দক্ষতা অর্জন এবং পেশাগত ও কারিগরি সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রতি অব্যাহত মনোযোগ বজায় রাখার আহ্বান জানাচ্ছি। আমাদের সকলের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় আমরা একটা নিরাপদ, উন্নত ও শক্তিশালী বাংলাদেশ গড়ে তুলবো ইনশাল্লাহ।’

তিনি বলেন, বিমানবাহিনীতে ভবিষ্যতে অত্যাধুনিক যুদ্ধ বিমান, হেলিকপ্টার পরিবহন বিমান, রাডার সংযোজনের জন্য সরকার বিমানবাহিনীকে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান করবে।

প্রফেসর ইউনূস বলেন, বর্তমান বিশ্বের দ্রুত পরিবর্তনশীল প্রযুক্তির সঙ্গে তালমিলিয়ে চলার জন্য আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন প্রশিক্ষণ ও অনুশীলন অপরিসীম গুরুত্ব বহন করে। এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর সদস্যগণ নিয়মিতভাবে বহুমাত্রিক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম ও অনুশীলনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে নিজেদের জ্ঞান দক্ষতাকে যুগোপযোগী করতে সদা সচেষ্ট রয়েছেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা স্বাধীনতা যুদ্ধে বিমানবাহিনীর অবদানের কথা গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। একইসঙ্গে তিনি ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনের শহিদদের কথা স্মরণ করে বলেন, শিক্ষার্থী, তরুণ-তরুণী এবং সাধারণ জনগণ যারা দেশের অধিকারের প্রশ্নে জীবন ও রক্ত দিয়ে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন তাদেরকে স্মরণ করছি।

তিনি দেশের বিমান বন্দরসমূহের সুষ্ঠু পরিচালনা ও নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত বিমানবাহিনীর সদস্যদের ধন্যবাদ জানান।

মহড়া কেবল একটি সাময়িক অনুশীলনই নয় উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, এটি আমাদের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বিমানবাহিনীর পেশাদারি ও দক্ষতার পরিচয় বহন করে। নিষ্ঠা, শৃঙ্খলা ও পেশাগত উৎকর্ষের জন্য মহড়ায় অংশগ্রহণকারীদেরকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি আরও বলেন, আজকের এই অনুশীলন বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর আত্মবিশ্বাস, প্রস্তুতি এবং অর্পিত দায়িত্ববোধের বাস্তব রূপায়ণ।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ বিমানবাহিনী সময়োপযোগী পরিকল্পনা ও দূরদর্শী নেতৃত্বের মাধ্যমে ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং কার্যকর আকাশ প্রতিরক্ষার পাশাপাশি বিস্তীর্ণ সমুদ্র এলাকায় নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা প্রদানের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। বিমানবাহিনীর সদস্যদের প্রতি জাতির আস্থা ও ভালবাসা অটুট থাকুক-এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।

এর আগে বিমান ঘাঁটিতে এসে পৌঁছালে প্রধান উপদেষ্টাকে স্বাগত জানান বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন। অনুষ্ঠানস্থলে বিমানবাহিনীর একটি সুসজ্জিত দল প্রধান উপদেষ্টাকে রাষ্ট্রীয় সালাম জানায়। এসময় জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। সূত্র: বাসস

এমএ/

ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত উপকূলের নারী শ্রমিকরা

প্রকাশ: ০১ মে ২০২৫, ০২:৩০ এএম
ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত উপকূলের নারী শ্রমিকরা
ছবি: খবরের কাগজ

আজ ১ মে, মহান মে দিবস। শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের দিন। ১৮৮৬ সালের ১ মে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের শ্রমিকেরা ১০ থেকে ১২ ঘণ্টার কর্মদিবসের বিপরীতে ৮ ঘণ্টা কর্মদিবসের দাবিতে আন্দোলন করতে গিয়ে জীবন দিয়েছিলেন। সেই আত্মদানের পথ ধরেই পৃথিবীর দেশে দেশে শ্রমজীবী মানুষ ন্যায্য মজুরি, অবকাশ, মানবিক আচরণ, স্বাস্থ্যসম্মত ও নিরাপদ কর্মপরিবেশের দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন। অনেক দেশেই শ্রমিকদের ৮ ঘণ্টার কর্মদিবসের দাবি পূরণ হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের অন্য নারী শ্রমিকদের মতো উপকূলের নারী শ্রমিকরা রয়েছেন আজও পিছিয়ে।

পুরুষের সমান কাজ করেও নায্য মজুরি পান না উপকূলের নারী শ্রমিকরা। নারী-পুরুষ একইসঙ্গে একই কাজ করে নারীরা ভুগছেন মজুরি বৈষম্যে। তারা তাদের অধিকার ও ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

উপকূলীয় এলাকায় দিনমজুরের চাহিদা অনেক বেশি। কিন্তু শ্রমিক সংকটের কারণ এই এলাকার অধিকাংশ পুরুষ শ্রমিকরা দেশের বিভিন্ন এলাকায় ইট ভাটাসহ গ্রাম ছেড়ে শহরে কাজে চলে যান। এজন্য শ্রমিক সংকট কাটাতে এবং স্বল্প মূল্যে শ্রমিক পেতে হতদরিদ্র নারী শ্রমিকদের বেছে নেন কৃষকসহ এই এলাকায় গড়ে ওঠা বিভিন্ন কাঁকড়া হ্যাচারি বা মৎস্য প্রকল্পের ব্যবসায়ীরা।

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপকূলীয় এলাকায় পুরুষের পাশাপাশি নারী শ্রমিকরা কাঁকড়ার খামার, মাছের ঘের, বিলে ধান কাটা, ধান মাড়াই করা, নদীতে রেণু আহরণ, সুন্দরবনের নদীতে মাছ ধরা, রাজমিস্ত্রির সহকারী, মাটিকাটা, গ্রামীণ রাস্তানির্মাণ ও সংস্কার, কৃষিকাজ করে থাকেন। 

সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের ধানখালী এলাকার ধানক্ষেতে ধান কাটা ও কেটে মাড়াই করার কাজ করা শ্রমিকের প্রায় অর্ধেকই নারী। একজন পুরুষ শ্রমিক দৈনিক ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা মজুরিতে কাজ করছেন। একই কাজ করে একজন নারী শ্রমিক মজুরি পাচ্ছেন ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। সমান কাজ করেও নারী শ্রমিকরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। এ বৈষম্য লাঘবের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

নারী শ্রমিক কুলসুম আক্তার বলেন, স্বামীর আয়ে সংসার চালাতে কষ্ট হয়। তাই সংসার চালানোর জন্য আমিও ধান খেতে কাজ করতি আইছি (কাজ করতে এসেছি)। কিন্তু বেটাগো (পুরুষের) সমান কাজ করেও দিন শেষে অর্ধেক মজুরি পাচ্ছি। এটা খুব কষ্টের। এ মজুরি বৈষম্য নিরসনের দাবি জানাচ্ছি।

সোনাখালী গ্রামের নারী শ্রমিক সালেহা বেগম বলেন, একই সময়ে একই কাজ করে অর্ধেক মজুরি পাই। যখন মজুরি নিই তখন অনেক খারাপ লাগে।

নারীরা আজও অবহেলিত এবং বৈষম্যের শিকার দাবি করে শ্যামনগর পৌরসভা চিংড়াখালী গ্রামের রুমভা রানী জানান, কৃষিজমিতে দিনমজুরের কাজ শেষে বাড়িতে ফিরে রান্না করতে হয়। স্কুল থেকে সন্তানরা ও কাজ থেকে ফেরা দিনমজুর স্বামীকে দুপুরের খাবার দিয়ে গৃহস্থালির কাজ গোছাতে গোছাতে বিকাল। এরপর দুই কিলোমিটার দূর থেকে খাবার পানি এনে বাড়ি ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। রাতটুকু বিশ্রামের পর সকাল হতেই আবার কাজের জন্য বেরিয়ে পড়তে হয়। হাড়ভাঙা এমন পরিশ্রমের পরও পরিবারে যথাযথ মূল্যায়ন না পাওয়ার অভিযোগ তার।

শুধু কুলসুম আক্তার ও সালেহা বেগম আর রুমভা রানী নন, বরং উপকূলীয় এ জনপদের নারীদের প্রায় সবারই দাবি, তারা অনেক বেশি অবহেলা এবং বঞ্চনার শিকার। মজুরি বৈষম্যের পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রে সমান সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয় না বলে অভিযোগ তাদের।

চাষি রফিকুল ইসলাম বলেন, ১০ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছিলাম। এখন ধান কটে ঘরে তোলার সময় এসেছে এজন্য আমরা জমিতে প্রতিদিন ৮ জন শ্রমিক কাজ করছে। পুরুষ শ্রমিকের পাশাপাশি নারী শ্রমিকরাও কাজ করছে। পুরুষ শ্রমিকদের দৈনিক ৫৫০ টাকা এবং নারী শ্রমিকদের ৩০০ টাকা মজুরি দেই।

শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ, ঈশ্বরীপুর, কৈখালী, ভুরুলিয়াসহ বিভিন্ন এলাকার নারীদের অভিযোগ, নারী অধিকার নিয়ে সভা-সমাবেশ হচ্ছে। কিন্তু এত কিছুর পরও অদ্যাবধি নারীদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি।

কর্মক্ষেত্র আর মজুরির পাশাপাশি সামাজিক নিরাপত্তাসহ পারিবারিকভাবেও এ জনপদের নারী বৈষম্যের শিকার বলে জানান অনেকে। শ্যামনগর সরকারের মহাসিন ডিগ্রী কলেজের শিক্ষার্থী মিনারা ইয়াসমিন, আরিফা আক্তার, আসমাউল হুসনা ও নূহা ইসলামসহ অন্যরা বলেন, মেয়েরা এখনও ন্যায্য অধিকার পাচ্ছেন না। পারিবারিক অসচ্ছলতার কারণে পিতামাতা মেয়েদের বেশিদূর পর্যন্ত লেখাপড়া করান না। ছেলেসন্তানদের বিষয়ে তারা উল্টো মনোভাব দেখান। এ ছাড়া স্কুল-কলেজে যাতায়াতের ক্ষেত্রে তারা প্রতিনিয়ত নানা সমস্যার সম্মুখীন হন।

উপজেলার দাতিনাখালি বনজীবী নারী উন্নয়ন সংগঠনের পরিচালক শেফালী বেগম। তিনি বলেন, এই অঞ্চলে অধিকাংশ পুরুষ সুন্দরবনের উপর নির্ভরশীল। আগে বছরে তিন মাস সুন্দরবনে প্রবেশ নিষেধাজ্ঞা থাকতো কিন্তু বর্তমানে ছয় মাস থাকে। সে কারণে পুরুষের পাশাপাশি নারীদের কাজ করতে হয়। না হলে তাদের সংসার চলে না।

তিনি আরও বলেন, এই অঞ্চলে অধিকাংশ নারীরা কাঁকড়া খামারে শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। কিছু নারী মাছের ঘেরে, নদীতে রেণু আহরণ, সুন্দরবনের নদীতে মাছ ধরা, রাস্তা সংস্কার ও কৃষিকাজের সঙ্গে জড়িত। তাদের বাড়ির কাজ করতে হয় পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রে পুরুষের সঙ্গে সমান বা তার চেয়ে বেশি কাজ করতে হয়। এরপরও পুরুষ যে মজুরি পায়, নারী পায় তার অর্ধেক। রাস্তা সংস্কারের কাজে একজন পুরুষ ৫০০ টাকা পেলে নারীকে দেওয়া হয় ৩০০ টাকা। এই এলাকার অধিকাংশ নারী তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন নয়। কর্মপরিবেশ, কর্মঘণ্টা বিষয়ে অধিকাংশই জানেন না। অনেকে জানলেও কাজ হারানোর ভয়ে এ বিষয়ে মুখ খুলতে চান না। সংগঠনের পক্ষ থেকে আমরা সম অধিকারের জন্য আন্দোলন করে যাচ্ছি।

শ্যামনগর উপজেলা জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান মিসেস শাহানা হামিদ বলেন, পুরুষের পাশাপাশি নারীও অর্থনীতির চালিকাশক্তি। তাদের পেছনে রেখে উন্নয়ন অগ্রযাত্রার কথা ভাবা যায় না।

নারীদের অধিকার এখনও প্রতিষ্ঠিত হয়নি দাবি করে তিনি আরও বলেন, নারী-পুরুষদের মজুরি বৈষম্য থাকলে নারীরা কাজে অনুৎসাহী হবেন এবং দেশ অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে যাবে। তাই মজুরি বৈষম্য নিরসনে প্রশাসনকে উদ্যোগ নিতে হবে।

শ্যামনগর উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা শারিদ বিন শফিক বলেন, সাতক্ষীরা শ্যামনগর উপকূলীয় এ এলাকায় নারী শ্রমিক বেড়েছে। পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও পরিবারের উন্নয়নে এগিয়ে আসছে। তবে এখানে নারী শ্রমিকদের মজুরি বৈষম্য রয়ে গেছে। নারীদের মজুরি বৈষম্য নিরসনে নারীরা যেন তাদের নায্য মজুরি পায় সে বিষয়ে মালিক ও শ্রমিকদের মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর থেকে সচেতনতা কার্যক্রম করা হয়। এছাড়া নারীর সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনিসহ সম-অধিকার প্রতিষ্ঠায় সরকার কাজ করে যাচ্ছে।

শ্যামনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. নাজমুল হুদা বলেন, পুরুষ শ্রমিকদের পাশাপাশি নারী শ্রমিকরা মাঠে কাজ করছেন এটা ভালো লক্ষণ। দেশকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করতে হলে নারী-পুরুষ সমানতালে এগোতে হবে। তবে কোনোভাবেই মজুরি বৈষম্য করা যাবে না। এতে নারী শ্রমিকরা কাজের উৎসাহ হারিয়ে ফেলবেন। তবে আগের তুলনায় নারী শ্রমিকদের মজুরি বৈষম্য অনেকটা কমে আসছে বলে দাবি করেন তিনি।

উল্লেখ্য, সারা বিশ্বের শ্রমজীবী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় পালন করা হয় এ মে দিবস। ১৮৮৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটের শ্রমিকেরা আট ঘণ্টা কাজের দাবিতে আন্দোলনে নামেন। ওই দিন অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করতে গিয়ে কয়েকজন শ্রমিককে জীবন দিতে হয়। এরপর থেকে দিনটি ‘মে দিবস’ হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য শ্রমিকদের আত্মত্যাগের এ দিনটিকে তখন থেকেই সারা বিশ্বে ‘মে দিবস’ হিসেবে পালন করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে বিশ্বব্যাপী সরকারি ছুটি থাকে এ দিন।

সিফাত/