দুই দিন আগেও ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হয়েছে ১৫০ টাকা। গতকাল সোমবার তা ১৭০ টাকায় ঠেকেছে। সোনালি মুরগির দামও কেজিতে ৪০ টাকা বেড়েছে। ২৮০ টাকা থেকে বেড়ে ৩২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। মৌসুম শুরু হলেও ইলিশ মাছও উচ্চমূল্যে বিক্রি হচ্ছে। বোরো ধান উঠলেও বেশি দরেই কিনতে হচ্ছে চাল। মিলমালিকরা চালের দাম বাড়ানোয় ক্ষুব্ধ খুচরা বিক্রেতারা।
সোমবার (২৩ জুন) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এ সব তথ্য পাওয়া গেছে।
ব্রয়লার মুরগি দুই দিন আগেও ১৫০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে। সোমবার কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়ে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা যায়। মোহাম্মদপুরের টাউন হল বাজারের ব্রয়লার হাউসের স্বত্বাধিকারী শিবলী মাহমুদসহ অন্য খুচরা বিক্রেতারা খবরের কাগজকে বলেন, ঈদের পর মুরগির চাহিদা কমে যাওয়ায় দাম কম ছিল। কিন্তু গতকাল থেকে মুরগির সরবরাহ কমে গেছে। এ জন্য দামও বেড়ে গেছে। ব্রয়লার ১৭০ টাকা ও সোনালি মুরগি ৩২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। হঠাৎ দাম বাড়ল কেন? এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘কখন বাড়বে, কখন কমবে বলা মুশকিল।’ তবে আগের মতোই দেশি মুরগি ৬৫০ থেকে ৬৮০ টাকা, গরুর মাংস ৭৫০ থেকে ৮০০, খাসির মাংস ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা কেজি ও ডিমের ডজন ১২০ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে আকারভেদে চাষের রুই, কাতলা মাছের কেজি ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা, পাবদা ৪০০ থেকে ৫০০, চিংড়ি ৫০০ থেকে ৮০০, তেলাপিয়া ও পাঙাশ ২২০ এবং কাঁচকি মাছ ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে মৌসুম শুরু হলেও বাজারে ইলিশ অতি চড়া দামে বিক্রি করতে দেখা গেছে। ওজনে এক কেজি হলে ২ হাজার ২০০ টাকা, কম হলে ২ হাজার টাকা পিস বিক্রি হচ্ছিল ইলিশ। ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশও ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা পিস বিক্রি হচ্ছে। ফলে জাতীয় মাছটি মধ্যবিত্তের মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। টাউন হল বাজারের ইলিশ মাছ বিক্রেতা রহিম আলী খবরের কাগজকে বলেন, ‘মৌসুম শুরু হলেও নদীতে আগের মতো ইলিশ পাওয়া যায় না। সরবরাহ খুবই কম। এ জন্যই দাম বেশি।’
সবজির দামও বাড়ছে
ঈদুল আজহার ছুটি শেষে রাজধানীর চিত্র আবার আগের অবস্থায় ফিরে এসেছে। সেই সঙ্গে সবজির দামও কিছুটা বেড়ে গেছে। গতকাল বাজারে দেখা যায়, বেগুন কেজিপ্রতি ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে লম্বা ও গোল বেগুনি রঙেরটা ১০০ টাকা, টমেটো ৮০ থেকে ১০০, করলা, পটোল, ঝিঙে, ধুন্দল, ঢ্যাঁড়স ৫০ থেকে ৬০, শসা ৫০ থেকে ১০০, কাঁচা মরিচ ৮০ থেকে ১০০ টাকা দরে বিক্রি হয়। কাঁকরোলের দাম কিছুটা কমে ৬০ থেকে ৮০ টাকা, পেঁপে ৩০ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। লেবুর হালি ১০ থেকে ১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কারওয়ান বাজারের সবজি বিক্রেতা সবুর আলী খবরের কাগজকে বলেন, ‘বর্ষাকালে অনেক ফসলি জমি ডুবে গেছে। কাজেই আর কম দামে সবজি মিলবে না।’
বিভিন্ন বাজারে দেখা গেছে, আগের মতোই পেঁয়াজ ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি, দেশি আদা ১২০ থেকে ১৩০, আমদানি করা আদা ১৮০ থেকে ২২০, দেশি রসুন ১৪০ থেকে ১৬০, আমদানি করা রসুন ১৮০ থেকে ২২০ ও আলুর কেজি ২০ থেকে ২৫ টাকায় বিক্রি হয়।
বেশি দরে চাল বিক্রি
সারা দেশে বোরো ধান ওঠায় ঈদের আগে চিকন তথা মিনিকেট চালের দাম কমে। কিন্তু ঈদের পর মনজুর, রশিদ, সাগর কোম্পানি মিনিকেটের বস্তায় ৩০০ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়েছে। এর ফলে আগে ৭৫ টাকা কেজি বিক্রি হলেও কয়েক দিন ধরে বিভিন্ন বাজারে ৮০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। মোজাম্মেল কোম্পানির চাল আরও বেশি ৮৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আটাশ চালের দামও বেড়ে ৬২ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে মোটা চাল আগের মতোই ৫২ থেকে ৫৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। কৃষি মার্কেটের খুচরা চাল বিক্রেতা মো. শওকত আলী, টাউন হল বাজারের নোয়াখালী স্টোরের ইউসুফসহ অন্য খুচরা চাল বিক্রেতারা বলেন, ‘ঈদের পর মিলমালিকরা চিকন চালের দাম কেজিতে ৫ থেকে ৬ টাকা বাড়িয়েছেন। এ জন্য আমাদেরও বেশি দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। আমরা লাভ বেশি না করলেও বদনাম হচ্ছে। এটা সরকারকে দেখা দরকার।’