
বিক্ষোভের মুখে গত সোমবার (৫ আগস্ট) বাংলাদেশ ছেড়ে গেছেন শেখ হাসিনা। এ ঘটনার আগের রাতে সেনাপ্রধান বৈঠকে বসেছিলেন জেনারেলদের সঙ্গে। সেখানে তারা সিদ্ধান্ত নেন বেসামরিক লোকদের ওপর গুলি চালিয়ে কারফিউ কার্যকর করা হবে না। এ বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত দুই সূত্র রয়টার্সকে এ ব্যাপারে জানিয়েছে।
এ সিদ্ধান্তের পর সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান শেখ হাসিনার দপ্তরে যোগাযোগ করেন। তাকে জানান, তিনি (শেখ হাসিনা) যে কড়াকড়ি চেয়েছেন তা প্রয়োগ করতে পারবেন না তার সেনারা। ভারতীয় এক সূত্রের বরাতে জানা যায় এ তথ্য। ওই সূত্র জানায়, এ থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় যে শেখ হাসিনা সেনাবাহিনীর সমর্থন আর পাচ্ছেন না।
সেনাপ্রধান ও জেনারেলদের বৈঠকটি হয়েছিল অনলাইনে। ওই বৈঠক বা শেখ হাসিনাকে দেওয়া বার্তা- কোনো খবরই এর আগে সামনে আসেনি। সূত্র জানায়, গত রবিবার সংঘর্ষে অন্তত ৯১ জনের মৃত্যু ও শত শত মানুষ আহত হওয়ার পর নতুন করে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ আরোপ করা হয়।
সেনাবাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল সামি উদ দৌলা ওই বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, সেটি নিয়মিত হালনাগাদের বৈঠক ছিল। এর বাইরে আর কোনো বিস্তারিত তথ্য দেননি তিনি। সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়ে বাড়তি প্রশ্ন করলে সেটিও স্পষ্ট করেননি।
রয়টার্সের প্রতিবেদন বলছে, এ বিষয়ে শেখ হাসিনার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কেও একাধিকবার মন্তব্যের জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। তিনিও সাড়া দেননি।
রয়টার্স গত সপ্তাহে ঘটে যাওয়া ঘটনা সম্পর্কে অবহিত ১০ ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেছে। তাদের মধ্যে চারজন সামরিক কর্মকর্তা এবং বাদবাকি দুজন ঘটনা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল সূত্র। মূলত শেখ হাসিনার শাসনামলের শেষ ৪৮ ঘণ্টায় কী ঘটেছে তা বোঝার চেষ্টা করেছে রয়টার্স। অনেকেই বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় নাম না প্রকাশের শর্তে তথ্য দিয়েছেন।
শেখ হাসিনা গত ৩০ বছরের মধ্যে ২০ বছরই বাংলাদেশের ক্ষমতায় ছিলেন। চলতি বছরের জানুয়ারিতে চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় আসেন তিনি। নির্বাচনটি আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলো বয়কট করেছিল। জুলাইয়ের প্রথম দিকে এসে ছাত্র আন্দোলনের মুখে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হন তিনি। মূলত কোটা সংস্কার প্রশ্নে শুরু হওয়া ওই আন্দোলন পরবর্তী সময়ে নিরস্ত্র ছাত্রদের গুলি করে হত্যা, দমন-পীড়ন, রাতের আঁধারে গ্রেপ্তার ইত্যাদি নানাবিধ পদক্ষেপের কারণে সরকার উৎখাত আন্দোলনের দিকে মোড় নেয়। সূত্র: রয়টার্স