মতিঝিলের দিলকুশায় অবস্থিত দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির প্রধান কার্যালয়ের প্রবেশমুখে সংঘর্ষ ও গুলির ঘটনা ঘটেছে।
রবিবার (১১ আগস্ট) বেলা ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় ব্যাংকের ৫ জন কর্মকর্তা গুলিবিদ্ধ হন এবং একজন মাথায় আঘাত পান। তাদেরকে রাজধানীর কাকরাইলে ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তারা হলেন- মোস্তাফিজুর রহমান, আবদুল্লাহ আল মামুন, মো. শফিউল্লাহ, আবদুর রহমান ও মো. বাকি বিল্লাহ। এদের মধ্যে মোস্তাফিজুর রহমানের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এ ছাড়া ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ায় আহত হয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন আরও ৫ জন।
ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জের ধরে বেলা পৌনে ১১টার দিকে ‘ইসলামী ব্যাংক পিএলসির গ্রাহক’ ব্যানারসহ শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়ে ঢোকার চেষ্টা করেন। এ সময় হট্টগোলের আওয়াজ পেয়ে প্রধান কার্যালয়ের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলার কর্মকর্তা-কর্মচারী, কর্তব্যরত নিরাপত্তাকর্মী এবং ভবনটির নিচতলায় উপস্থিত অন্যরা প্রতিরোধ করতে এগিয়ে আসেন। এ সময় উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ, ধস্তাধস্তি ও গুলির ঘটনা ঘটে। প্রবল প্রতিরোধের মুখে অনুপ্রবেশের চেষ্টাকারীরা ব্যর্থ হয়ে গুলি করতে করতে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
ফুটপাতে ফলের ব্যবসায়ী, প্রত্যক্ষদর্শী মো. হামিদ জানান, ওই সময় ইসলামী ব্যাংক ভবনের সামনের সড়ক ও ফুটপাতে অবস্থানকারীরা আতঙ্কে ছুটোছুটি করেন। ফলে ওই এলাকা জনশূন্য হয়ে পড়ে। তবে এ ঘটনা খুব স্বল্প সময় স্থায়ী হয় এবং আবারও সড়কে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসে। কিছুক্ষণের মধ্যে ব্যাংকটির সামনে বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থা ‘এলিট ফোর্স’ এর সশস্ত্র নিরাপত্তাকর্মীরা এসে পৌঁছান এবং টহল দেন।
ঘটনার সময় ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুনিরুল মওলা ব্যাংকে ছিলেন না বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
ব্যাংকটির পক্ষ থেকে বলা হয়, ২০১৭ সালে মালিকানা পরিবর্তনের পূর্বে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তারা এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। সরকার পতনের পর দেশের পরিবর্তিত পটভূমিতে আগস্টের ৬ তারিখ থেকেই ওই গ্রুপটি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করে আসছেন বলেও প্রধান কার্যালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
জানা যায়, ২০১৭ সালে ইসলামী ব্যাংকের অধিকাংশ শেয়ার কিনে নেয় চট্টগ্রামভিত্তিক এস আলম গ্রুপ। এর মাধ্যমে ব্যাংকটির মালিকানা বদল হয়। এর পর থেকে ব্যাংকটি স্বাভাবিক নিয়মে পরিচালিত হয়ে আসছে।
সর্বোচ্চ পরিমাণ রেমিট্যান্স আহরণ, ঋণ বিতরণ ও আমানত সংগ্রহ করে ইসলামী ব্যাংক এখন দেশের শীর্ষ বাণিজ্যিক ব্যাংক। ২০২৩ সালে ব্যাংকটি মোট আমানত পেয়েছে ১ লাখ ৫৩ হাজার ৪৫৬ কোটি টাকা। আর একই বছর ঋণ বিতরণ করেছে মোট ১ লাখ ৪১ হাজার ৩৫ কোটি টাকা।
২০২৩ সাল শেষে ঋণ বিতরণ ও আমানত প্রাপ্তি- এ দুই ক্ষেত্রেই ইসলামী ব্যাংক দেশের শীর্ষস্থানে থাকা সোনালী ব্যাংককে পেছনে ফেলে শীর্ষস্থান দখল করে।
রেমিট্যান্স সংগ্রহে আগে থেকেই ইসলামী ব্যাংক শীর্ষস্থানে ছিল। প্রতি মাসেই ব্যাংকটি ৫০০ মিলিয়ন বা ৫০ কোটি ডলারের বেশি রেমিট্যান্স পেয়ে থাকে। বছরশেষে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে আসা রেমিট্যান্সের পরিমাণ দাঁড়ায় ৬ বিলিয়নের মতো। এ পরিমাণ রেমিট্যান্স অন্য কোনো ব্যাংক আনতে পারেনি।
২০২৩ সালে ইসলামী ব্যাংক ১ লাখ ৫৩ হাজার ৪৫৬ কোটি টাকা আমানত পায়। প্রবৃদ্ধি হয় ৯ শতাংশ।
২০২৩ সালে ইসলামী ব্যাংক ঋণ বিতরণ করেছে ১ লাখ ৪১ হাজার ৩৫ কোটি টাকা।
২০২৩ সালে আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক ব্যাংক এখন থেকে ইসলামী ব্যাংক পিএলসি। ২০২৩ সাল পর্যন্ত ইসলামী ব্যাংকের শাখা ছিল ৩৯৪টি।