ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সারা দেশে বিক্ষুব্ধ জনতা বিভিন্ন থানায় অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করে। এ অবস্থায় বন্ধ হয়ে যায় দেশের সব থানার কার্যক্রম। এক সপ্তাহ পর সারা দেশে ৬২৮টি থানার কার্যক্রম চালু হয়েছে।
সোমবার (১২ আগস্ট) বিকেলে এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স।
এতে বলা হয়, সোমবার বিকেল পর্যন্ত সারা দেশের সর্বমোট ৬৩৯টি থানার মধ্যে ৬২৮টি থানার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। মেট্রোপলিটনের ১১০টি থানার মধ্যে ১০৮টি এবং জেলার ৫২৯টি থানার মধ্যে ৫২০টি থানার কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, নন-অপারেশনাল ১১টি থানা সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এবং প্রয়োজনীয় আসবাবপত্রসহ অন্যান্য সরঞ্জামাদি ধ্বংসপ্রাপ্ত হওয়ায় এসব থানার কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হয়নি। তবে আগামী ২-৩ দিনের মধ্যে এই ১১টি থানার কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হবে।
নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম ও সিলেট ব্যুরো, বরিশাল এবং গাজীপুর প্রতিনিধির পাঠানো খবর-
চট্টগ্রামে ১৬ থানার দায়িত্ব নিল পুলিশ
দেশের অন্যান্য স্থানের মতো চট্টগ্রাম মহানগরের ১৬ থানায় পুলিশিং কাজ শুরু হয়েছে। সোমবার সকাল থেকে থানায় সাধারণ ডায়েরিসহ অভিযোগ গ্রহণ করা শুরু হয়েছে। এ ছাড়া নগরের জিইসি মোড়, ওয়াসা মোড়, লালখান বাজার, আগ্রাবাদ বন্দর এলাকায় সড়কের যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করছে ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা। সকালের দিকে সড়কে যানবাহন সংখ্যা কম দেখা গেলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যানবাহনের সংখ্যা বাড়তে দেখা গেছে।
জিইসি মোড় এলাকায় দায়িত্ব পালনকালে ট্রাফিক পুলিশের কর্মকর্তা (টিআই) নাদিবুর রহমান খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমাদের থানায় ও পুলিশ বক্সে হামলা হয়েছিল, আমাদের অনেক সদস্যের বাড়িঘরে পর্যন্ত হামলা হয়েছিল। আমরা চরম নিরাপত্তাহীনতা ভুগছিলাম। তবে সোমবার সকাল থেকে কাজ শুরু করেছি। এতে ছাত্ররাও আমাদের সহযোগিতা করছেন।’
এদিকে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ, চান্দগাঁও, চকবাজার, বায়েজিদ, খুলশি, পাহাড়তলী, আকবর শাহ, ডবলমুরিং, বাকলিয়া, কোতোয়ালি, সদরঘাট, হালিশহর, বন্দর, ইপিজেট, পতেঙ্গা, কর্ণফুলী থানায় কার্যক্রম শুরু করেছে পুলিশ। পুলিশের পাশাপাশি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কয়েকজন শিক্ষার্থীও দায়িত্ব পালন করছেন থানায়। মনোবল ফিরিয়ে আনার জন্য পুলিশের পাশাপাশি থানায় সাধারণ শিক্ষার্থীরাও কাজ করছেন।
পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সন্তোষ কুমার চাকমা বলেন, ‘থানার কার্যক্রম শুরু করেছি। অনেক পুলিশ সদস্য এখনো এসে পৌঁছতে পারেননি। তবে সবার সঙ্গে যোগযোগ রক্ষা হয়েছে, সবাই থানায় যোগ দেবেন। এতদিন কার্যক্রম না চলায় অনেক কাজ জমে গেছে। তাই একসঙ্গে চাপ সৃষ্টি হয়েছে।’
এদিকে পুলিশ ব্যুরো অব ইভেস্টিগেশন (পিবিআই) চট্টগ্রামের পরিদর্শক মোহাম্মদ মুনির হোসেন খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমি বিভিন্ন কলেজে গিয়ে শিক্ষার্থীদের বোঝানোর চেষ্টা করেছি, পুলিশ শিক্ষার্থীদের শত্রু নয়, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যে অর্ডার দিয়েছে আমরা তা পালন করেছি। আমরা কেন শিক্ষার্থীদের প্রতিপক্ষ ভাবব। আমাদের ঊর্ধ্বতনরা হুকুমের মাধ্যমে পুলিশ-ছাত্র যুদ্ধ লাগিয়ে দিয়েছেন। আমরাও এ দেশটা সুন্দরভাবে গড়তে চাই।’
জিএমপিতে পুরোদমে শুরু পুলিশের কার্যক্রম
গাজীপুর জেলায় সব কটি থানার কাজ পুরোদমে শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি) কমিশনার মো. মাহবুব আলম।
সোমবার বেলা সাড়ে ১১টায় টঙ্গীর স্টেশন রোডে এক ব্রিফিংয়ে কমিশনার এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘পুলিশ থানার ভেতরে ও বাইরে কাজ করছে। পুড়ে যাওয়া থানা ও পুলিশ বক্সগুলোর কাজ অন্য জায়গা থেকে পরিচালিত হচ্ছে। সবকিছু ঠিক হতে দু-এক দিন সময় লাগবে। ক্ষতিগ্রস্ত থানা ও পুলিশ বক্স মেরামতের আগ পর্যন্ত বিকল্পভাবে কাজ শুরু হয়েছে। গত কয়েক দিনের ঘটনায় ভেঙে যাওয়া পুলিশের মনোবল ফিরে আসছে।’
বরিশালে পুলিশকে সাধারণ মানুষের অভিবাদন
বরিশাল মেট্রোপলিটন ও জেলা মিলে ১৪ থানার পাশাপাশি ট্রাফিক বিভাগের পুলিশ সদস্যরা মাঠপর্যায়ে কাজ শুরু করেছেন। সোমবার সকাল থেকে থানাসহ নিজ নিজ কর্মস্থলে হাজিরা দিয়ে দায়িত্ব বুঝে নিয়েছেন। সকাল ৯টায় নগরীর জেলখানার মোড়ে ট্রাফিক বিভাগের সদস্যরা অবস্থান নিয়ে সাধারণ মানুষ তাদের হাত নেড়ে অভিবাদন জানিয়েছেন। ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের কাজের সহায়তায় ছিলেন আনসার-ভিডিপি, ফায়ার সার্ভিস, বিএনসিসি, স্কাউট, গার্লস গাইড ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের উপকমিশনার এস এম তানভীর আরাফাত বলেন, ‘সদস্যদের সঙ্গে সকালে কথা হয়েছে, তাদের মনোবল দৃঢ় আছে। সকাল থেকে ট্রাফিক বিভাগের সদস্যরা তাদের দায়িত্বপালন শুরু করেছেন। দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে তারা নগরের ট্রাফিকব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে কাজ করবেন।’
পুলিশ সুপার ওয়াহিদুল ইসলাম জানান, সকাল থেকে বরিশাল জেলার ১০ থানার পুলিশ সদস্যদের পাশাপাশি ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা কাজ শুরু করেছেন।
সিলেটের ছয়টি থানা চালু
ছাত্র-জনতার অভুত্থানের পর থেকে সিলেটের থানাগুলোতে বন্ধ ছিল পুলিশের কার্যক্রম। সড়কগুলোতে ট্রাফিক পুলিশের কার্যক্রমও বন্ধ ছিল। প্রায় ছয় দিন পর আবার চালু করা হয়েছে সিলেটের ছয়টি থানা। নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায় ট্রাফিক পুলিশের সদস্যদের।
সোমবার সকাল থেকে সিলেটের ছয়টি থানার দায়িত্বরত ওসি ও পুলিশ সদস্যরা আসতে শুরু করেন। থানাগুলোর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা অফিসে দায়িত্ব পালন করছেন। তবে নিরাপত্তার জন্য থানাগুলোতে এখনো সেনাবাহিনীর অবস্থান রয়েছে। নগরীর বিভিন্ন সড়ক ও গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে দায়িত্ব পালন শুরু করেন ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা। সকাল থেকে নগরীর চৌহাট্টা, জিন্দাবাজার, সোবহানীঘাট, আম্বরখানা, নাইওরপুলসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় ট্রাফিক পুলিশদের দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়। এ সময় ট্রাফিক পুলিশের পাশে বিএনসিসি, স্কাউট সদস্যদের দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়।
সিলেট নগরীর টিএসআই মো. শাহিন কবির বলেন, ‘২ আগস্টের পর আবার ডিউটি শুরু করেছি। আমাদের সঙ্গে বিএনসিসি ও স্কাউটের সদস্যরাও আছেন। সকাল থেকেই সুন্দরভাবে আমরা দায়িত্ব পালন করছি।’