পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) সাবেক প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মনিরুল ইসলাম এবং ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানকে চাকরি থেকে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের পৃথক দুটি প্রজ্ঞাপনে এই দুই কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের পুলিশ শাখা-১ এর সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম প্রজ্ঞাপন দুইটিতে স্বাক্ষর করেন। হাবিবুর রহমান মোহাম্মদপুর থানার একটি হত্যা মামলার আসামি। এর আগে হাবিবুর রহমানকে ডিএমপি কমিশনার ও মনিরুল ইসলামকে এসবি প্রধান থেকে সরিয়ে পুলিশ অধিদপ্তরে যুক্ত করা হয়।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের দীর্ঘ ১৬ বছরে অন্তত অর্ধশত উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা পুলিশ বাহিনীতে ব্যাপক ক্ষমতার দাপট চালিয়েছেন। পতিত সরকারের শীর্ষ পর্যায় ও প্রভাবশালী নেতাদের ঘনিষ্ঠ এবং আস্থাভাজন ছিলেন তারা। সরকারের পারপাস সার্ভ করাসহ তারাই নানা কৌশলে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর আন্দোলন দমনে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের স্ট্র্রিম রোলার চালাতে নির্দেশ দিতেন। সবশেষ কোটা সংস্কার তথা ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনেও মাঠপর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের দিয়ে শিক্ষার্থীদের গুলি করে হত্যাসহ নিষ্ঠুর ভূমিকা রাখতে বাধ্য করেন বিতর্কিত এসব ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা।
যার ফলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার পর জনরোষে পড়ে পুলিশ সদস্য ও তাদের স্থাপনা। এমন বাস্তবতায় বাহিনীর ভেতর থেকেই এসব দলবাজ পুলিশ কর্মকর্তার বিচার, চাকরিচ্যুতি ও বদলি করে বাহিনীর সংস্কারের দাবি ওঠে। ফলে হার্ডলাইনে গিয়ে গোটা বাহিনী ঢেলে সাজাতে বাধ্য হচ্ছে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহত ছাত্র আবু সাঈদের এলাকা রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি আব্দুল বাতেন ও সেখানকার পুলিশ কমিশনার মো. মনিরুজ্জামানকে মঙ্গলবার বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। বাহিনীর উচ্চপর্যায়ে বড় ধরনের রদবদল আনা হয়েছে।
সাঈদ হত্যা: চাকরি হারালেন রংপুরের ডিআইজি ও পুলিশ কমিশনার
কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহত আবু সাঈদের এলাকা রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি আব্দুল বাতেন ও সেখানকার পুলিশ কমিশনার মনিরুজ্জামানকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। স্বরাষ্ট্র সচিব জাহাংগীর আলম স্বাক্ষরিত পৃথক প্রজ্ঞাপনে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। তবে কোনো প্রজ্ঞাপনেই কোনো কারণ বা আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডের কথা উল্লেখ করা হয়নি। দুজনকেই ২০১৮ সালের সরকারি চাকরি আইনের ৪৫ ধারার বিধান অনুযায়ী ‘জনস্বার্থে সরকারি চাকরি থেকে অবসর প্রদান করা হলো’ বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়। জনস্বার্থে এই আদেশ অবিলম্বে কার্যকর করা হবে।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন চলাকালে বিক্ষোভের সময় গত ১৬ জুলাই দুপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পার্ক মোড়ে প্রতিবাদমুখর নিরস্ত্র আবু সাঈদকে পুলিশ গুলি করে। সহপাঠীরা সাঈদকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। আবু সাঈদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন।
সিআইডি প্রধানকে অপসারণ
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) প্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়াকে দায়িত্ব থেকে সরানো হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের প্রজ্ঞাপনে তাকে অব্যাহতি দিয়ে পুলিশ অধিদপ্তরে সংযুক্ত করা হয়েছে। তবে এখনো নতুন করে কাউকে সিআইডি প্রধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়নি।