রাজধানীর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে প্রদীপ প্রজ্বালন শেষে জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রী রোকেয়া প্রাচীর ওপরে হামলা হয়েছে।
বুধবার (১৪ আগস্ট) সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টায় এই ঘটনা ঘটে। এ সময় তার সঙ্গে থাকা সাংস্কৃতিক কর্মী ও সাধারণ মানুষও হামলার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠে।
বুধবার সকাল থেকে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু প্রাঙ্গণে অবস্থান নেন রোকেয়া প্রাচী।
এর আগে এই অভিনেত্রী ফেসবুকে লিখেছিলেন, ‘আছি ধানমন্ডি ৩২-এ। হোক সব হত্যার, সব নৈরাজ্যের বিচার। বিচার হোক বাঙালির ইতিহাস হত্যার, আছি। আমরাও বিচার চাই। শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদে স্মরণ করব স্বাধীনতা এবং বঙ্গবন্ধুর ইতিহাস। আছি পুড়ে যাওয়া ৩২-এ।’
স্ট্যাটাসের পরে ৩২-এ অবস্থান নেন রোকেয়া প্রাচী। এর কিছু পর আরও ৭০-৮০ জন সংস্কৃতিকর্মী রোকেয়া প্রাচীর সঙ্গে যোগ দেন। সন্ধ্যায় প্রদীপ প্রজ্বালনের আয়োজন চলাকালে ৩০-৩৫ জন যুবক উপস্থিত হন।
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, তাদের হাতে লাঠিসোঁটা ছিল। তারা সবাইকে হুমকি দিয়ে সরিয়ে দেন। এরপর বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি ভাঙচুর করেন। রোকেয়া প্রাচী বাধা দিতে গেলে তাকে লাঠি দিয়ে মারতে থাকে যুবকরা। একের পর এক আঘাতে অভিনেত্রী লুটিয়ে পড়েন। পরে তাকে দ্রুত সহশিল্পীরা ধরে বাইরে নিয়ে যান।
রোকেয়া প্রাচীর সঙ্গে থাকা একজন জানান, হামলাকারীরা স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মী। তারা সেখানে সকাল থেকে রোকেয়া প্রাচীকে সরে যেতে হুমকি দিতে থাকেন। সন্ধ্যার পরে প্রদীপ প্রজ্বালন শেষে তার অপর অতর্কিত হামলা চালানো হয়।
পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, সন্ধ্যা ৭ টায় বঙ্গবন্ধু প্রতিকৃতির সামনে মোমবাতি প্রজ্বালন ও এক মিনিটের নীরবতা পালন করা হয়। এ সময় রোকেয়া প্রাচী বলেন, ‘আজ আমরা সবাই এখানে একত্রিত হয়েছি; কারণ বাংলাদেশ পুড়েছে। আমরা সবাই একত্রিত হয়েছি কারণ আমাদের ১৯৭১ পুড়েছে। আমরা এখানে একত্রিত হয়েছি কারণ আমাদের বঙ্গবন্ধুর ছবি পুড়েছে, ধানমন্ডি ৩২ পুড়েছে। আমরা এখানে একত্রিত হয়েছি বাংলাদেশ পুড়েছে বলে। আমরা এখানে কোনো রাজনীতির কথা বলতে আসিনি। বাংলাদেশ আমাদের সবার।’
তিনি বলেন, ‘আমরা এখানে শোক প্রকাশ করতে এসেছি শান্তিপূর্ণভাবে। আমরা বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা করি। তিনি আমাদের জন্য এই বাংলাদেশ দিয়েছেন, সংবিধান দিয়েছেন। এই ৩২ যখন পুড়েছে তখন আমাদের মনে হয়েছে আমরা পুড়েছি। আমরা ধানমন্ডি ৩২-এ দাঁড়িয়ে সারা বিশ্বের এই মহানায়কের কাছে ক্ষমা চাইছি, আমরা লজ্জিত, বাঙালি জাতি আজ লজ্জিত।
তবে এর কিছুক্ষণ পর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে একদল দুর্বৃত্ত তাদের ওপর হামলা চালায়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন প্রাচী নিজেই। তিনি বলেন, সন্ধ্যা সোয়া ৭ টার দিকে আমাদের ওপরে অতর্কিত হামলা হয়। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করছিলাম। হঠাৎ আমাদের ঘিরে ধরে বেধড়ক পেটানো হয়।’
তাকে টার্গেট করে হামলা চালানো হয়েছে এমন অভিযোগ করে কান্নাজড়িত কণ্ঠে রোকেয়া প্রাচী বলেন, ‘যারা পিটিয়েছে তারা আমাকে টার্গেট করেই এসেছে। প্রত্যেককে আমার শিক্ষিত মনে হয়েছে। তারা খুব শুদ্ধ ভাষায় কথা বলেছে।’ এ সময় উপস্থিত ছিলেন শিল্পী মনিরুজ্জামান, সঞ্জীব ইসলাম, মাহবুব খানসহ অনেকে।
এদিকে হামলার ঘটনার খবরে দ্রুত সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।