রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ও ওয়ারী এলাকায় পিটিয়ে এবং কুপিয়ে পাঁচজনকে হত্যার ঘটনা ঘটেছে।
বুধবার (১৪ আগস্ট) বিভিন্ন সময়ে হত্যাকাণ্ডের এসব ঘটনা ঘটে।
এর মধ্যে যাত্রাবাড়ীতে গণপিটুনিতে শিক্ষার্থী সাইদ আরাফাত শরীফ (২০) ও সাইদুল ইসলাম ইয়াসিন (১৯) মারা গেছেন।
এ ছাড়া যাত্রাবাড়ী মাছের আড়ত থেকে এক অজ্ঞাত (৩০) যুবকের লাশ উদ্ধার করেছেন স্থানীয়রা।
পাশাপাশি ওয়ারীর হাটখোলা এলাকায় বিএনপি নেতা আল আমিন ভূঁইয়া (৪৫) ও তার ভাই নুরুল আমিন ভূঁইয়াকে (৩৫) দুর্বৃত্তরা কুপিয়ে হত্যা করেছে বলে জানা গেছে।
যাত্রাবাড়ীতে কেন দুজন শিক্ষার্থীকে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করা হয়েছে তা স্পষ্ট করতে পারেনি নিহতের পরিবার, পুলিশ ও স্থানীয়রা। কেউ বলেছেন, তাদের ধর্ষণের অভিযোগে হত্যা করা হয়েছে। আবার কেউ বলছেন, পূর্ব শত্রুতার জেরে তাদের হত্যা করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করছে পুলিশ।
পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সকাল ৬টার দিকে যাত্রাবাড়ীর সায়দাবাদের টনি টাওয়ারের সামনে সাইদ আরাফাত শরীফ ও সাইদুল ইসলাম ইয়াসিনকে পিটিয়ে আহত করে কিছু লোকজন। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে যাত্রাবাড়ী থানায় নিয়ে যান। পরে থানার পুলিশ তাদের দুজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। নিহত ইয়াসিন কুতুবখালীর সাখাওয়াত হোসেনের ছেলে। তিনি যাত্রাবাড়ীর ধলপুর বউবাজার এলাকায় ভাড়া থাকতেন। কুতুবখালী এলাকার একটি মাদ্রাসায় ইয়াসিন লেখাপড়া করতেন। নিহত সাইদ নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার কদমির চর গ্রামের কবির হোসেনের ছেলে। যাত্রাবাড়ীর সায়দাবাদ এলাকায় তিনি থাকতেন।
দুজনকে হাসপাতালে নিয়ে আসা স্কাউট সদস্য সম্রাট শেখ সাংবাদিকদের জানান, দুই শিক্ষার্থীকে গণধোলাই দেয় স্থানীয় জনতা। আমরা জানতে পেরেছি সায়দাবাদ এলাকায় সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয় এক নারী। পরে উৎসুক জনতা দুজনকে পিটিয়ে আহত করে। পরে হাসপাতালে নেওয়া হলে তারা মারা যান।
নিহত ইয়াসিনের মা শিল্পী আক্তার জানান, ইয়াসিন ১৫ দিন ধরে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে বিভিন্ন জায়গায় কাজ করছিল। গত মঙ্গলবার সকালে তিনি যাত্রাবাড়ী ধলপুর বউবাজারের বাসা থেকে বের হন। এরপর বহুবার ফোনে কথা হয়েছে।
বুধবার ভোর ৪টার দিকেও শিল্পী আক্তারের সঙ্গে ফোনে কথা হয় ইয়াসিনের। তখনো ইয়াসিন সুস্থ স্বাভাবিক ছিল বলে মাকে জানান।
এরপর সকালে কেউ একজন তার মাকে ফোন করে জানান, তার ছেলের অবস্থা ভালো না এবং দ্রুত যাত্রাবাড়ী থানায় যেতে বলেন। মায়ের অভিযোগ পূর্ব শত্রুতার জের ধরে তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তবে কারা তাকে হত্যা করেছে তা তিনি বলতে পারেননি।
ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মো. বাচ্চু মিয়া বলেন, লাশ দুটি ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।
এদিকে রাজধানীর ওয়ারীর হাটখোলা এলাকায় থানা বিএনপির জয়েন্ট সেক্রেটারি আল আমিন ভূঁইয়া ও তার ভাই নুরুল আমিন ভূঁইয়াকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বজনরা।
বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ওরারী হাটখোলার ফকির বানু টাওয়ারের পাশের গলিতে এ ঘটনা ঘটে। স্বজনরা দুজনকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন। নিহত দুজন ওয়ারীর ২ নম্বর কেএম দাস লেনের শামসুদ্দিন ভূঁইয়ার ছেলে।
আল আমিনের স্ত্রী মুনমুন জানান, দেড় বছর আগে রিপন নামের এক ডেভেলপার ব্যবসায়ীর কাছ থেকে প্রায় দেড় কোটি টাকা দিয়ে একটি ফ্ল্যাট কিনেছিলেন তারা। হাটখোলা এলাকার ওই ফ্ল্যাট রেডি হলেও এখনো তা বুঝিয়ে না দেওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। সকালে ওই এলাকায় যাওয়ার পর রিপনের লোকজন দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যা করেছে।
ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মো. বাচ্চু মিয়া জানান, দুই ভাইয়ের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। ফ্ল্যাট নিয়ে বিরোধের জেরে তাদের দুজনকে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি।
এ ছাড়া বুধবার দুপুর ১২টার দিকে যাত্রাবাড়ী মাছের আড়তের পাশে এক যুবকের লাশ উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালে নেয় স্থানীয়রা। তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন আছে। তার পরিচয় উদঘাটনের চেষ্টা করছে পুলিশ।