দ্বিতীয় স্বাধীনতার মাধ্যমে ‘আবার যাত্রা শুরু করেছে বাংলাদেশ’ শিরোনামে নিবন্ধ প্রকাশ করেছে লন্ডনভিত্তিক বহুল প্রচারিত সাময়িকী ‘দ্য ইকোনমিস্ট’। চলতি সংখ্যার প্রচ্ছদে বলা হয়েছে, নানা কঠিন সমস্যা সত্ত্বেও বেশ কিছু সুবিধাও রয়েছে বাংলাদেশের। বাংলাদেশ এখন নৈতিকতার বলে বলীয়ান ড. ইউনূসের মতো একজন নেতা পেয়েছে।
বহুল পঠিত ম্যাগাজিনটি ‘বাংলাদেশ গুরুত্ব বহন করে; এ দেশটিকে ব্যর্থ হতে দেওয়া যায় না’- উল্লেখ করে বলেছে, সুসংবাদ হচ্ছে যে দেশটির অর্থনীতি কঠিন পরিস্থিতি দ্রুত কাটিয়ে উঠতে সক্ষম এবং দেশটির সুশীল সমাজ দৃঢ়চেতা। গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে বিতাড়িত করার পর নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী-সমর্থিত একটি অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। তার মতো অনেক বাংলাদেশি এটিকে স্বাধীনতা লাভের অর্ধশতাব্দী পর ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা’ বলছেন।
ম্যাগাজিনটি লিখেছে, এই মুহূর্তের অঙ্গীকার পূরণ করতে বাংলাদেশকে এখন স্বৈরাচারীকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর আরও অনেক কিছু করতে হবে। নষ্ট রাজনৈতিক ব্যবস্থা দূর করতে হবে। ড. ইউনূসের লক্ষ্য হওয়া উচিত একটি যুক্তিসংগত সময়সীমার মধ্যে সঠিকভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠান করা। কিন্তু প্রথমে তাকে শেখ হাসিনার দখল করা প্রতিষ্ঠানগুলো, যেমন- নির্বাচনি কর্তৃপক্ষ এবং আদালতগুলোকে পরিচ্ছন্ন করতে হবে। দেশকে গণতান্ত্রিক পথে নিয়ে আসার জন্য ড. ইউনূসের কাছে সময় খুবই কম উল্লেখ করে নিবন্ধে বলা হয়, তার সাফল্য বা ব্যর্থতা ১৭৩ মিলিয়ন বাংলাদেশির জীবনযাত্রার সফলতা নির্ধারণ করবে এবং চীন, ভারত, রাশিয়া ও পশ্চিমের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রভাব বিস্তার করবে।
এতে বলা হয়, ড. ইউনূস একটি অত্যন্ত কঠিন কাজের সম্মুখীন। তার অগ্রাধিকার হওয়া উচিত শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার ও প্রতিশোধমূলক সহিংসতার ঢেউ প্রতিরোধ করা, যা অতীতে বাংলাদেশের রাজনীতিকে ধ্বংস করেছে। ইউনূসকে দ্রুত কাজ করার পরামর্শ দিয়ে নিবন্ধটিতে বলা হয়, অনির্বাচিত সরকারের খুব বেশিদিন ক্ষমতায় থাকার সুযোগ নেই। কারণ তাতে তারা বৈধতা হারাতে বা আরও খারাপ কিছু হতে পারে অথবা এর সামরিক সমর্থকরা অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে প্রলুব্ধ হতে পারে।
ম্যাগাজিনটি সতর্ক করেছে যে দেশটি পাকিস্তানের মতো ইসলামপন্থিদের শিকার হতে পারে। আর্থিক টানাটানি খারাপ হলে বাংলাদেশ সস্তা ঋণ ও অস্ত্রের জন্য চীনের ওপর নির্ভরশীল হতে পারে। যার ফলে প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক অস্থিতিশীল হতে পারে এবং গণতন্ত্র আরও বিনষ্ট হতে পারে।
নিবন্ধে আরও বলা হয়েছে, যখন অর্থনীতির কথা আসে, তখন সরকারের উচিত ব্যালান্স-অব-পেমেন্ট ঝুঁকির উৎকণ্ঠা কমাতে বাইরে থেকে আরও তহবিল জোগাড় করা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ নতুন বাণিজ্য চুক্তির চেষ্টা করা। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, ড. ইউনূসকে অবশ্যই দেশের তরুণ সমাজ, ক্রমবিকাশমান ও ক্রমবর্ধমান শহুরে জনসংখ্যার আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটিয়ে রাজনৈতিক ব্যবস্থা এবং নেতাদের কাছে নতুন ধারণার ব্যাপারে নিজেকে উন্মুক্ত করার আহ্বান জানাতে হবে।
ম্যাগাজিনটি অবশ্য বাংলাদেশে কর্তৃত্ববাদী শাসনকে সহায়তা করার জন্য ভারতকে দায়ী করে বলেছে, ভারত যদি একটি স্থিতিশীল প্রতিবেশী চায়, তবে দেশটির উচিত হবে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার আহ্বান জানানো এবং আর্থিক সহায়তা দেওয়া।