নতুন বাংলাদেশ গড়ার জন্য সহযোগিতা কামনা করে উৎপাদনশীলতা, সক্ষমতা ও বিশ্ববাজারে কার্যকরভাবে প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বাড়াতে ব্যবসায়ীদের সম্মিলিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
ব্যবসায়ীদের উদ্যোক্তা মনোভাবের প্রশংসা করে তিনি বলেন, ‘আমাদের সম্মিলিতভাবে এগিয়ে যেতে হবে। এটি একটি নিশ্ছিদ্র দল। এটি একটি খুব সুসংহত পরিবার। আসুন আমরা একসঙ্গে কাজ করি। আসুন আমরা নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলি।’
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘গত ১৫ বছরে দেশটি যে পচা ব্যবস্থা প্রত্যক্ষ করেছে, তা থেকে বেরিয়ে এসে আমরা একটি শক্তিশালী ও শোভন অর্থনীতির নতুন বাংলাদেশ গড়ার সুযোগ পেয়েছি।’
ব্যবসায়ীদের বিশ্বমানের উদ্যোক্তা হিসেবে বর্ণনা করে নোবেল বিজয়ী ইউনূস বলেন, ‘আমরা একসঙ্গে এটি করতে পারি। আপনারা প্রমাণ করেছেন যে আপনারা পারেন।’
বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) ঢাকার একটি হোটেলে ‘ন্যাশনাল বিজনেস ডায়ালগ’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স, বাংলাদেশ (আইসিসিবি)।
আইসিসিবি সভাপতি মাহবুবুর রহমানের অনুপস্থিতিতে বক্তব্য দেন ব্যবসায়ী মীর নাসির হোসেন। এতে আরও বক্তব্য দেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ এবং অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এটি কোনো সাধারণ রাজনৈতিক আন্দোলন ছিল না, কিন্তু ছাত্ররাই তাদের আপসহীন মনোভাব নিয়ে নতুন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য অর্জনে নেতৃত্ব দিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘এ ধরনের সুযোগ বারবার আসে না এবং ভবিষ্যতে জাতি এ ধরনের সুযোগ পাবে কি না সে সম্পর্কে তাদের কোনো ধারণা নেই। আপনাদের সবার কাছে আমার আবেদন, এই সুযোগ যেন অব্যবহৃত না থাকে।’
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘এই সম্মিলিত পরিবারে তারা পরস্পরকে চেনেন, যা ক্ষমতার একটি বড় উৎস। তৈরি পোশাকশিল্প কোথা থেকে খুব বড় কিছু হিসেবে পরিণত হয়েছিল।’
তিনি বলেন, ‘তৈরি পোশাকশিল্প গর্বের সঙ্গে বিশ্ববাজারে দ্বিতীয় স্থান ধরে রেখেছে এবং এটি বিশ্ববাজারে এক নম্বর হতে পারে।’
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা সম্মিলিত একটি পরিবারের সদস্য এবং সরকার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করতে চায়।’
তিনি বলেন, ‘সব ক্ষেত্রে তাদের জ্ঞান বা অভিজ্ঞতা না-ও থাকতে পারে। তবে তারা একটি দল হিসেবে একসঙ্গে কাজ করে প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে পারে। আসুন আমরা স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিই।’
পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন যুগের চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, তারা কিছু সুবিধা হারাতে পারে, তবে তাদের দক্ষতার সঙ্গে প্রতিযোগিতা করার সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে।
প্রধান উপদেষ্টা তার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকীকে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন এবং ব্যবসায়ীদের বার্তা আন্তর্জাতিক অংশীদারদের কাছে পৌঁছে দিতে তিনি সফল হবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, ‘আসুন আমরা একসঙ্গে সংস্কার করি। শ্রমিক-মালিকদের মধ্যে সুসম্পর্ক দেখতে পাওয়াই আমার বড় প্রত্যাশা। শ্রমিকদের সমস্যার সুরাহা না হলে আমরা এগোতে পারব না। আমরা যদি এগিয়ে যেতে চাই, আমাদের সাহস দিন।’
প্রধান উপদেষ্টা ব্যবসায়ীদের সামাজিক ব্যবসা করতে উৎসাহিত করে বলেন, অর্থ উপার্জন করা সুখের কিন্তু অন্যকে খুশি করা আরও বেশি সুখের।
তিনি বলেন, ‘দেশ আমাদের সুযোগ দিয়েছে বলেই আমরা যা করতে পারি তা করব। আসুন আমরা একসঙ্গে কাজ করি।’
আইসিসিবির সভাপতির পক্ষে মীর নাসির হোসেন বলেন, একটি সুপরিকল্পিত স্বার্থান্বেষী মহল রয়েছে যারা সমাজ ও অর্থনীতিতে বিশৃঙ্খলা ও অস্থিরতা সৃষ্টি করে অন্তর্বর্তী সরকারের বদনাম করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।
শহিদদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে সামগ্রিকভাবে ব্যবসায়ীরা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে অনুঘটক হিসেবে কাজ করবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই এই স্বার্থান্বেষী মহলকে প্রতিহত করতে হবে এবং সর্বশক্তি দিয়ে এর মোকাবিলা করতে হবে।’