জুলাই-আগস্ট মাসে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে রাজধানীর মোহাম্মদপুর-আদাবর এলাকায় অন্তত ২২ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এতে আহত হয়েছেন ২২৭ জন এবং এখন পর্যন্ত নিখোঁজ রয়েছেন দুইজন।
শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বেঙ্গলী মিডিয়াম হাইস্কুলে আয়োজিত এক স্মরণসভায় এই তালিকা প্রকাশ করে গণসংহতি আন্দোলন। ‘২০২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানে মোহাম্মদপুর-আদাবর অঞ্চলে আহত-নিখোঁজ ও শহিদদের তালিকা প্রকাশ ও স্মরণ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে গণসংহতি আন্দোলনের মোহাম্মদপুর থানা।
লিখিত বক্তব্যে গণসংহতি আন্দোলনের মোহাম্মদপুর-আদাবর থানার সংগঠক ফাইয়াজ ফিরোজ জানান, ’৬৯, ’৭১ এবং ’৯০-এর গণ-অভ্যুত্থানের মতো মোহাম্মাদপুরের বাসিন্দারা ’২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানেও নিশ্চুপ-নিষ্ক্রিয় ছিলেন না। ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় ছাত্র-জনতার যে প্রতিরোধ, তার মধ্যে মোহাম্মদপুর ছিল গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম একটি স্পট। এখানে ছাত্র-জনতার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে কারফিউ ভেঙে ছাত্র-জনতার ঢল নামে রাজপথে। বছিলা সড়ক থেকে মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড হয়ে টাউন হল পর্যন্ত এবং রিং রোড থেকে শ্যামলী পর্যন্ত ছাত্র-জনতার ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ করা গিয়েছিল। কিন্তু ছাত্র-জনতার এই শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশ, র্যাব, ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা নিরস্ত্র মানুষের ওপর নির্বিচারে গুলি চালায়। এমনকি পুলিশও আন্দোলন দমাতে হেলিকপ্টার থেকে গুলি ছুড়েছে।
আন্দোলনে হামলাকারীদের নাম উল্লেখ করে ফাইয়াজ ফিরোজ বলেন, ‘আপনারা হয়তো ইতোমধ্যে গণমাধ্যমের ভিডিও ফুটেজে দেখে থাকবেন, ৩৩ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আসিফ আহমেদ ও সাবেক কমিশনার তারিকুজ্জামান রাজিব, ৩৪ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শাহীন এবং স্থানীয় সংসদ সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানকের এপিএস সরাসরি ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালিয়েছিল।’
ফিরোজ জানান, নিরস্ত্র জনগণের ওপর এই গুলিবর্ষণ এবং সশস্ত্র হামলার ফলে মোহাম্মাদপুর, আদাবর এবং বেড়িবাঁধসংলগ্ন এলাকায় অনেক মানুষ আহত, নিহত এবং নিখোঁজ হন। তালিকাভুক্তির ফলে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে এখন পর্যন্ত ২২ জন নিহত, ২২৭ জন আহত এবং দুজন নিখোঁজ ব্যক্তির তালিকা করা হয়েছে। এই তালিকা ডিজিটালাইজেশনের কাজও চলছে। আগামী সপ্তাহে সাপোর্টিং ডকুমেন্টসসহ এই তালিকা সামারি করে স্বরাষ্ট্র এবং স্বাস্থ্য উপদেষ্টার কাছে হস্তান্তর করা হবে।
এ সময় বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে সাত দফা দাবিও তুলে ধরেন ফাইয়াজ ফিরোজ। দাবিগুলো হলো এই হামলা ও হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সব ব্যক্তিকে বিচারের আওতায় নিয়ে আসা; নিহতদের শহিদের মর্যাদা দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া; নিখোঁজদের সন্ধান বের করার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া; আহতদের রাষ্ট্রীয় খরচে যথাযথ সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা; রাষ্ট্রীয়ভাবে নিহত, নিখোঁজ এবং গুরুতর আহতদের পরিবারের দায়িত্ব নেওয়া; শহিদদের স্মরণে মোহাম্মাদপুরের রাস্তাগুলোর নামকরণ করা; রাষ্ট্রীয় খরচে বেড়িবাঁধ তিন রাস্তার মোড়ে, মোহাম্মাদপুর বাসস্ট্যান্ডে, শিয়া মসজিদ মোড়ে এবং শ্যামলী মোড়ে শহিদদের নামের তালিকাসংবলিত স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপন করা।
গণসংহতি আন্দোলনের মোহাম্মদপুর-আদাবর থানার আরেক সংগঠক হাসান আল মেহেদীর সঞ্চালনায় স্মরণসভায় আরও উপস্থিত ছিলেন গণসংহতি আন্দোলের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, সাংবাদিক আশরাফ কায়সার, গণসংহতির রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য মনির উদ্দিন পাপ্পু, উত্তরের আহ্বায়ক মনিরুল হুদা বাবন, সদস্যসচিব মাহবুব উদ্দিন রতন, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বাচ্চু ভূঁইয়া। স্মরণসভায় গণ-অভ্যুত্থানে নিহতদের পরিবারের সদস্যরা স্মৃতিচারণা করেন এবং আহতরা তাদের ওপর হামলার বর্ণনা দেন।