বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চেতনা বাস্তবায়নে বাংলাদেশে নতুন রাজনৈতিক শক্তি বা দলের বিকাশের অপরিহার্যতা রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।
রবিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে ধানমন্ডিতে টিআইবির কার্যালয়ে ‘নতুন বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও সুশাসন: তরুণদের প্রত্যাশা’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘গতানুগতিক রাজনৈতিক দল দিয়ে নবচেতনার বাস্তবায়ন হবে না। নতুন বাংলাদেশের প্রত্যাশা পূরণ টেকসই করতে সেই শক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে, অন্যথায় তা সম্ভব না। কারণ বিগত ১৫ বছরে রাজনৈতিক বিভাজনের কারণে দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোকে অচল করে দেওয়া হয়েছে। ফলে রাষ্ট্রকাঠামো হয়ে উঠেছিল দুর্নীতিসহায়ক।’
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে যে নতুন বাংলাদেশ ও নতুন প্রত্যাশার সৃষ্টি হয়েছে, সেই চেতনার ধারক হিসেবে এখন নতুন রাজনৈতিক দলের অপরিহার্যতা রয়েছে। তবে নতুন সেই রাজনৈতিক দল কখন হবে, কীভাবে হবে, কারা নেতৃত্ব দেবে- সেটি আমাদের দেখার বিষয়। সেই প্ল্যাটফর্মে যার যার অবস্থান থেকে আমাদের সব মানুষকে সম্পৃক্ত হতে হবে। এ বিষয়ে নিজেদেরও দায়িত্ব নিতে হবে।’
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বিগত তিন সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘দুর্নীতিসহায়ক ও দুর্নীতিকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য রাষ্ট্রকাঠামো গড়ে তুলেছিল বিগত স্বৈরাচার সরকার। বিগত ১৫ বছরে রাজনৈতিক বিভাজনের কারণে দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোকে অচল করে দেওয়া হয়েছে। কর্তৃত্ববাদীর (আওয়ামী লীগ) পতনের ফলে নিজেদের যারা লাভবান মনে করছেন রাজনৈতিকভাবে বা অন্যভাবে তাদের প্রত্যেকে যদি এই চেতনা থেকে শিক্ষা লাভ না করেন, তাহলে সত্যিকার অর্থে আমাদের সামনে ঝুঁকি আছে।’
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘যারা সামনে নির্বাচনে অংশ নেবেন, ক্ষমতায় যাবেন, তারা যদি দলবাজি, দখলবাজি, চাঁদাবাজি করেন, যা ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে, তাহলে আমাদের অনেক শঙ্কা ও উদ্বেগের কারণ রয়েছে। বিষয়টি তাদের মনে রাখতে হবে। তা না হলে আপনারা নিজেদের ওই ফ্যাসিবাদের জায়গায় উপস্থাপন করবেন এবং একইভাবে আপনাদের পতন হবে। পাশাপাশি ওই সব ঘটনা থেকে সিভিল ও মিলিটারি আমলাতন্ত্র ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীরও শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত।’
আলোচনা সভায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ, আরিফ সোহেল, জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন, সদস্য আরিফুল ইসলাম আদীব, উপস্থাপক ও গণমাধ্যমকর্মী ফারাবি হাফিজ, তরুণ কথাসাহিত্যিক সাদাত হোসাইন উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় তারা বলেন, একাত্তরের স্বাধীনতা প্রকৃত স্বাধীনতা ছিল না। একাত্তরে যে স্বপ্ন নিয়ে লড়াই করেছিল, সেটি বাহাত্তরের সংবিধানে নস্যাৎ করে দেওয়া হয়েছে। মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে যত ধরনের পরিবর্তন করা দরকার তাই করার পরামর্শ তাদের। একই সঙ্গে গণমানুষের প্রত্যাশা পূরণে রাষ্ট্রের সব কাঠামোকে ঢেলে সাজানো এবং জনগণের আকাঙ্ক্ষার আলোকে প্রতিটি রাজনৈতিক দলকেও রূপান্তরের পক্ষে মত দেন তারা।