ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে ভারতে চলে যাওয়ার কয়েক দিন পর থেকে রবিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে সারা দেশে ১৬৬টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ১৪৭টিই হত্যা মামলা। এসব হত্যা মামলায় শেখ হাসিনাকে হুকুমের আসামি করা হয়েছে।
ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত, রাজধানীর বিভিন্ন থানা এবং ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতে মামলাগুলো দায়ের করেন আন্দোলন চলাকালে ভুক্তভোগীদের পরিবারের সদস্যরা।
মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়াও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের আসামি করা হয়েছে।
রবিবারও শেখ হাসিনার নামে ঢাকা ও চট্টগ্রামে দুটি মামলা হয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে বিক্ষোভসহ নানা কর্মসূচি চলাকালে গুলিতে ঢাকা টাইমস পত্রিকার সাংবাদিক মেহেদী হাসান নিহত হওয়ার ঘটনায় গতকাল সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৩৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শাহিন রেজার আদালতে মেহেদী হাসানের বাবা মোশাররফ হোসেন এই মামলার আবেদন করেন। এ মামলার অন্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান খান কামাল, আনিসুল হক, রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু, চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, হাবিবুর রহমান, হারুন অর রশীদ ও বিপ্লব কুমার সরকার।
এ ছাড়া গতকাল পদ্মা সেতু থেকে ‘ঠুস’ করে ফেলে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও নদীতে চুবিয়ে বর্তমান সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসকে হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জুয়েল দেবের আদালতে মামলা করেন নগর ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি সৌরভ প্রিয় পাল। আদালত বাদীর বক্তব্য গ্রহণ করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
এসব মামলায় এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার হওয়া প্রভাবশালী ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা ও বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী এ বি তাজুল ইসলাম, সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সাবেক পর্যটন ও বেসামরিক বিমান চলাচলমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, সাবেক জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন ও এ কে এম শহীদুল হক, সাবেক তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ, ছাত্রলীগের নেতা তানভীর হাসান সৈকত, ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান প্রমুখ।
আদালত ও থানা সূত্রে জানা গেছে, গত ১৩ আগস্ট ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এক ব্যবসায়ী বাদী হয়ে মামলার আবেদন করেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক দুই মন্ত্রীসহ কয়েকজনকে এই মামলায় আসামি করা হয়। অন্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক পুলিশের মহাপরিদর্শক আব্দুল্লাহ আল মামুন, যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার, সাবেক ডিএমপির ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদ ও ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানকে আসামি করা হয়েছে। গত ২৯ আগস্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গণহত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ৫২ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের হয়। গত ৫ আগস্ট রাজধানীর শ্যামলী রিং রোডে পুলিশের গুলিতে নিহত রিহানের বাবা গোলাম রাজ্জাক এ মামলার আবেদন করেন।
এ ছাড়া কোটা সংস্কার আন্দোলনে সাবেক তিন আইজিপিসহ ৮৮ জন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়েছে। আসামির তালিকায় রয়েছেন সাবেক তিন আইজিপি, সাবেক দুই ডিএমপি কমিশনার ও র্যাবের সাবেক দুই ডিজি, এসবি সাবেক প্রধান ও সিআইডির সাবেক প্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়া প্রমুখ। আসামির তালিকায় আছেন ১১ জন ডিআইজি ও ১৪ জন এসপি। তা ছাড়া ১৬ জন এডিসি, ৬ জন সহকারী কমিশনার (এসি) ১৩ জন ওসি, ৯ জন পুলিশ পরিদর্শক, ১৩ জন এসআই, ১ জন এএসআই ও ৩ জন পুলিশ কনস্টেবলকে মামলার এজাহারে আসামি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
এর মধ্যে সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে ৩৭টি, সাবেক আইজিপি শহীদুল হকের বিরুদ্ধে ৭টি, ডিবিপ্রধান হারুনের বিরুদ্ধে ৩৮টি এবং সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে ৩৩টি মামলা হয়েছে বলে জানা গেছে।