ক্যাপ্টেন রাজিবুল হক হিমেলের কাছে পিলখানায় বিডিআর হত্যাকাণ্ডের কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য থাকায় তাকে খুন করা হয়েছে বলে দাবি করেছে তার পরিবার।
মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করে ক্যাপ্টেন হিমেলের পরিবার।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে নিহতের মামা প্রফেসর মো. শফিকুল ইসলাম জানান, বিষয়টি তারা ভয়ে এতদিন প্রকাশ করতে পারেননি। তাদের দাবি, অবিলম্বে এই খুনের তদন্ত পুনরায় শুরু হোক। হিমেলের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হোক।
প্রফেসর মো. শফিকুল জানান, ক্যাপ্টেন রাজিবুল হক হিমেল বিএ ৬৯৫৭, ব্যাচ-৫১ (আরমার কোর) বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন কর্মকর্তা ছিলেন। তার পোস্টিং ছিল বগুড়ায়। ২০০৮ সালে অক্টোবরের দিকে হিমেল তার মাকে জানান, একটি বিষয়ে তাকে ফাঁসিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তবে সেটি খুবই গোপনীয়। এতে তার বিপদ হতে পারে। তাই তাকে দ্রুত দেশত্যাগ করতে হবে। তবে ওই বিপদটি কী তা বলেননি হিমেল। বিষয়টি জানানোর জন্য পরিবার থেকে চাপ দিলেও সেটি বলেননি। এর ৬ মাস পর ২০০৯-এর ২৫ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় মর্মান্তিক বিডিআর হত্যাকাণ্ড ঘটে।
তিনি আরও জানান, বিডিআর হত্যাকাণ্ডের কিছুদিন পর ৭ মার্চ হিমেল ঢাকার বাসা থেকে তার কর্মস্থল বগুড়ায় রওয়ানা হন। এর মধ্যে একটি ফোন এলে তিনি দ্রুত হোটেল রাজমনি ঈশা খাঁতে যান। সেখানে তাকে নির্মমভাবে অত্যাচার করে হত্যা করা হয়। তার চেহারা বিকৃত করে ফেলা হয়। গলা, হাত ও পায়ের রগ কেটে মুখ থেঁতলে দাঁত ভেঙে দেওয়া হয়। এর আগে এদিন সন্ধ্যা ৭টার দিকে হিমেলের মোবাইলফোন দিয়ে তার মাকে কল করা হয়। কল রিসিভ করলে অপরপ্রান্ত থেকে হিমেলের চিৎকার শোনেন তার মা ও ছোট বোন। পাশ থেকে কয়েকজনের আওয়াজ আসছিল ‘বল, বল’ শব্দে। এমন চিৎকার আর কান্না শুনে ভেঙে পড়েন পরিবারের সদস্যরা। পরে খবর পেয়ে তার পরিবারের সদস্যরা হোটেল রাজমনি ঈশা খাঁতে যান।
প্রফেসর শফিকুল জানান, পরিবারের সদস্যরা হোটেলের লবির পাশে কার্নিশে পড়ে থাকা রাজিবকে শনাক্ত করেন। তখন একজন ক্যাপ্টেন ও একজন মেজর পরিচয়দানকারী হিমেলের মাকে বলেন, ‘একটি মেয়ের কারণে হিমেল আত্মহত্যা করেছেন- মিডিয়ার কাছে আপনি এই কথা বলবেন।’ বারবার তারা একই কথা বলতে বলেছিলেন। এই হত্যাকাণ্ডের কয়েক মাস পর তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির দুজন হিমেলের মায়ের কাছে বলেন, ‘হিমেল আত্মহত্যা করেননি, তাকে হত্যা করা হয়েছে।’
তিনি আরও জানান, সম্প্রতি হিমেলের একজন সহকর্মী সাংবাদিককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘বিডিআর বিদ্রোহের গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য জেনে যান হিমেল। সেই তথ্য তার কয়েকজন সহকর্মীর কাছে ই-মেইলে শেয়ার করেন তিনি। যার কারণে তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হতে পারে।’ সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, হিমেলের মা শিগগিরই আমেরিকা থেকে দেশে ফিরবেন এবং আইনি লড়াইয়ে অবতীর্ণ হবেন। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন হিমেলের মামা প্রফেসর মো. রোকনুজ্জামান, মামা আব্দুস সবুর রাজা, খালু শওকত আলী প্রধান ও খালা ফেরদৌসী পারভীন প্রমুখ।
আল-আমীন/এমএ/