অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়নে সহায়তা দেওয়ার লক্ষ্যে বিশ্বব্যাংক চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের জন্য ঋণ-সহায়তা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদৌলায়ে সেক এ প্রতিশ্রুতি দেন।
তিনি বলেন, ‘চলতি অর্থবছরে তার সংস্থা বাংলাদেশের জন্য ২০০ কোটি মার্কিন ডলারের নতুন অর্থায়ন করতে পারবে। এই অর্থ অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়ন, বন্যা মোকাবিলা, দূষণ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে বায়ুর মান বৃদ্ধি এবং স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে সহায়তা করা হবে।’
জরুরিভাবে আর্থিক সহায়তার প্রয়োজন রয়েছে- এমন ক্ষেত্রে সহায়তা করা হবে উল্লেখ করে আবদৌলায়ে সেক বলেন, ‘আমরা যত দ্রুত সম্ভব এবং যতটা সম্ভব আপনাদের সহায়তা করতে চাই।’
নতুন ঋণ-সহায়তার প্রতিশ্রুতির পাশাপাশি প্রধান উপদেষ্টার অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে সংস্থাটি সরকারের চলমান প্রকল্পে অতিরিক্ত ১০০ কোটি ডলারের তহবিল পুনর্বিন্যাসের কথা বলেছে।
বিশ্বব্যাংকের আবাসিক প্রধান জানান, অতিরিক্ত ঋণ দেওয়ার মাধ্যমে বিশ্বব্যাংক এবারের অর্থবছরে বাংলাদেশকে সহজ শর্তের ঋণ এবং মঞ্জুরি মিলিয়ে প্রায় ৩০০ কোটি মার্কিন ডলার দেবে, যার মাধ্যমে বিদ্যমান প্রকল্পগুলোর তহবিল পুনর্বিন্যাসও করা হবে।
সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়ন তরুণ সম্প্রদায় এবং দেশটির জন্য ‘মহৎ কাজ’ হবে উল্লেখ করে বিশ্বব্যাংকের আবাসিক প্রধান বলেন, প্রতিবছর যে ২০ লাখ মানুষ শ্রমবাজারে প্রবেশ করছেন, তারাও এর সুফল পাবেন।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরক্টেরকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘১৫ বছরের অপশাসন থেকে ঘুরে দাঁড়াতে আমরা যে নতুন যাত্রার সূচনা করেছি, তাকে এগিয়ে নিতে এবং সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়নকে কেন্দ্র করে বিশ্বব্যাংকের ঋণ তহবিলগুলোর শর্তে নমনীয় হতে হবে।’
তিনি এই বহুপক্ষীয় ঋণ প্রদানকারী সংস্থাকে উদ্দেশ করে আরও বলেন, ‘আমাদের ধ্বংসাবশেষ থেকে নতুন কাঠামো তৈরি করতে হচ্ছে। আমাদের এখন বড় ধাক্কা দেওয়ার প্রয়োজন এবং ছাত্রদের যে স্বপ্ন রয়েছে তা পূরণে মনোযোগ দিতে হবে।’
ড. ইউনূস বলেন, ‘আমি আপনাদের বলব আমাদের সাহায্য করুন। আমাদের টিমের অংশীদার হোন।’
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, গত ১৫ বছরে শেখ হাসিনার শাসন আমলে দুর্নীতিবাজরা অর্থ আত্মসাৎ করে বিদেশে কয়েক বিলিয়ন ডলার পাচার করেছেন। পাচার হওয়া এসব অর্থ ফিরিয়ে আনতে তিনি বিশ্বব্যাংককে কারিগরি সহায়তা দেওয়ার আহ্বান জানান।
বিশ্বব্যাংকের কাছে পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার মতো প্রযুক্তি রয়েছে উল্লেখ করে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ বলেন, দেশে দুর্নীতিকে শূন্যের পর্যায়ে নামিয়ে আনতে দক্ষতার প্রয়োজন।
বিশ্বব্যাংকের আবাসিক প্রধান বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে সহায়তা করতে সম্মত হন। তিনি বলেন, ‘আমরা আপনাদের সাহায্য করতে পারলে খুশি হব।’
আবদৌলায়ে সেক জুলাই-আগস্টে ছাত্র আন্দোলনের শহিদদের প্রতি সমবেদনা জানান। তিনি ঢাকার দেয়ালে তরুণদের আঁকা বর্ণিল গ্রাফিতি ও ম্যুরাল দেখে মুগ্ধ হয়েছেন উল্লেখ করে বলেন, ‘৩০ বছরের চাকরিজীবনে অন্য কোথাও এমন দেখিনি।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের ছাত্রদের ক্ষমতায়ন করতে হবে।’