ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার পতনের পর অনেকেই দেশ ত্যাগ করেছেন। সাম্প্রতিক সময়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ভারতে অবস্থান করছেন, এমন সংবাদ গণমাধ্যমে বের হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের নেতারা কীভাবে ভারতে গেলেন, তা জানেন না বলে জানিয়েছেন বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী।
এ বিষয়ে আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বলেন, ‘দেশ থেকে যারা পালিয়েছেন, তাদের ব্যাপারে শুধুই কী বিজিবিই দায়বদ্ধ? কোন সীমান্ত দিয়ে কে গেলেন তা অবশ্যই তদন্ত করা হবে। এ বিষয়ে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।’
তিনি বলেন, ‘আমরা সীমান্তে পিঠ দেখাব না। সীমান্ত রক্ষার প্রশ্নে বিএসএফকে কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হবে না।’
বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর পিলখানায় বিজিবি সদর দপ্তরের কনফারেন্স হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিজিবির মহাপরিচালক এসব কথা বলেন। ৫ আগস্টের পর বিজিবির প্রধান এই প্রথম সংবাদ সম্মেলনে অত্যন্ত খোলাখুলি কথা বলেন এবং সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।
বিজিবির মহাপরিচালক বলেন, ‘৬ আগস্ট থেকে যে স্ক্রল দেখেছেন, সীমান্ত পথে পালানো রোধে বিজিবিকে সহায়তা করুন। এই কাজ, নির্দেশনা কেউ বিজিবিকে দেয়নি। নিজ উদ্যোগে করেছি। তখন থেকে আমরা চেষ্টা করছি। তথ্য দেওয়ার যেসব সংস্থা আছে তারাও যদি তথ্য দেন, তাহলে কাজটা সহজ হয়।’
আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বলেন, ‘সবাই কি পালিয়ে গেছে? আমার মনে হয় না। জনবহুল এই দেশে কেউ কেউ আত্মগোপনে আছে। মাদক কারবারি বদিকে ধরার জন্য বেশ কয়েকটি অভিযান পরিচালনা করেছি। শোনা গেল, তিনি ট্রলারে মায়ানমার পালিয়ে গেছেন। কিন্তু গ্রেপ্তার হলেন সীতাকুণ্ড এলাকা থেকে। এ রকম একদিকে যাওয়ার আওয়াজ দিয়ে অন্যদিক থেকে পালানোর চেষ্টা করছে অনেকে।’
তিনি আরও বলেন, ‘কিছুদিন আগে বিএসএফ সদস্য একজন কৃষককে ধাওয়া করলে বাংলাদেশের ভেতরে প্রবেশ করে। এই ক্ষেত্রে ওই বিএসএফ সদস্য ভুল স্বীকার করে তাহলে কিছু নিয়মনীতি আছে। সে কোনো ধরনের ক্ষতিসাধন করবে না মর্মে জানায়, তাহলে বিওপি পর্যায়ে পতাকা বৈঠক করে ফেরত দেওয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু বিষয়টি আমি সিরিয়াসলি নিয়েছি। কারণ কিছুদিন আগে কুলাউড়ায় স্বর্ণা দাস, ঠাকুরগাঁওয়ে জয়ন্ত মারা গেছেন, যারা সাবালক নয়। তাহলে তাদের হত্যা করতে হবে কেন? তারা তো নিরস্ত্রও ছিল। ওই হত্যাকাণ্ড আমরা মেনে নিতে পারিনি।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে বিজিবিপ্রধান বলেন, ‘সীমান্তে যারা মাইনোরিটি আছে তারা চলে যেতে পারে। এই ধরনের অপপ্রচারণা অতিরঞ্জিতভাবে প্রচার করা হচ্ছিল। সে সময় বিএসএফ তাদের ক্যাম্পগুলোতে জনবল বাড়িয়েছে। তাদের অত্যন্ত সতর্ক অবস্থায় দেখা গেছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তাদের সেনাবাহিনী আসার কথা নয়। কিন্তু সে সময়ে আমরা ভারতীয় সেনাবাহিনীর গাড়ির মুভমেন্ট পর্যন্ত দেখেছি, যেখানে তাদের আসার কথা না। হয়তো তারা শঙ্কায় ছিল যে বড় সংখ্যক একটা অংশ ভারতে যায় কি না। আমরা এটার লিখিত ও মৌখিক প্রতিবাদ করেছি। পরে ডিজি পর্যায়ে বিএসএফের সঙ্গে যে মিটিং হবে, সেখানে বিষয়টি উত্থাপন করা হবে।’
অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যদি বিজিবির কোনো সদস্য অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করে থাকে, তাহলে তার বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’