গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: পিআইডি
গত ১৫ বছরে গুমের ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ জানিয়ে আগামী ডিসেম্বরেই প্রতিবেদন জমা দেবে গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশন। শনিবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে প্রধান উপদেষ্টা ও উপদেষ্টাদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ কথা জানিয়েছে কমিশন।
শনিবার (৯ নভেম্বর) সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়।
এ সময় কমিশনকে সব ধরনের সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, ‘কমিশনের যা কিছু প্রয়োজন, তার সব দেব ও সব ধরনের সহায়তা করব।’ আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, ‘সরকার প্রয়োজনে কমিশনের মেয়াদ ২ বছর বাড়াবে ও ক্ষতিগ্রস্তদের সুরক্ষার জন্য আইনি ব্যবস্থা তৈরিসহ প্রয়োজনীয় আদেশ জারি করবে।’ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘কমিশন অভিযুক্তদের তালিকা দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
বৈঠকে কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘৩১ অক্টোবর পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার ৬০০টি অভিযোগ পাওয়া গেছে। ৪০০টি অভিযোগ যাচাই-বাছাই করা হয়েছে এবং ১৪০ অভিযোগকারীর সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে। ঢাকা ও এর আশপাশে ৮টি আয়নাঘর খুঁজে পাওয়া গেছে।’
কমিশন সদস্যরা বলেছেন, ‘এ বিষয়ে আরও কাজ করার আগে তারা ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সরকারকে অগ্রগতি প্রতিবেদন দেবেন। অভিযোগের সংখ্যা দেখে আমরা আশ্চর্য হয়ে গেছি। এ পর্যন্ত ১ হাজার ৬ শরও বেশি অভিযোগ এসেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের প্রতিশোধের ভয়ে অনেকে এখনো কমিশনে আসছেন না। এ থেকে আমরা বুঝতে পারি যে, ঘটনার সংখ্যা এখন পর্যন্ত যতটা রিপোর্ট করা হয়েছে তার চেয়ে অনেক বেশি। গুমের সংখ্যা কমপক্ষে ৩ হাজার ৫০০ হতে পারে। কারা অপরাধ করেছে এবং কারা তাদের নির্দেশ দিয়েছে তা চিহ্নিত করার জন্য কাজ করছে কমিশন। ভুক্তভোগীদের অনেকেই কারাগারে রয়েছেন, কেউ কেউ মৃত্যুদণ্ডের মুখোমুখি হয়েছেন, কারণ তাদের গ্রেপ্তার দেখানোর পর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে বাধ্য করা হয়েছিল। কিছু গুমের শিকার ব্যক্তি প্রতিবেশী ভারতের কারাগারে বন্দি বলে ধারণা করা হচ্ছে। কমিশনের সদস্যরা গোপন স্থানের আলামত রক্ষার জন্য সরকারের সহায়তা চেয়েছেন, যেখানে ভিকটিমদের লুকিয়ে রাখা হয়েছিল। অনেক ভুক্তভোগী আমাদের বলেছেন, তারা বছরের পর বছর সূর্য দেখেননি। যখন সকালের নাস্তা পরিবেশন করা হয় তখনই কেবল তারা উপলব্ধি করতে পারেন যে, এটি একটি নতুন দিন।’
অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিদেশ সফরের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ ও সম্ভব হলে তাদের পাসপোর্ট বাতিল করার জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়।
বৈঠকে উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, নূরজাহান বেগম, আদিলুর রহমান খান, এম সাখাওয়াত হোসেন, নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) আবদুল হাফিজ, মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আবদুর রশিদ এবং প্রধান উপদেষ্টার মুখ্যসচিব মো. সিরাজ উদ্দিন মিয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।