ঈদুল আজহার ছুটি কাটিয়ে ধীরে ধীরে ঢাকায় ফিরতে শুরু করেছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। রাজধানীর চার আন্তজেলা বাস টার্মিনাল ও ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনে এখনো ঢাকায় ফিরে আসা যাত্রীদের ঢল নামেনি।
বুধবার (১১ জুন) সকালে বিভিন্ন জেলা থেকে যারা বাসে ঢাকায় এসেছেন, তারা স্বস্তির যাত্রার কথা বলেছেন খবরের কাগজকে। তবে রাজশাহীর নন্দনগাছি স্টেশনে রেলপথ অবরোধের ঘটনায় বুধবার উত্তরবঙ্গ থেকে আসা ট্রেনগুলোর শিডিউল বিপর্যয় ঘটে। এতে বিপাকে পড়েন ঢাকামুখী হাজারও যাত্রী।
ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনের কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্য অনুসারে, বুধবার সকাল থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ২৮টি আন্তনগর ট্রেন যাত্রী নিয়ে বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকায় এসেছে। পূর্বাঞ্চল রুটের শিডিউল ঠিক থাকলেও পশ্চিমাঞ্চল রুটের ট্রেনগুলো শিডিউল বিপর্যয়ে পড়ে। এতে ভোগান্তি পোহাতে হয় ঈদ শেষে ঢাকায় ফেরা যাত্রীদের।
ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনের মাস্টার আনোয়ার হোসেন খবরের কাগজকে, ‘রাজশাহী থেকে ছেড়ে আসা বিরতিহীন বনলতা এক্সপ্রেস দুই ঘণ্টা ১৫ মিনিট দেরিতে বুধবার দুপুর পৌনে ২টায় ঢাকার কমলাপুর স্টেশনে এসে পৌঁছেছে। স্বাভাবিক সময়সূচি অনুযায়ী ট্রেনটি ঢাকায় পৌঁছানোর কথা ছিল বেলা ১১টা ৩৫ মিনিটে। পরে দ্রুত যাত্রী নামিয়ে দুপুর ২টা ১৫ মিনিটের দিকে বনলতা এক্সপ্রেস রাজশাহীর উদ্দেশে আবার ছেড়ে গেছে।
রাজশাহী থেকে সকালে ছেড়ে আসা সিল্কসিটি এক্সপ্রেসও নির্ধারিত সময়ের পৌনে ২ ঘণ্টা পর ঢাকায় আসে। ট্রেনটি বিকেল আড়াইটায় কমলাপুর ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও ছাড়ে বিকেল ৩টা ৫০ মিনিটে।
রাজশাহীর মধুমতি এক্সপ্রেসও প্রায় আড়াই ঘণ্টা দেরিতে কমলাপুরে আসে। ট্রেনটি বিকেল ৩টায় রাজশাহীর উদ্দেশে যাত্রার কথা থাকলেও তা ছাড়ে বিকেল ৫টার পরে।
পঞ্চগড় থেকে ঢাকা অভিমুখী দ্রুতযান এক্সপ্রেস বিকেল ৪টা ৪৫ মিনিটের স্থলে কমলাপুর ছাড়ে সন্ধ্যা ৬টার পরে। রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে লালমনিরহাটগামী লালমনি এক্সপ্রেস রাত ১১টার দিকে ছেড়ে যায়।
ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় নিয়ে ঢাকা রেল স্টেশন মাস্টার আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘রাজশাহীর চারঘাটের নন্দনগাছী রেলওয়ে স্টেশনের চারটি আন্তনগর ট্রেনের স্টপেজ (যাত্রাবিরতি) ও স্টেশন সংস্কারের দাবিতে রেলপথ অবরোধ করেন স্থানীয় লোকজন। তারা প্রায় দুই ঘণ্টা অবরোধ করে রাখেন। এতে বনলতা, মধুমতি, সিল্কসিটি ও সাগরদাঁড়ি ট্রেন আটকা পড়ে। এ কারণেই শিডিউল বিপর্যয় হয়েছে।’
করোনা সংক্রমণের আশঙ্কায় বাংলাদেশ রেলওয়ে ফিরতি পথে যাত্রীদের মাস্ক পরার অনুরোধ জানিয়েছে। তবে ফিরতি যাত্রায় এ নিয়ে কড়াকড়ি দেখা গেল না কোনো ট্রেনে। আন্তনগর, কমিউটার কোনো ট্রেনের যাত্রীদের মুখে মাস্ক দেখা যায়নি। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষও মাস্ক পরতে বা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়ে যাত্রীদের নির্দেশনা দেয়নি। এ নিয়ে রেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
গতকাল দুপুরে সায়েদাবাদ আন্তজেলা বাস টার্মিনালে দেখা গেছে, ফিরতি যাত্রার বাসে যাত্রী তুলনামূলক কম। বেশ কয়েকটি বাস কাউন্টারে কথা বলে জানা যায়, ঈদের ছুটির এখনো তিন দিন বাকি থাকায় অধিকাংশ মানুষ ফিরেননি ঢাকায়। তারা শনিবার রাত বা রবিবার ভোরে ফিরবেন ঢাকায়। ফিরতি যাত্রায় অনেকে অনলাইনে বাসের টিকিট রিজার্ভ করে রেখেছেন বলে জানান পরিবহন কর্মীরা।
জানতে চাইলে হানিফ পরিবহন, গোল্ডেন লাইনের কাউন্টার ব্যবস্থাপকরা বলেন, সকালের দিকে ঢাকায় ফিরে আসা যাত্রীদের চাপ কিছুটা বেশি থাকলেও দুপুর গড়াতে তা কমে আসে। তবে আগামী শুক্রবার সকাল থেকেই সব বাস যাত্রী পূর্ণ করে ঢাকায় ফিরবে। আগামী শনিবার অনেক বেসরকারি অফিস খুলবে। রবিবার থেকে সরকারি অফিস-আদালতের কার্যক্রম পুরোদমে চালু হবে।
সায়েদাবাদে কথা হয় পটুয়াখালী থেকে আসা যাত্রী হাফিজুর রহমানের সঙ্গে।
তিনি বলেন, ‘যাত্রাপথে তেমন ভোগান্তি পোহাতে হয়নি। খুব সকালে রওনা হয়ে দুপুরের মধ্যে ঢাকায় আসতে পেরেছি, এটা স্বস্তিদায়ক। পথে গাড়ির চাপও তেমন নেই।’