ঢাকার কালুনগর, জিরানি, মাণ্ডা, শ্যামপুর খাল উদ্ধারে ঢাকার দক্ষিণ সিটি করপোরেশন প্রায় ৯০০ কোটি টাকার প্রকল্প নিলেও তার অগ্রগতি খুব সামান্য। নগর পরিকল্পনাবিদদের এক সভায় জানানো হয়েছে, কামরাঙ্গীরচরে আদি বুড়িগঙ্গা চ্যানেল আবার ভরাট হয়ে যাওয়ায় সরকারের ৩০ কোটি টাকা গচ্চা যাচ্ছে।
মঙ্গলবার (২ জুন) দুপুরে ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি) ‘আগাম বর্ষায় নগর এলাকায় জলাবদ্ধতা: আইপিডির পর্যবেক্ষণ’ শীর্ষক ভার্চুয়াল সেমিনারের আয়োজন করে। এতে দেশের নানা প্রান্ত থেকে নগর অঞ্চল পরিকল্পনাবিদরা যোগ দেন।
অনুষ্ঠানের মূল প্রবন্ধে আইপিডি পরিচালক অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ‘ঢাকা শহরেও খাল উদ্ধারে কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিপরীতে আদি বুড়িগঙ্গা চ্যানেল আবার ভরাট হয়ে যাওয়ায় প্রকল্পের ৩০ কোটি টাকা জলে গেছে। কালুনগর, জিরানি, মাণ্ডা, শ্যামপুর খাল নিয়ে প্রায় ৯০০ কোটি টাকার পরিকল্পনার অগ্রগতি খুবই সামান্য।’
জলাশয় দখলের মহোৎসব এখনো অব্যাহত রয়েছে।
অধ্যাপক আদিল বলেন, ‘পরিকল্পনা ও আইনকানুনকে তোয়াক্কা না করে নিচু এলাকা ও জলাভূমিতে পরিকল্পনাহীন ও স্বেচ্ছাচারী আবাসনের কারণে বিভিন্ন এলাকার পানি নামতে পারছে না। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর খাল-জলাশয় দখলের কারণে কাউকে কারাগারে যেতে হয়নি। পরিবেশগত হত্যার মতো বিষয়কে যেন দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে। খাল দখলদাররা এখন আরও প্রবল প্রতাপে অনেক জায়গায় ভিন্ন চরিত্রে ফিরে এসেছে।’
সম্প্রতি অতিবৃষ্টিতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার কারণ হিসেবে তিনি অকার্যকর স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, ‘মেয়র-কাউন্সিলরের অনুপস্থিতির কারণেও অনেক নগর এলাকায় বর্ষার সঠিক প্রস্তুতির অভাব ছিল। অনেক নগরীতেই নিম্নবিত্ত, প্রান্তিক ও নগরের প্রান্তসীমায় বাস করা নাগরিকরা জলাবদ্ধতায় পর্যুদস্ত হয়েছেন। জলাবদ্ধতার ক্ষেত্রেও নিম্ন আয়ের লোকরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন, আছে এলাকাভিত্তিক বৈষম্যও। নগরীর জলাবদ্ধতা কমাতে রাজনৈতিক ঐকমত্য প্রয়োজন।’
আইপিডির অনুষ্ঠানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. ফরহাদুর রেজা, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. শাহজালাল মিশুক, জুরাইনের পরিবেশ ও সামাজিক আন্দোলনের নেতা মিজানুর রহমান মিজান, পরিবেশ বিশেষজ্ঞ আসিফ ইকবাল, ময়মনসিংহের পরিকল্পনাবিদ ফাহিম আহম্মেদ মণ্ডল, বরিশালের পরিকল্পনাবিদ আব্দুল আহাদ নাফিস, রংপুরের পরিকল্পনাবিদ মো. রেদওয়ানুর রহমান ভার্চুয়াল সেমিনারে যুক্ত ছিলেন।
নগর এলাকায় জলাবদ্ধতা কমাতে আইপিডি বেশ কয়েকটি সুপারিশ করেছে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- পানিপ্রবাহের পথ নিরবচ্ছিন্ন ও নির্বিঘ্ন রাখা, উন্মুক্ত পদ্ধতিতে খালের ব্যবহার, নগর এলাকায় সবুজ এলাকা ২৫ শতাংশ ও জলাশয়-জলাধার এলাকা ১০-১৫ শতাংশ এবং কনক্রিট এলাকা সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ রাখা। জিআইএস-ওয়াটার মডেলিংসহ আধুনিক ড্রেনেজ ও নগর পরিকল্পনার সমন্বয়ের পরামর্শ এসেছে এ সভা থেকে।