ঈদুল আজহা উপলক্ষে রেলযাত্রার ষষ্ঠ দিনে কমলাপুরে ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনে যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় দেখা যাচ্ছে। ভিড় সামলাতে গিয়ে স্টেশনের সব নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।
বৃহস্পতিবার (৫ জুন) ভোর থেকে স্টেশনে এ দৃশ্য দেখা যায়।
রেলওয়ের নিরাপত্তা কর্মী (আরএনবি), রেলওয়ে পুলিশ (জিআরপি), ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি), র্যাব সদস্যদের যথেষ্ট উপস্থিতি থাকলেও তারা উচ্ছৃঙ্খল যাত্রীদের সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন।
যাত্রীদের টিকিট পরীক্ষার জন্য তিন স্তরের তল্লাশি ব্যবস্থা থাকলেও বৃহস্পতিবার সকালে তা অনেকটাই অকার্যকর হয়ে পড়েছে।
ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনে ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা অনেক পরিশ্রম করেও বিনা টিকিটের যাত্রী ঠেকাতে পারছেন না। তারা বেশ কয়েকজন যাত্রীকে বিনা টিকিটে ভ্রমণের দায়ে জরিমানা করলেও তাদের যাত্রা বাতিল হয়নি।
রেলের কর্মীদের উৎকোচ দিয়ে তারা ট্রেনে উঠে পড়েছেন। জরিমানার পরে কেউ কেউ আবার ট্রেনের ছাদেও উঠে গেছেন।
বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত কমলাপুর থেকে ২৩টি আন্তঃনগর ও কমিউটার ট্রেন ছেড়ে গেছে।
রেলের নিরাপত্তা কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নিষেধ থাকা সত্ত্বেও প্রতিটি ট্রেনের পাওয়ার কার ও বুফেকারে ঠেসে যাত্রী তোলা হয়েছে। মেইল, কমিউটার, আন্তঃনগর- সব ট্রেনের ছাদে যাত্রী উঠেছেন। এদের সবাই বিনা টিকিটের যাত্রী।
জিআরপি পুলিশের দলগুলো যাত্রীদের নামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে উচ্ছৃঙ্খল যাত্রীরা উল্টো তাদের দিকে তেড়ে এসেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বৃহস্পতিবার ভোর ৬টায় জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জগামী দেওয়ানগঞ্জ কমিউটার, সাড়ে ৬টার দিকে নীলফামারীর চিলাহাটিগামী নীলসাগর এক্সপ্রেস, সকাল ৭টায় সিলেটগামী পারাবত এক্সপ্রেস ও সাড়ে ১১টায় জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস, সকাল সাড়ে ১০টায় পঞ্চগড়গামী পঞ্চগড় এক্সপ্রেস এবং পরে লালমনিরহাটগামী বুড়িমারী এক্সপ্রেস, ভুয়াপুরগামী জামালপুর এক্সপ্রেস, রংপুরগামী রংপুর এক্সপ্রেস, কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনগুলো অন্তত ৩০ মিনিট দেরিতে প্ল্যাটফর্ম ছেড়েছে বলে জানা গেছে।
যাত্রীদের কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন, বগির ফ্যান ঘুরছে না। ওয়াশরুমের বিকট গন্ধে দরজার পাশের সিটের যাত্রীরা নাকে রুমাল দিয়েও টিকতে পারছেন না। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বগিতে এসি নষ্ট হয়ে আছে।
আবার বিনা টিকিট বা ভুয়া টিকিটের যাত্রী আসন দখল করায় ট্রেনের কামরায় হাতাহাতির খবরও পাওয়া গেছে।
এমন পরিস্থিতিতে অসহায়ত্ব প্রকাশ করে ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনের ব্যবস্থাপক মো. সাজেদুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, ‘কমলাপুরে যে যাত্রী চাপ রয়েছে, ট্রেনগুলো ওয়াশপিটে নিয়ে ওয়াশ করে লোকোশেডে গিয়ে প্রতিটি বগি পরীক্ষা করে প্ল্যাটফর্মে দিতে গেলে অনেক সময় লেগে যাবে। তাই কিছুটা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে ট্রেনগুলো ছেড়ে দিতে হচ্ছে। এতে আমার কিছুটা ত্রুটি থেকে যায়।’
অভিযোগ রয়েছে, মেইল, কমিউটার ট্রেনে একটি আসনের বিপরীতে চারটি আসনের টিকিট কাটতে বাধ্য করা হচ্ছে যাত্রীদের।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘এমন কোনো অভিযোগ আমার কাছে আসেনি। আর ভ্রাম্যমাণ আদালতেও এমন কেউ এসে কোনো অভিযোগ জানাননি।’
রেলের স্ট্যান্ডিং টিকিটের যাত্রীদের নিয়ে তিনি বলেন, ‘স্ট্যান্ডিং টিকিটের যাত্রীদের বিভিন্ন ট্রেনে যাওয়ার কথা। কিন্তু তারা প্ল্যাটফর্মে যে ট্রেনটি প্রথমে পাচ্ছেন, সে ট্রেনটিতে উঠার চেষ্টা করছেন। এতে একটি ট্রেনের ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন করতে হচ্ছে। ট্রেনের ছাদে ভ্রমণ না করতে আমরা যতই অনুরোধ করি না কেন, যাত্রীরা তা শুনবেন না। ছাদে ভ্রমণ ঠেকাতে আমাদের যথেষ্ট প্রস্তুতি থাকলেও তা শতভাগ সফল হয়নি। এখানে আমাদের ব্যর্থতা থেকেই যায়।’
সাজেদুল জানান, আজ (বৃহস্পতিবার) ঢাকা রেলওয়ে স্টেশন থেকে সারা দিনে ৬৩টি আন্তঃনগর ও কমিউটার ট্রেন ছেড়ে যাবে।
ঈদযাত্রায় প্রতিদিন গড়ে ৬৫ হাজার যাত্রী রেলপথে বাড়ি ফিরছেন বলে জানান তিনি।
এদিকে, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বেলা সোয়া ১১টার দিকে ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনে আসেন। এ সময় তিনি রেলযাত্রার সার্বিক চিত্র দেখে কিছুটা অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তখন অনেক যাত্রী তাকে রেলপথের দুর্ভোগের কথা জানান।
পরে ব্রিফিংয়ে সময় মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, আজ সবচেয়ে বড় অভিযোগ হলো রেলের ছাদে কেন এত মানুষ ভ্রমণ করবেন। আমরা রেলপথ মন্ত্রণালয় থেকে সব ব্যবস্থা নিয়েছিলাম ছাদে যাত্রী উঠা ঠেকাতে। কিন্তু ঈদযাত্রার সময় বিষয়টা মানবিকও কিছুটা। কোনো এক যাত্রী ছাদে উঠে নামতে চাইলেন না। আমরা তাকে নির্যাতন করে নামিয়ে দিলাম। তখন তো আপনারাই (সাংবাদিকরা) নিউজ করবেন।
এবার ঈদযাত্রায় রেলওয়েতে ৪০টি অতিরিক্ত কোচ বিভিন্ন ট্রেনে সংযুক্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি পাঁচ জোড়া ঈদ স্পেশাল ট্রেনও পরিচালনা করা হচ্ছে৷
তবুও রেলযাত্রায় যাত্রীদের অস্বস্তির প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, এবারের ঈদযাত্রা শতভাগ স্বস্তির হয়েছে এ কথা বলা যাবে না। রেলে লোকোমোটিভ নেই, কোচ নেই। তার পরও আমরা ট্রেনের বগির সংখ্যা বাড়িয়েছি। সামনে আমাদের আর কিছু বগি, লোকো আসবে। সামনের ঈদে হয়তো আরও ভাল সেবা দিতে পারবে রেলওয়ে।
জয়ন্ত/পপি/