ঢাকা ২২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, শনিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪

ডেঙ্গুতে চলতি বছর ৩০০ জনের প্রাণহানি, একদিনে আরও ৩ মৃত্যু

প্রকাশ: ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৪৫ পিএম
ডেঙ্গুতে চলতি বছর ৩০০ জনের প্রাণহানি, একদিনে আরও ৩ মৃত্যু

ডেঙ্গু জ্বরে গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে আরও তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গুতে ৩০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার (১ নভেম্বর) সন্ধ্যায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোল রুম থেকে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে আরও ৩৮২ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে বরিশাল বিভাগের ১২ জন, চট্টগ্রামে ৬৩, ঢাকা বিভাগে ৩৫, ঢাকা উত্তরে ১৪৮, ঢাকা দক্ষিণে ২৮, খুলনা বিভাগে ৪৬, ময়মনসিংহ বিভাগে ২৫, রাজশাহী বিভাগে ২০ এবং সিলেট বিভাগের ৫ জন রয়েছেন। এ নিয়ে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৬২ হাজার ১৯৯ জনে দাঁড়িয়েছে।

গত ২৪ ঘণ্টায় মৃতদের মধ্যে দুজন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের এবং অন্যজন ময়মনসিংহ জেলার। একই সময়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন ৪৬২ জন। এ নিয়ে ৫৭ হাজার ৯৩৮ জন ছাড়পত্র পেয়েছেন।

 

স্থানীয় সরকার বিভাগ সংস্কারে মতামত চেয়েছে কমিশন

প্রকাশ: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৫৩ এএম
আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৫৫ এএম
স্থানীয় সরকার বিভাগ সংস্কারে মতামত চেয়েছে কমিশন
স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন

স্থানীয় সরকার বিভাগ সংস্কারে মতামত চেয়েছে কমিশন। এই কমিশন তাদের ওয়েব পেজ, ফেসবুক, ইমেইল ও মোবাইল ফোনে রাষ্ট্রের সব পর্যায়ের জনগণের মতামত ও সুপারিশ চেয়েছে।

গত ৩ ডিসেম্বর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন জানায়, রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের (এনআইএলজি) কার্যালয়ে ইতোমধ্যে কমিশনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, স্থানীয় সরকার কমিশনে মতামত ও সুপারিশ জানানোর জন্য জনগনের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে। কমিশনকে যে কোনো ব্যক্তি ও সংগঠন নিম্নোল্লিখিত সামাজিক মাধ্যম ও মোবাইল ফোনে মতামত ও সুপারিশ দিতে সবার প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানানো হচ্ছে।

কমিশনের ওয়েব পেইজ www.lgrc.gov.bd, ফেসবুক facebook.com/lgrc24, ইমেইল [email protected], মোবাইল ০১৩২৫ ২১২ ৪৭৫।

অমিয়/

বাংলাদেশিদের সেবা দেবেন ত্রিপুরার হোটেলমালিকরা

প্রকাশ: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৪৮ পিএম
বাংলাদেশিদের সেবা দেবেন ত্রিপুরার হোটেলমালিকরা
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ থেকে আসা কোনো ব্যক্তিকে ত্রিপুরার হোটেলে রাখা হবে না- এমন সিদ্ধান্ত ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই শিথিল করা হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজ্যের কিছু হোটেল ব্যবসায়ী ও কর্মচারী জানিয়েছেন, ‘বড্ড বাড়াবাড়ি সিদ্ধান্ত ছিল’। তারা বলেছেন বিপুল ক্ষতির মুখে পড়তে যাচ্ছিল হোটেল ব্যবসা। নিষেধাজ্ঞাটি বাংলাদেশি রোগী বা তার পরিবারের সদস্যদের জন্য আর বলবৎ নেই।

হিন্দুত্ববাদী একটি সংগঠনের সদস্যরা হামলা করেছিল আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে। দূতাবাসে হামলার রেশ ধরে কূটনৈতিক পরিস্থিতি আরও গরম হয়। ভারত সরকার এতে দুঃখ প্রকাশ করে। এরপর ত্রিপুরার হোটেলে বাংলাদেশিদের থাকায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। তবে ত্রিপুরার প্রধান বিরোধীদল সিপিআইএমের তরফে দূতাবাসে হামলার কড়া নিন্দা জানানো হয়। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহাও নিন্দা জানান।

এরপর আগরতলাসহ রাজ্যের অন্যান্য এলাকার হোটেলমালিকদের সিংহভাগ ‘বাংলাদেশিদের নিষিদ্ধ’ করার বার্তায় ব্যবসার ক্ষতির আশঙ্কায় ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন।

সংবাদপত্র ‘ত্রিপুরা দর্পণ-এর প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, ‘শাসকদলের মদতপুষ্ট একটি প্রভাবশালী সংগঠনের চাপে পড়ে সারা রাজ্যে হোটেল এবং রেস্টুরেন্টে বাংলাদেশিদের স্থান ও খাবার না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল অল ত্রিপুরা হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন। এই সিদ্ধান্ত ঘিরে প্রচণ্ড সমালোচনার মুখে পড়েন অ্যাসোসিয়েশনের অতি উৎসাহী কর্মকর্তারা। এমনকি তাদের বিরুদ্ধে রাজ্যের বেশির ভাগ হোটেল ও রেস্টুরেন্টের মালিকরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন।’

বাংলাদেশিদের নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ রাজনৈতিক কারণে বলেই জানিয়েছেন একাধিক হোটেল ব্যবসায়ী ও কর্মী। তারা বলেছেন এ রাজ্যে বিগত বাম জমানায় এমন হয়নি। তারা বলেছেন, সবাই ভালো করেই জানেন, বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে ভারতে আসার জন্য কোনো ভ্রমণ ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। তাই বাংলাদেশ থেকে কোনো পর্যটক আসার প্রশ্নই উঠে না। বাংলাদেশ থেকে শুধু মেডিকেল ভিসা নিয়ে যারা ত্রিপুরায় আসছেন তাদের জন্য হোটেলে থাকা নিষিদ্ধ করার যুক্তি অমানবিক। তীব্র সমালোচনার মুখে বাংলাদেশিদের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্তটি শিথিল করতে বাধ্য হয় হোটেল অ্যাসোসিয়েশন।

জানা গেছে, হোটেলে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি নিয়ে ত্রিপুরাজুড়েই ক্ষোভ ছড়াচ্ছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে অ্যাসোসিয়েশন ঘোষণা করেছে মেডিকেল ভিসাধারী ব্যক্তিদের এখন স্বাগত জানানো হবে এবং পরিষেবা দেওয়া হবে।

রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় কক্সবাজার নীতির পরামর্শ ইইউ দূতের

প্রকাশ: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৫৮ পিএম
আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:০২ পিএম
রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় কক্সবাজার নীতির পরামর্শ ইইউ দূতের
রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত ও হেড অব ডেলিগেশন মাইকেল মিলার বলেছেন, তারা সবাই বুঝতে পেরেছেন যে, রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান দীর্ঘায়িত করা ‘রাজনৈতিক’ এবং ‘পুরো কক্সবাজার’ নীতি এগিয়ে নিতে ঢাকার সঙ্গে কাজ করা উচিত। খবর ইউএনবির।

সম্প্রতি কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই, বাংলাদেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রত্যাবাসন দেখতে চাই এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রোহিঙ্গারা নিজেরাও তা চায়। তবে নিরাপদ, টেকসই, স্বেচ্ছায় ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের শর্ত বর্তমানে বিদ্যমান নেই।’

রাষ্ট্রদূত বলেন, “এরই মধ্যে পুনরুদ্ধারের সক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য আরও কাজ করার অনুমতি দেওয়ার প্রতিক্রিয়ার একটি ‘বিবর্তন’ প্রয়োজন।”

তার মতে, এর অর্থ হলো শক্ত আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের অনুমতি দেওয়ার বিষয়টি যথাযথ বিবেচনা করা, যা দাতাদের তহবিলকে দীর্ঘস্থায়ী করবে এবং যার জন্য বর্তমানে একাধিক প্রাথমিক প্রস্তাবনাকে পরীক্ষা করা হচ্ছে।

রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলার বলেন, ‘এর অর্থ হওয়া উচিত শরণার্থীদের জন্য কীভাবে বৃহত্তর পুরুদ্ধারের সক্ষমতা বাড়ানো যায় তা অন্বেষণ করা এবং ডিজিটাল শিক্ষার উন্মুক্তকর করা, যাতে মায়ানমারের ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে যুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য নিয়োগ, অপরাধ এবং শোষণকে এড়ানো যায়।’ তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দিতে গিয়ে বাংলাদেশ যে বোঝা বহন করছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন তা স্বীকার করে।’

কক্সবাজার ও ভাসানচরে ১৩ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিচ্ছে বাংলাদেশ। ২০২৪ সালে ইইউ রোহিঙ্গাদের তাৎক্ষণিক সহায়তার জন্য মানবিক তহবিলে ৪৩ মিলিয়ন ইউরো এবং পরবর্তী তিন বছরের জন্য উন্নয়ন তহবিলে আরও ৩৫ মিলিয়ন ইউরো বরাদ্দ করেছে।

রাষ্ট্রদূত মিলার বলেন, ‘আমরা শরণার্থী ও স্থানীয় জনগোষ্ঠী উভয়কেই সহায়তা দিচ্ছি। এ কারণেই আমি অক্টোবরে কক্সবাজার গিয়েছিলাম মাঠপর্যায়ের পরিস্থিতি বুঝতে, বাঙালি (বাংলাদেশি) ও রোহিঙ্গাদের কথা শুনতে এবং আমাদের অর্থায়নের সর্বোচ্চ প্রভাব ও স্থায়িত্ব কীভাবে সর্বোচ্চ করা যায় তা বিবেচনা করতে।’ তিনি বলেন, ‘নিরাপত্তা নাকি নিরাপত্তাহীনতা, আশ্রয়শিবিরগুলোতে তাদের কথা শোনাও ছিল একটি বিষয়।’ তিনি আরও বলেন, “ক্যাম্পের বাইরে এবং শিবিরগুলোর ভেতরে একটি স্থানীয় গতিশীল অর্থনীতির উন্নয়নে আমরা কাজ করেছি এবং অব্যাহত রেখেছি। আমি কেবল আমাদের সহযোগিতার বিষয়ে ইতিবাচক কথা শুনেছি, যা আমার বোধকে আরও দৃঢ় করেছে যে ‘পুরো কক্সবাজার’ নীতি বাস্তবায়নের জন্য আমাদের ঢাকার সঙ্গে কাজ করা উচিত।”

এদিকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সম্প্রতি রোহিঙ্গা ইস্যুতে একটি অল স্টেকহোল্ডার্স ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স আয়োজনের প্রস্তাব দিয়েছেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মোহাম্মদ রফিকুল আলম বলেন, ‘এটি এরই মধ্যে ব্যাপক আন্তর্জাতিক সমর্থন পেয়েছে।’ তিনি আশা প্রকাশ করেন, উচ্চপর্যায়ের এই সম্মেলন মায়ানমারে রোহিঙ্গাদের টেকসই প্রত্যাবাসন ও প্রত্যাবসানের জন্য একটি বাস্তবসম্মত কাঠামোর ওপর রাজনৈতিক ঐকমত্য গড়ে তুলবে।

রফিকুল আলম বলেন, সংকটের মূল কারণগুলো মোকাবিলা এবং বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় একটি সময়োপযোগী ও সমন্বিত কাঠামো প্রণয়নেও এই পরিকল্পনা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গা পরিস্থিতির কারণে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির প্রভাব কমানো এবং আর্থসামাজিক, পরিবেশগত ও নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার বিষয়েও সম্মেলনে গুরুত্বারোপ করা হবে। মুখপাত্র বলেন, ‘আমরা আশা করি, এই সমস্যা সমাধানে আন্তর্জাতিক অঙ্গীকার বৃদ্ধি, সমন্বিত মানবিক ও উন্নয়ন-প্রক্রিয়া জোরদার করা এবং রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধের জবাবদিহিতে সহায়তা করার বিষয়গুলো উত্থাপিত হবে।’

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধান এবং রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মায়ানমারে ‘নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ’ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন আহ্বানসহ রোহিঙ্গা সংকটের প্রতি জরুরি মনোযোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘রাখাইন রাজ্য (মায়ানমার) বা গাজায় যারা অব্যাহতভাবে নিপীড়ন, উৎখাত ও চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হচ্ছে, আমরা তাদের উপেক্ষা করতে পারি না। এ ক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তি, তাদের  সংখ্যা বা পরিচয় বিবেচ্য নয়।’

গ্রামীণ ব্যাংক, ইউনূস সেন্টার ও ক্যালেডোনিয়ান কলেজ পরিদর্শন বিভিন্ন দেশের সামরিক উপদেষ্টাদের

প্রকাশ: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৫৭ পিএম
আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:০৩ পিএম
গ্রামীণ ব্যাংক, ইউনূস সেন্টার ও ক্যালেডোনিয়ান কলেজ পরিদর্শন বিভিন্ন দেশের সামরিক উপদেষ্টাদের
বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের সামরিক উপদেষ্টাদের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: আইএসপিআর

বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের সামরিক উপদেষ্টারা বাংলাদেশের একমাত্র নোবেল জয়ী প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ব্যাংক, ইউনূস সেন্টার ও গ্রামীণ ক্যালেডোনিয়ান কলেজ অব নার্সিং পরিদর্শন করেন।

বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) তারা এসব প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেন। 

এ সময় সামরিক উপদেষ্টাগণ গ্রামীণ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে অবস্থিত নোবেল গ্যালারি পরিদর্শন করেন। সেখানে গ্রামীণ ব্যাংকের ঊধ্বর্তন কর্মকর্তারা বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বর্ণাঢ্য কর্মজীবন ও নোবেল জয়ের ইতিহাস তুলে ধরেন।

ইউনূস সেন্টার পরিদর্শন শেষে সামরিক উপদেষ্টারা রাজধানীর গ্রামীণ ক্যালেডোনিয়ান কলেজ অব নার্সিংয়ে যান। সেখানে তারা কলেজটির বিভিন্ন কার্যক্রম ও শিক্ষাব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন। এরপর তারা কলেজের শিক্ষার্থীদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।

এর আগে বুধবার (৪ ডিসেম্বর) অনুষ্ঠিত ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজের গ্র্যাজুয়েশন পর্ব শেষে প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশে কর্মরত প্রতিরক্ষা উপদেষ্টাদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও মত বিনিময় করেন। এরই ধারাবাহিকতায় সামরিক উপদেষ্টারা বৃহস্পতিবার এসব প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনে আসেন।

এসব প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন শেষে প্রতিরক্ষা উপদেষ্টারা গ্রামীণ ব্যাংক ও এর অঙ্গ সংগঠনের কর্মকাণ্ডে সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করেন।

ভারতীয় গণমাধ্যমে ১৩টি ভুয়া খবর, প্রচার করেছে ৪৯টি গণমাধ্যম

প্রকাশ: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৪৭ পিএম
আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:২১ পিএম
ভারতীয় গণমাধ্যমে ১৩টি ভুয়া খবর, প্রচার করেছে ৪৯টি গণমাধ্যম

বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর গত ১২ আগস্ট থেকে ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত ভারতীয় গণমাধ্যমে বাংলাদেশ নিয়ে অন্তত ১৩টি ভুয়া খবর প্রচারিত ও প্রকাশিত হয়েছে। ভুয়া খবর প্রচারকারী হিসেবে ভারতের অন্তত ৪৯টি গণমাধ্যমের নাম উঠে এসেছে। রিউমর স্ক্যানার টিম গতকাল বিকেলে এ তথ্য প্রকাশ করেছে।

রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা গেছে, ভারতের রিপাবলিক বাংলা সর্বাধিক পাঁচটি ভুয়া খবর প্রচার করেছে। পরবর্তী অবস্থানে রয়েছে হিন্দুস্তান টাইমস, জি নিউজ এবং লাইভ মিন্ট, যারা প্রত্যেকে অন্তত তিনটি করে ভুয়া খবর প্রকাশ করেছে। এ ছাড়া রিপাবলিক, ইন্ডিয়া টুডে, এবিপি আনন্দ এবং আজতক অন্তত দুটি করে ভুয়া খবর প্রচার করেছে। বাকি ৪১টি গণমাধ্যম অন্তত একটি করে মিথ্যা খবর প্রচার করেছে।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোতে বাংলাদেশ নিয়ে প্রচার করা  হচ্ছে একের পর এক ভুয়া খবর। অনুসন্ধানে জানা যায়, এ ধরনের গুজব প্রচারের পরে বাংলাদেশ ও ভারতের মানুষের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।

ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়ার পর শেখ হাসিনা দিল্লি থেকে জনগণের উদ্দেশে একটি খোলা চিঠি দিয়েছেন এবং ওই চিঠিতে তার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করেছেন এমন দাবিতে ভারতীয় গণমাধ্যমে একটি তথ্য ছড়িয়ে পড়ে। তবে জানা যায়, শেখ হাসিনা এমন কোনো চিঠি দেননি। রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে উঠে আসে, এই চিঠিটি প্রথমে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তী সময়ে ভারতের আগরতলা ভিত্তিক দৈনিক ‘ত্রিপুরা ভবিষ্যত’ পত্রিকার প্রিন্ট সংস্করণে তারিখসহ প্রকাশিত হয়। এরপর ওই পত্রিকার স্ক্রিনশটটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে শেয়ার হতে থাকে এবং পরবর্তী সময়ে ভারত ও বাংলাদেশের কয়েকটি গণমাধ্যমে এটি প্রচারিত হয়।

৫ আগস্টের পর ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যমে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে দাবি করা হয়, একজন হিন্দু ব্যক্তি তার নিখোঁজ পুত্রের সন্ধান দাবিতে মানববন্ধন করছেন। তবে অনুসন্ধানে জানা যায়, ওই ব্যক্তি আসলে মুসলিম এবং তার নাম বাবুল হাওলাদার। ২০১৩ সালে নিখোঁজ হওয়া ছেলের সন্ধানে মানববন্ধন করেছিলেন তিনি।

শেখ হাসিনা ক্ষমতা হারানোর পর ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন হয়। ভারতীয় গণমাধ্যম দাবি করে, ড. মুহাম্মদ ইউনূস অসুস্থ হয়ে আইসিইউতে ভর্তি হয়েছেন। এ দাবির সঙ্গে একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ব্যক্তির ছবিও প্রকাশিত হয়। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, ছবিটি ড. ইউনূসের নয়। প্রকৃতপক্ষে, ড. ইউনূস সুস্থ রয়েছেন।

রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর বাংলাদেশে বেশ কিছু নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছে বলে দাবি করে ভারতীয় গণমাধ্যম। এই দাবিরও কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।

৫ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প বিজয়ী হন। ট্রাম্পের বিজয়ের পর, ভারতীয় গণমাধ্যমে একটি খবর ছড়িয়ে পড়ে যে, ড. মুহাম্মদ ইউনূস ফ্রান্সে পালিয়ে গেছেন। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, এই দাবি মিথ্যা। পালানোর প্রমাণ হিসেবে ব্যবহৃত ছবিটি ৮ আগস্ট ড. ইউনূসের ফ্রান্স থেকে বাংলাদেশে ফেরার সময়ের।

স্বাধীনতার পর গত ১৩ নভেম্বর প্রথমবারের মতো সরাসরি পাকিস্তানের করাচি থেকে কনটেইনার বহনকারী একটি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে নোঙর করে। এ নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমে দাবি করা হয়, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের ‘সোয়াত’ নামের যে সামরিক জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে অস্ত্র ও গোলাবারুদ নিয়ে এসেছিল, সেই জাহাজ আবারও চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছেছে। আরও দাবি করা হয়, ওই জাহাজে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে অস্ত্র আনা হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে এসব দাবির কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। জাহাজটির নাম ‘এমভি ইউয়ান জিয়ান ফা ঝং’, এটি একটি বাণিজ্যিক জাহাজ এবং এর মাধ্যমে শিল্পের কাঁচামাল ও ভোগ্যপণ্য আনা হয়েছে।

২৫ নভেম্বর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। পরদিন ২৬ নভেম্বর তাকে চট্টগ্রাম আদালতে হাজির করা হলে জামিন নামঞ্জুর করা হয়। সেদিন চট্টগ্রামের আদালত প্রাঙ্গণে জেলা আদালতের আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ নিহত হন। ভারতীয় গণমাধ্যমে দাবি করা হয় যে, সাইফুল ইসলাম চিন্ময়ের আইনজীবী হওয়ায় তাকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু এই দাবি সঠিক নয়। চিন্ময়ের আইনজীবী শুভাশীষ শর্মা, সাইফুল ইসলাম নন।

আইনজীবী রমেন রায়কে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের আইনজীবী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যমে। রিউমর স্ক্যানার বলছে, রমেন রায় চিন্ময় দাসের আইনজীবী নন এবং তার মামলার সঙ্গেও কোনো সম্পর্ক নেই। প্রকৃতপক্ষে ২৫ নভেম্বর শাহবাগে চিন্ময় দাসের গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে সোচ্চার সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কর্মসূচিতে দুর্বৃত্তদের হামলায় রমেন রায় আহত হন। 

ভারতীয় কিছু গণমাধ্যমে দাবি করা হয়, বাংলাদেশে ভারতীয় স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলোর সম্প্রচার বন্ধ করা হয়েছে। তবে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এবং ক্যাবল অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ বিষয়টি গুজব বলে রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করেছে।

ভারতীয় কিছু গণমাধ্যমে দাবি করা হয়, বাংলাদেশ বিমান বাহিনী চীনের প্রযুক্তিগত সহায়তায়  ভারতের শিলিগুড়ির চিকেন নেকের কাছে লালমনিরহাটে এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম বিমানঘাঁটি নির্মাণ করবে। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, লালমনিরহাটের বিমানবন্দর দীর্ঘ ছয় দশক ধরে বন্ধ রয়েছে এবং সাম্প্রতিক এর কার্যক্রম পুনরায় চালুর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

সম্প্রতি বাংলাদেশে মুসলিমরা হিন্দু মন্দিরে হামলা করে প্রতিমা ভাঙচুরের দাবি করা একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে। এই দাবি ভারতের কিছু গণমাধ্যমেও প্রচারিত হয়। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, ভিডিওটি বাংলাদেশের নয়, বরং ভারতের পূর্ব বর্ধমান জেলার খণ্ডঘোষ সুলতানপুর গ্রামের।
 
বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ঢাকা-আগরতলা-ঢাকা রুটে শ্যামলী পরিবহনের একটি বাসকে  বাংলাদেশি ট্রাক ধাক্কা দিয়েছে বলে ভারতের কিছু গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচারিত হয়। আরও দাবি করা হয়, শ্যামলী পরিবহনের বাসে থাকা ভারতীয় যাত্রীদের স্থানীয়রা প্রাণনাশের হুমকি দেয় এবং ভারতবিরোধী স্লোগান দেয়। রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, এই দাবিগুলোর কোনো সত্যতা নেই। ইচ্ছাকৃতভাবে নয়, দুর্ঘটনাটি মূলত ওভারটেকিংয়ের কারণে ঘটেছিল।

বাংলাদেশে যেকোনো সময় জঙ্গি হামলা হতে পারে জানিয়ে যুক্তরাজ্য ভ্রমণ সতর্কতা দিয়েছে দাবি করে একটি তথ্য ভারতীয় কিছু গণমাধ্যম প্রচারিত হয়েছে। তবে যুক্তরাজ্যের ভ্রমণ সতর্কতা কেবলমাত্র বাংলাদেশে নয় বরং ভারত, ইন্দোনেশিয়া, জার্মানি, স্পেন, শ্রীলঙ্কা, ফ্রান্সসহ বিশ্বের অনেক দেশের ক্ষেত্রেই অনেকদিন ধরেই জারি করে রেখেছে যুক্তরাজ্য। তাই, এককভাবে বাংলাদেশকে নিয়ে খবর প্রচার করা বিভ্রান্তিকর।

মাহফুজ/এমএ/