স্বাধীনতার ৫৩ বছর অতিক্রান্ত হলেও ক্ষমতায় থাকা কোনো রাজনৈতিক দলই দেশে প্রকৃত গণতন্ত্র, অসাম্প্রদায়িকতা ও বৈষম্যবিলোপ নিশ্চিত করতে পারেনি বলে অভিমত প্রকাশ করেছে সংখ্যালঘু ঐক্যমোর্চা।
শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর মানবাধিকার: আমাদের করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে এই মতামত দেন শিক্ষক ও অধিকারকর্মীরা।
তারা বলেন, ‘বাস্তবে সামাজিক বৈষম্য যেমন বেড়েছে তেমনি বিস্তার ঘটেছে সাম্প্রদায়িকতার।’
অনুষ্ঠানে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও সংখ্যালঘু ঐক্যমোর্চার যুগ্ম সমন্বয়ক মনীন্দ্র কুমার নাথ।
জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পরে দেশের নানা এলাকায় ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতার একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘৪ আগস্ট থেকে ২০ আগস্ট পর্যন্ত দেশে ২০১০টি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। ২০ আগস্টের পরেও এ ধরণের সহিংসতা বিক্ষিপ্ত ও বিচ্ছিন্নভাবে হলেও আজও তা অব্যাহত আছে। দুঃখজনকভাবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং কিছু রাজনৈতিক দল এ ঘটনাগুলোকে রাজনৈতিক সহিংসতার প্রলেপ লাগিয়ে পাশ কাটিয়ে যেতে চাইছে। নিপীড়নের ঘটনাকে লঘু করে দেখা বা যথারীতি অতীতের ন্যায় বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে এড়িয়ে যাওয়া প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়।’
সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর সহিংস ঘটনাগুলোর প্রতিবাদ করতে গেলে কোনো কোনো পক্ষ নানা ধরনের ট্যাগ লাগিয়ে ষড়যন্ত্রের গন্ধ খুঁজে বেড়াচ্ছে বলে উল্লেখ করেন মনীন্দ্র নাথ।
সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র ও পুন্ড্ররিক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের মামলার প্রসঙ্গও আসে লিখিত বক্তব্যে।
মনীন্দ্র কুমার নাথ বলেন, ‘চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে সংবিধান স্বীকৃত আইনের আশ্রয়লাভের অধিকার থেকে বঞ্চিত করে তার মৌলিক মানবাধিকারকে অস্বীকার করা হচ্ছে না? চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা কতটুকু যৌক্তিক সে ব্যাপারে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।’
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম, কক্সবাজারসহ দেশের নানা এলাকায় সংখ্যালঘু নিপীড়নের ঘটনায় ক্ষোভ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এমন বাস্তবতায় ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার রক্ষিত হচ্ছে কিনা তা বিরাট প্রশ্ন হিসেবে দেখা দিয়েছে।’
হাইকোর্টে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর প্রশ্নে রুলের শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বিদ্যমান সংবিধান থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা বাদ দেওয়া প্রসঙ্গ তুলেছেন।
এর প্রতিক্রিয়ায় মনীন্দ্র নাথ বলেন, ‘সংবিধান থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা বাদ দিতে বলা মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা- সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের পরিপন্থী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের চেতনার সঙ্গে অসামঞ্জ্যপূর্ণ নয় কি?’
অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কমিশনগুলোতে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করে সংখ্যালঘু ঐক্যমোর্চা।
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের অন্যতম সভাপতি নির্মল রোজারিওর সভাপতিত্বে এ আলোচনা অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে এসেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, হাফিজুর রহমান কার্জন, জোবায়দা নাসরীন; জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আবু সাঈদ খান, ঢাকার সেন্ট মেরিস ক্যাথেড্রালের পাল পুরোহিত অ্যালবার্ট ডি রোজারিও পাল পুরোহিত, কারিতাস ডেভেলপমেন্টের পরিচালক থিও থিল নকরেকসহ আরও অনেকে।
জয়ন্ত সাহা/সাদিয়া নাহার/