কোনো অপরাধীকেই ছাড় দেওয়া হবে না বলে জানালেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.)।
বুধবার (৬ নভেম্বর) সচিবালয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত বিশেষ সভা শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, 'অপরাধী যতো প্রতাপশালী হোক না কেন, এ ক্ষেত্রে কোনো রাজনৈতিক পরিচয় বিবেচনা করা হবে না। অপরাধী সে যে দলেরই হোক তাকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে।'
উপদেষ্টা বলেন, 'সভায় মূলত: ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কিভাবে আরও উন্নত করা যায়, সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের চেয়ে ভালো হয়েছে, তবে আরও উন্নতি ঘটানোর সুযোগ রয়েছে। সে লক্ষ্যেই সরকার কাজ করছে।'
মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, 'মোহাম্মদপুরের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেভাবে সফল হয়েছে, সে মডেল রাজধানীর অন্যান্য এলাকায় প্রয়োগ করে ঢাকা শহরের পরিস্থিতির কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন ঘটানো হবে।'
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) বলেন, 'রাজধানীর ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে অন্যতম সমস্যা হলো রাস্তার ওপর অবৈধ দোকানপাট বসা। এগুলো উচ্ছেদের জন্য সংশ্লিটদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।'
তিনি বলেন, 'ঢাকার যানজট নিরসনে আরেকটি বড় সমস্যা হচ্ছে প্রধান সড়কগুলোতে প্যাডেল ও ব্যাটারিচালিত অটো রিক্সা চলে আসা। তারা যেন চার্জিং পয়েন্টগুলোর মাধ্যমে ব্যাটারিচালিত রিকশায় চার্জ দিতে না পারে, সে বিষয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উপদেষ্টা এ সময় চাঁদাবাজি বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেন।'
সভায় আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে নিয়োজিত বাহিনীসমূহের মধ্যে সমন্বয় বিধান, গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধিকরণ; চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, অপহরণ ও চাঁদাবাজি রোধে ব্যবস্থা গ্রহণ; দখলবাজি, বিশেষ করে মহাখালী, গাবতলী ও সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ড/ ট্রাকস্ট্যান্ডসমূহে এবং যাত্রাবাড়ি, কারওয়ান বাজার, কাপ্তান বাজারসহ ভাসমান বাজারসমূহে চাঁদাবাজি রোধে ব্যবস্থা গ্রহণ; মাদকের স্পটসমূহ চিহ্নিত করে মাদক বিরোধী অভিযান এবং অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযান জোরদারকরণ; মব জাস্টিস প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণ; জেনেভা ক্যাম্প, বিভিন্ন বস্তিসহ অপরাধপ্রবণ এলাকা সিসিটিভি স্যার্ভিলেন্সের আওতায় আনয়ন; যে কোনো জনসভা আয়োজনের ক্ষেত্রে ডিএমপি এর অনুমতি গ্রহণ নিশ্চিত করা; শাহবাগের পরিবর্তে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা আয়োজনের ব্যবস্থা করা; কিশোর গ্যাং এর উৎপাতরোধে ব্যবস্থা গ্রহণ; ফুটপাত দখলরোধ, ফুটপাতে চাঁদাবাজি বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ; প্রতারণা, ডিজিটাল প্রতারণা, মুদ্রাপাচার, পুঁজিবাজারের অস্থিরতার বিষয়ে নজরদারি বৃদ্ধি করা; নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধিরোধে চাঁদাবাজ, মধ্যস্বত্বভোগী, বাজার কারসাজির সহিত জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ; ঢাকা শহরের ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা গ্রহণ ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সভাপতিত্বে সভায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) এর মহাপরিচালক এ কে এম শহিদুর রহমান, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিমপি) কমিশনার মো. মাইনুল হাসান এনডিসি, ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দিন আহমদ চৌধুরীসহ ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় কর্মরত বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
আনিসুর তপন/জোবাইদা/