ঢাকা ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪
English
বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

আইডিইবির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আগামীকাল বৈষম্যহীন কর্মক্ষেত্র দাবি

প্রকাশ: ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৫৮ এএম
আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৫৮ এএম
বৈষম্যহীন কর্মক্ষেত্র দাবি
আইডিইবির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ৯ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা

‘বৈষম্যহীন কর্মক্ষেত্র-সময়ের দাবি’ প্রতিপাদ্য নিয়ে ৯ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (আইডিইবি)।

আগামীকাল শুক্রবার (৮ নভেম্বর) সংগঠনের ৫৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।

বুধবার (৬ নভেম্বর) রাজধানীর কাকরাইলে আইডিইবি ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন আইডিইবির অন্তর্বর্তীকালীন কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক প্রকৌশলী কাজী সাখাওয়াত হোসেন। 

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘আইডিইবি দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রকৌশলীদের সংগঠন, যা বৃহত্তর পেশাজীবী সংগঠন হিসেবেও পরিচিত ও স্বীকৃত। এ সংগঠনটি আগামী ৮ নভেম্বর ৫৪ বছরে পদার্পণ করছে। দিবসটি উপলক্ষে ৮ থেকে ১৬ নভেম্বর টানা ৯ দিন নানান কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। কর্মসূচিগুলোর মধ্যে রয়েছে, ৩ থেকে ৭ নভেম্বর রাষ্ট্রপতি, প্রধান উপদেষ্টাসহ বিভিন্ন পেশাজীবী, সাংবাদিক, রাজনৈতিক দলের নেতাদের মাঝে শুভেচ্ছা কার্ড বিতরণ। একই দিনে কেন্দ্রীয় কমিটিসহ সব জেলা কমিটি দিবসটি উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলন করবে। 

৮ নভেম্বর আইডিইবির প্রয়াত নেতা ও সদস্য এবং ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহিদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভা করা হবে। এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন। একই দিনে বিটিভি ও বিটিভি ওয়ার্ল্ড এবং বাংলাদেশ বেতারে বিশেষ আলোচনা অনুষ্ঠান সম্প্রচার। ১০ নভেম্বর ঢাকাসহ সারা দেশে শোভাযাত্রা ও আলোচনা অনুষ্ঠান।

১৪ নভেম্বর আইডিইবি ভবনে আয়োজিত হবে ‘বৈষম্যহীন কর্মক্ষেত্র-সময়ের দাবি’ প্রতিপাদ্যের আলোকে সেমিনার। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান। একই দিনে দেশের সব জেলা শাখায় ফ্রি প্রযুক্তি পরামর্শ, রক্তদান কর্মসূচি করা হবে।

আগামী ১৪ নভেম্বর নবীন-প্রবীণদের সম্মিলনের মাধ্যমে সমাপনী অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। 

এতে প্রধান অতিথি থাকবেন অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন আইডিইবির অন্তর্বর্তীকালীন কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক প্রকৌশলী মো. সোলায়মান,  প্রকৌশলী মির্জা মিজানুর রহমান, সদস্য প্রকৌশলী মো. জসিম সিকদার রানা, প্রকৌশলী জয়নাল আবেদীন প্রমুখ। 

একতাবদ্ধ থাকার অঙ্গীকার রাজনৈতিক দলগুলোর

প্রকাশ: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৫৩ পিএম
আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৫৩ পিএম
একতাবদ্ধ থাকার অঙ্গীকার রাজনৈতিক দলগুলোর
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেন রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা। ছবি : পিআইডি

দেশের বিদ্যমান সংকট মোকাবিলায় জাতীয় ঐক্যের লক্ষ্য নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বৈঠকে অংশ নেওয়া দলগুলো ভারতীয় আগ্রাসন ও পতিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের সৃষ্ট জাতীয় সংকট মোকাবিলায় ঐক্যবদ্ধ থাকতে একমত পোষণ করেছে। তারা বলেছে, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যেকোনো ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় তারা সরকারের পাশে থাকবে।

বুধবার (৪ ডিসেম্বর) ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। 

বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ ৪০টির বেশি রাজনৈতিক দল এ বৈঠকে অংশ নিলেও আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, ১৪ দলসহ গত নির্বাচনে অংশ নেওয়া দলগুলোকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। এই বৈঠক বিকেল সোয়া ৪টায় শুরু হয়ে সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে শেষ হয়।

আগামীকাল বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) বিকেলে প্রধান উপদেষ্টা ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে বসবেন। সংলাপে অংশ নিতে বিকেল পৌনে ৪টার দিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রবেশ করে। 

অন্যরা হলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন। জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানের নেতৃত্বে সিনিয়র নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম অংশ নেন। 

বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে যে স্বাধীন বাংলাদেশ তৈরি করলাম, তারা এটাকে মুছে দিয়ে আগেরটায় ফিরে যেতে চায়। মুখে বলছে না যে আগেরটা, কিন্তু ভঙ্গি হলো আগেরটা ভালো ছিল। তাদের শক্তি এত বেশি যে তারা মানুষকে এর ভেতরে ভেড়াতে পারছে। তাদের কল্পকাহিনির কারণে মানুষ সন্দেহ প্রকাশ করছে যে এটা কী ধরনের সরকার হলো।’

বহির্বিশ্বের মিডিয়া নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা বারবার তাদের বলছি যে আপনারা আসেন এখানে, দেখেন, এখানে কোনো বাধা নেই। কিন্তু না, তারা ওখান থেকেই কল্পকাহিনি বানিয়ে যাচ্ছেন। এখন আমাদের সারা দুনিয়াকে বলতে হবে যে আমরা এক, আমরা যেটা পেয়েছি সেটা একজোট হয়ে পেয়েছি, কোনো মতবাদের কারণে পাইনি, ধাক্কাধাক্কি করে পাইনি, যারা আমাদের ওপর চেপে ছিল, তাদের উপড়ে ফেলেছি। এটাই সবার সামনে তুলে ধরতে হবে, সবাই মিলে যেন এটা করতে পারি। আমাদের নতুন বাংলাদেশের যাত্রাপথে এটা মস্তবড় একটা বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে, অস্তিত্বের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

জানা গেছে, বৈঠকে মূলত আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে হামলা, বাংলাদেশের পতাকা অবমাননা এবং দেশে সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণের আন্তর্জাতিকভাবে যে গল্প শোনানো হচ্ছে, এ বিষয়ে করণীয় নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত চাওয়া হয়। বৈঠকে কয়েকটি প্রস্তাব দিয়েছেন নেতারা। এগুলো হলো বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রের দূতাবাসে আগের সরকারের নিয়োগপ্রাপ্তদের সরিয়ে বিপ্লবের পক্ষের শক্তিকে নিয়োগ দেওয়া, আওয়ামী লীগ সরকার ১৫ বছর ভারতের সঙ্গে যেসব চুক্তি করেছে তা প্রকাশ করা এবং স্বার্থবিরোধী চুক্তি বাতিল করাসহ ক্ষতিপূরণ আদায়, জাতীয় ঐক্যের প্রতীকী সংহতি দিবস হিসেবে একদিন পালন করা এবং এই দিন যার যার অবস্থান থেকে জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে রাস্তায় নেমে আসা, জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল গঠন, আন্তর্জাতিক মহলের প্রোপাগান্ডা প্রতিরোধে রাষ্ট্রীয়ভাবে পাবলিক রিলেশন সেল গঠন করা এবং তা বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যমে প্রকাশ করার পক্ষে মত দেন।

সংলাপে এবি পার্টির সদস্যসচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু যেকোনো একদিন জাতীয় ঐক্যের প্রতীকী সংহতি হিসেবে সর্বস্তরের নাগরিকদের সারা দেশে একযোগে একই সময়ে যার যার অবস্থানে জাতীয় পতাকা হাতে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদী কর্মসূচির প্রস্তাব দেন। তার এই প্রস্তাবকে অধিকাংশ দলের নেতারা সমর্থন জানান। এ ছাড়া সংলাপে বিএনপির বক্তব্যের প্রশংসা করেন প্রধান উপদেষ্টা। তবে কয়েকটি দলের উত্থাপিত দাবি এ আলোচনার বিষয়ে তিনি ইতিবাচকভাবে নেননি। 

সূত্র জানায়, বৈঠকে অংশ নেওয়া নেতারা ভারতসহ আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার ও প্রোপাগান্ডার কঠোর জবাব দিতে আহ্বান জানান। পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় দূতাবাস এবং দেশের যেসব প্রতিষ্ঠান ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচারের সহযোগী যারা বহাল তবিয়তে রয়েছেন তাদের সরিয়ে দিতে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। কারণ এদের রেখে বিপ্লব সফল হবে না। গণ অধিকার পরিষদ জাতীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব দিলে অন্য দলগুলো তাতে সম্মত হয়নি। বেশ কয়েকটি দল মাঝে মাঝে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টাকে বৈঠক করার পরামর্শ দেয়। এ ছাড়া জাতীয় নিরাপত্তা ও জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে জাতীয় ঐক্যের সমঝোতা দলিল প্রণয়ন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষাসহ সব ধরনের দুর্যোগ মোকাবিলার লক্ষ্যে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ন্যাশনাল স্টুডেন্টস ভলান্টিয়ার গঠন। সরকারের পক্ষে থেকে বলা হয়, দেশের জনগণকে নিরাপত্তা দিতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘দেশ ঐক্যবদ্ধ আছে। কেউ যদি আমাদের ক্ষতি করে তাহলে সেও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’

বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন জানান, স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসরদের সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে সরকারের জাতীয় ঐক্যের আহ্বানে পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বিএনপি। একই সঙ্গে সার্বিক সংস্কারের পর রোডম্যাপ ঘোষণা করে দ্রুত নির্বাচন দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। 

তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে আমরা ঐকমত্য প্রকাশ করেছি, যেভাবে সবাই মিলে জুলাই-আগস্টে ফ্যাসিস্ট সরকারকে বিদায় করেছি, সেভাবেই ছাত্র-জনতা মিলে ফ্যাসিস্টদের ষড়যন্ত্রও মোকাবিলা করব।’

বিএনপি জাতীয় স্বার্থে ঐকমত্য ও নির্বাচনি রোডম্যাপ চায় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘পতিত সরকার আজকে বিদেশে গিয়ে ষড়যন্ত্র করছে। বিদেশের যেসব দেশ পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের সহযোগিতা করছে- বৈঠকে তাদের বিরুদ্ধে সবাই আমরা ঐক্যবদ্ধ আছি।’ 

তিনি বলেন, ‘এই ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে তারা দেশের জনগণের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির অপচেষ্টা করছে। এখন প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে নির্বাচনি রোডম্যাপ ঘোষণা করা হলে আর কেউ ষড়যন্ত্রের সাহস পাবে না।’

খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করতে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন। এই সরকার জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিতে ওয়াদাবদ্ধ। তাই আমরা অতি দ্রুত সংস্কারকাজ শেষ করে নির্বাচনের জন্য রোডম্যাপ দিতে বলেছি। যাতে জনগণ রোডম্যাপ পেলে নির্বাচনমুখী হয়।’

বৈঠক শেষে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সংলাপে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা ভারতের সঙ্গে গত ১৫ বছরে যত চুক্তি হয়েছে তা প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন। পাশাপাশি রামপালসহ যত ক্ষতিকারক চুক্তি হয়েছে তা বাতিলেরও দাবি জানিয়েছেন তারা।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশকে শক্তিহীন, দুর্বল ও নতজানু ভাবার কোনো অবকাশ নেই। বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব, অস্তিত্ব, স্বাধীনতা ও মর্যাদা রক্ষায় আমরা সবাই একজোট। যেকোনো ধরনের অপপ্রচার ও উসকানির বিরুদ্ধে আমরা দৃঢ়, একতাবদ্ধ ও সাহসিকতার সঙ্গে দাঁড়িয়ে থাকব।’

ভারতীয় অপপ্রচার মোকাবিলায় গোটা জাতির ঐক্যবদ্ধ থাকার পাশাপাশি একটি সমাবেশ করার বিষয়ে আলোচনা হয়। এ ছাড়া সার্বিক পরিস্থিতি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে উত্থাপনের বিষয়ে প্রস্তাব দেওয়া হয়।

বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা সবাই এক জায়গায় ঐকমত্য হয়েছি যে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের ব্যাপারে কোনো ছাড় নয়, এ ক্ষেত্রে আমরা সিমেন্টের মতো ঐক্যবদ্ধ। যেমন অতীতে ছিলাম, ৫ আগস্টে ছিলাম, ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে। চরমপন্থা যেদিক থেকেই আসুক, বরদাশত করা হবে না।’

তিনি বলেন, ‘প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে আমরা প্রতিবেশীসুলভ সম্পর্কই রাখতে চাই। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে তাদের ভূমিকা উসকানিমূলক ও সহিংস বলেই মনে হচ্ছে। তারা মিথ্যা তথ্যের ওপর নির্ভর করে বাংলাদেশকে কলুষিত করার জন্য, এ দেশের জনগণ ও সরকারকে ব্যর্থ করার জন্য অপপ্রয়াস ও অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমরা আশা করি, ঐক্যবদ্ধভাবে আগামীর চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করে চূড়ান্ত সফলতার দিকে এগিয়ে যাবে দেশ। চূড়ান্ত সফলতা না আসা পর্যন্ত আমাদের ঐক্য অটুট থাকবে।’

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা সাইফুল হক বলেন, ‘ভারত যদি বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়, তাহলে ভারতকেও বিপদে পড়তে হবে। তাদের আগুন নিয়ে না খেলার আহ্বান জানাই। ভারত ও বাংলাদেশ ইস্যুতে জাতীয় ঐক্যের প্রশ্নে সবাই একমত হয়েছেন।’

গণসংহতি আন্দোলনের নেতা জোনায়েদ সাকী বলেন, ‘সারা দেশে জাতীয় ঐক্য প্রকাশে সর্বস্তরের মানুষকে নিয়ে সমাবেশ করার আহ্বান করা হয়েছে। একটি জাতীয় কাউন্সিল করার আহ্বান আমরা জানিয়েছি।’

এ ছাড়া ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা ইউনুছ আহমাদ ও প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, সিপিবির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, বর্তমান সভাপতি শাহ আলম, বাসদের উপদেষ্টা খালেকুজ্জামান, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকী, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মামুনুল হক, এবি পার্টির সদস্যসচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু, যুগ্ম সদস্যসচিব আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, ১২-দলীয় জোটের প্রধান নেতা মোস্তফা জামাল হায়দার, মুখপাত্র শাহাদাত হোসেন সেলিম, সমন্বয়ক সৈয়দ এহসানুল হক হুদা, জাগপা সহসভাপতি রাশেদ প্রধান, গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান, খেলাফত মজলিসের আবদুল বাসিত আজাদ ও জাহাঙ্গীর হোসেন, জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী, জাতীয়তাবদী সমমনা জোটের সমন্বয়ক ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, এনডিএম চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের ফয়জুল হাকিম লালা, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, বাংলাদেশ জাসদ, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য প্রমুখ বৈঠক অংশ নেন।

তবে বৈঠকে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি এবং তাদের জোট শরিক ও সহযোগী কোনো দলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। অন্যদিকে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে রাজনীতিবিদদের নামের তালিকায় লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদের নাম না থাকায় তিনি ফিরে গেছেন।

আগামী সপ্তাহে ঢাকা-দিল্লি পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠক

প্রকাশ: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৪০ পিএম
আগামী সপ্তাহে ঢাকা-দিল্লি পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠক
ঢাকায় বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠক (এফওসি) আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এই বৈঠকের মাধ্যমে দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে তিন মাস ধরে চলা টানাপোড়েনের অবসান ঘটতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। 

বৈঠকের বিষয়ে ঢাকা ও দিল্লির কূটনৈতিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। 

তবে বুধবার (৪ ডিসেম্বর) পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানান, ১০ ডিসেম্বর বৈঠকের দিন নির্ধারিত থাকলেও তার এক দিন আগে ৯ ডিসেম্বর হতে পারে। 

সূত্র জানায়, বৈঠকে ভারতীয় প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন দেশটির পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি। বাংলাদেশ দলের প্রতিনিধিত্ব করবেন পররাষ্ট্রসচিব জসিম উদ্দিন। যদিও উভয় দেশের সরকারি পর্যায় থেকে কেউই এখনো এই সফরের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা দেননি। কারণ ঢাকা-দিল্লি সম্পর্কের এই উত্তেজনার মুহূর্তে কখন কী ঘটে, সে বিষয়টি শেষ অবধি বুঝে তবে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিতে চায় দুই দেশ।

সম্প্রতি বাংলাদেশে হিন্দু সংখ্যালঘুদের ওপর কথিত নিপীড়নের অভিযোগ এবং সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেপ্তারের পর থেকেই দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক তলানিতে এসে পৌঁছেছে। এ ঘটনায় দুই দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতিও উত্তপ্ত অবস্থায় আছে। এই অবস্থায় দুই দেশের মধ্যে সরকারি পর্যায়ের আলোচনা শুরু করাটা অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করছেন কূটনীতিকরা। এই বৈঠকের মাধ্যমে ঢাকা-দিল্লি সম্পর্কের টানাপোড়েন থেকে উত্তরণের একটি পথ খুঁজে পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন তারা। 

উল্লেখ্য, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর থেকে ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ক স্বাভাবিক চলছে না। এরপর সংখ্যালঘু ইস্যুতে দুই দেশের সম্পর্কে আরও অস্থিরতা তৈরি হয়। এর জেরে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলায় বাংলাদেশের মিশনে হামলা চালায় ভারতের উগ্রবাদী হিন্দু সংগঠন। এ নিয়ে ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মাকে তলব করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। যদিও এই ঘটনার পর পরই ভারত সরকারের পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ করা হয় এবং জড়িতদের আইনি প্রক্রিয়ায় নেওয়ার লক্ষ্যে গ্রেপ্তার করা হয়। তলবের পর থেকেই দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে টানাপোড়েনের জট খোলার আভাস দেন ভারতীয় হাইকমিশনার। 

কূটনৈতিক সূত্র আরও জানায়, পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের এই বৈঠকে গত কয়েক মাসে দুই দেশের মধ্যে যে তিক্ততার জন্ম নিয়েছে তা থেকে উত্তরণের উপায় নিয়ে কথা হবে। ভারতের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিষয়টি তোলা হতে পারে বলে জানা গেছে। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকেও এ বিষয়ে নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরা হবে। বিশেষ করে সংখ্যালঘু নিপীড়ন নিয়ে অভিযোগের কোনটি গুজব আর কোনটি সঠিক। বৈঠকে ভারতে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনগুলোর নিরাপত্তার বিষয়টিও তুলবে ঢাকা। এ ছাড়া দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান চুক্তিগুলোর পর্যালোচনা, বাণিজ্য, গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তির নবায়ন, তিস্তা চুক্তি ইস্যু, সীমান্ত চোলাচালান ও হত্যা বন্ধসহ দ্বিপক্ষীয় সব বিষয়েই বৈঠকে আলোচনা হবে। তবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেরত দেওয়ার বিষয়টি বৈঠকে উত্থাপন করা হবে কি না, তা নিশ্চিত নয়। বৈঠকের গতিবিধি বুঝে বা সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে শেষ মুহূর্তে কোনো ইঙ্গিত দিলে এ বিষয়ে আলোচনা তোলা হতে পারে। কারণ কোনো বিতর্কিত ইস্যু নয়, বরং সম্পর্কের জট খোলাই থাকবে এই বৈঠকের মূল লক্ষ্য।

নির্বাচন ব্যবস্থার ওপর আস্থা ফেরাতে চায় নাসির কমিশন

প্রকাশ: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:০২ পিএম
নির্বাচন ব্যবস্থার ওপর আস্থা ফেরাতে চায় নাসির কমিশন
ছবি: সংগৃহীত

দেশের নির্বাচন ব্যবস্থার ওপর আস্থার ঘাটতি কাটিয়ে উঠতে চায় নবগঠিত এএমএম নাসির উদ্দীনের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন। আর সেই লক্ষ্যে নির্বাচনকে ঘিরে দেশবাসীর জন্য সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করাই তাদের লক্ষ্য।

বুধবার (৪ ডিসেম্বর) নির্বাচন ভবনে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ।

সভায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দীনের নেতৃত্বে অন্য নির্বাচন কমিশনাররা ও সংস্কার কমিশনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

কীভাবে আস্থা ফিরিয়ে আনবেন, নির্বাচন কখন হওয়া উচিত এ বিষয়ে কোন আলোচনা হয়েছে কী? উত্তরে ইসি মো. সানাউল্লাহ বলেন, ‘এটা তো একটা সামষ্টিক বিষয়। এটা এক লাইনে বলা সম্ভব না। সংস্কার কমিশনের সঙ্গে এটাই আমাদের বৈঠক। সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা কিছু তথ্য আদান-প্রদান করবো এবং আশা করি যে উনারা সময় বের করে একাধিকবার আমাদের সঙ্গে বসার সুযোগ করে দেবেন। আর নির্বাচনের সময় নিয়ে কোন আলোচনা হয়নি। নির্বাচন কীভাবে হওয়া উচিত, নির্বাচন ভালো করার জন্য কী কী করা দরকার সেগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে’।

আলোচনার বিষয়ে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, ‘নির্বাচন ব্যবস্থায় আস্থা ফিরিয়ে আনতে আইনিসহ কতগুলো বিষয়ে সংস্কারের প্রস্তাবনা তৈরি করছে তার কমিশন। তিনি জানান, আইনে নির্বাচন কমিশনকে অগাধ ক্ষমতা দেওয়া থাকলেও বিগত ইসি তা ক্ষমতার ব্যবহার করেনি। কাজেই অতীতের নির্বাচনি যত অপরাধ হয়েছে তা প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্টদের শাস্তির আওতায় আনা উচিত বলেও মন্তব্য করেন সংস্কার কমিশন প্রধান।’ 

ড. বদিউল আলম বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের অন্তর্নিহিত ক্ষমতা আছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের খাতিরে তারা রাতকে দিন ও দিনকে রাত করা ছাড়া সবই করতে পারে। এ বিষয়ে আইনে যতটা বলা আছে, আদালতের নির্দেশে সেটা আরও সুস্পষ্ট করা আছে। আইনের যেটা অস্পষ্টতা রয়েছে সেটা তারা পূরণ করতে পারে। তাদের অগাধ ক্ষমতা দেওয়া আছে। ভোটের ফলাফল ঘোষণার পরে আগের কমিশন যুক্তি দিত যে, ফলাফল হওয়ার পরে কমিশনের আর অপরাধের শাস্তি দেওয়ার কোনো সুযোগ থাকে না। আসলে তা নয়- তারা ইচ্ছে করলেই করতে পারতেন। গেজেট হাওয়ার আগে তদন্ত সাপেক্ষে (আদালতের সুস্পষ্ট রায় আছে) তারা নির্বাচন বাতিল করতে পারতেন। এবং নির্বাচন শুধু বাতিল নয়, তদন্ত সাপেক্ষে পুনঃনির্বাচন দেওয়ার ক্ষমতা তাদের আছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত ক্ষমতা তারা ব্যবহার করেন নাই’।

বিগত তিন কমিশন না কি সকল কমিশনকে বিচারের আওতায় আনবেন- এমন প্রশ্নের জবাবে ড. বদিউল আলম বলেন, ‘যারাই অপরাধ করেছে সবাইকে আসতে হবে। এগুলো তো সুস্পষ্টভাবে আলোচনা হয়নি। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী, ৭৩ থেকে ৯০ ধারার মধ্যে নির্বাচনের অপরাধের বিষয়গুলো বর্ণনা আছে। এগুলো যাতে যথাযথ প্রয়োগ হয়, এগুলো বিষয়ে আলোচনা হয়েছে’। 

সংস্কার কমিশন প্রধান বলেন, ‘কোন নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়নি। নির্বাচন কমিশন ও তাদের দায় দায়িত্ব ক্ষমতা স্বাধীনতা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কীভাবে মনোনয়নপত্র চূড়ান্ত করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত কার হওয়ার উচিত, আদালতের কী ভূমিকা থাকবে, হলফনামা, না ভোট, সীমানা পুনর্নির্ধারণ, পোস্টাল ব্যালট, প্রবাসী ব্যালট, ভোটার তালিকা নির্বাচন, এনআইডিসহ নির্বাচনের সমস্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচন করার জন্য বদ্ধপরিকর। এবং আমরাও আমাদের অবস্থান থেকে সুচারুভাবে সম্পূর্ণভাবে শেষ করতে পারে ও সফল হয়, সংস্কার প্রস্তাব দেব যেগুলো তারা কিছু বাস্তবায়ন করবে আবার কিছু সরকার বাস্তবায়ন করবে। আর কিছু সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে বাস্তবায়ন করবে’। 

এলিস/এমএ/

যাদের পছন্দ হয়নি, তারা অভ্যুত্থান মুছে দিতে চায়: প্রধান উপদেষ্টা

প্রকাশ: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৩৫ পিএম
আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:১২ পিএম
যাদের পছন্দ হয়নি, তারা অভ্যুত্থান মুছে দিতে চায়: প্রধান উপদেষ্টা
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বক্তব্য রাখেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস

ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানকে নস্যাৎ করার যড়যন্ত্র চলছে উল্লেখ করে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশের বিরুদ্ধে এই যড়যন্ত্র রুখে দিতে সব রাজনৈতিক দলের প্রতি এক্যৈর আহ্বান জানিয়েছেন। 

তিনি বলেন, ‘আমাদের এই বিরাট অভ্যুত্থান যাদের পছন্দ হয়নি, তারা একে মুছে দিতে চায়। আড়াল করতে চায়। এটাকে নতুন ভঙ্গিতে দুনিয়ার সামনে পেশ করতে চায়। এর বিরুদ্ধে আমাদের সবাইকে একজোট হতে হবে। এখানে কোনো বিশেষ রাজনৈতিক মতবাদের বিষয় না, জাতি হিসেবে আমাদের অস্তিত্বের বিষয়।’

বুধবার (৪ ডিসেম্বর) ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আয়োজিত সংলাপের সূচনা বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।

বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চলছে- এমন ইঙ্গিত করে প্রধান উপদেষ্টা রাজনৈতিক নেতাদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমাদের নতুন বাংলাদেশের যাত্রাপথে এটা একটা মস্ত বড় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। অস্তিত্বের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই জিনিসটা যেন আমরা ঠিকভাবে মোকাবিলা করতে ভুল না করি। সেটার জন্য সবার পরামর্শ নিয়ে আমরা যেন একযোগে কাজ করতে পারি। সবাই মিলে করলে একটা সমবেত শক্তি আসবে।’

ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম দিন ৫ আগস্ট থেকে যড়যন্ত্র শুরু হয়েছে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা উপস্থিত রাজনীতিকদের বলেন, ‘তবে এখন যে চেষ্টা চলছে, তার বিশেষ একটা রূপ আছে। সে জন্য আপনাদের বিশেষভাবে আহ্বান জানিয়েছি। এটা হচ্ছে যে বাংলাদেশ আমরা গড়ে তোলার চেষ্টা করছি, সেটাকে ধামাচাপা দিয়ে আরেক বাংলাদেশের কাহিনি তারা রচনা করছে। সারাক্ষণ এটার নানা রূপরেখা তারা দিয়ে যাচ্ছে। এটা যে এক দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে, তা নয়। বিশেষ বিশেষ, বড় বড় দেশের মধ্যে জড়িয়ে গেছে।’

অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘যারা অপতথ্য ছড়াচ্ছে তাদের আমরা বারবার বলছি, আপনারা আসেন, দেখেন। এখানে কোনো বাধা নেই। এখানে কি বলার বাধা আছে? দেখার বাধা আছে? কিন্তু না, তারা কল্পকাহিনি বানিয়ে যাচ্ছেন। এখন আমাদের সারা দুনিয়াকে বলতে হবে, আমরা এক। আমরা যে স্বাধীনতা পেয়েছি একযোগে পেয়েছি। কোনো মতভেদের মাধ্যমে পাইনি, কাউকে ধাক্কাধাক্কি করে পাইনি। যারা আমাদের বুকের ওপর চেপে ছিল, তাদের বের করে দিয়েছি। আমরা নিজেরা উন্মুক্ত করে দিয়েছি। সেই জিনিসটা সবার সামনে তুলে ধরতে হবে। কীভাবে তুলে ধরব, সে ব্যাপারে পরামর্শ জানতে চাই। সবাই মিলে যেন কাজটি করতে পারি।’ 

সরকারের আহ্বানে সংলাপে অংশ নেওয়ায় রাজনৈতিক দলগুলোকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস বলেন, ‘আমরা কেন জানি যড়যন্ত্র থেকে মুক্ত হতে পারছি না। আমরা ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে জগদ্দল পাথর সরাতে পারলাম, এ নিয়ে আমাদের আনন্দ করার কথা। কিন্তু আমাদের এই মুক্তি, আমাদের এই স্বাধীনতা অনেকের কাছে পছন্দ হচ্ছে না। নানাভাবে, নানা জায়গা থেকে এটাকে উল্টে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘৫ আগস্টের পর থেকে কত রকমভাবে তা এসেছে, আপনারা বাস্তবের পরিপ্রেক্ষিতে সেগুলো দেখেছেন। এই পরিস্থিতিতে মনে করেছিলাম দুর্গাপূজা আসছে, এটা নিয়ে একটা হাঙ্গামা শুরু হবে। সেখানে আমরা ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছিলাম, সবাই সেই ঐক্যের মধ্যে শরিক হয়েছিলেন। দেশজুড়ে খুব শান্তিপূর্ণভাবে পূজা উদযাপন হয়েছে, আমরা সবাই উপস্থিত ছিলাম। সারা দেশ পূজার আনন্দে সবাই শরিক হয়েছিল। কোনো জায়গা থেকে কোনো রকমের বিশৃঙ্খলা, কটূক্তি কিছুই হয়নি। সেটাও অনেকের পছন্দ হয়নি। আবার নতুন নতুন বেশে নতুনভাবে চেষ্টা করেই যাচ্ছে।’

যড়যন্ত্রকারীদের উদ্ধৃত করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘তারা গণ-অভ্যুত্থানকে একটা ভয়ংকর কাণ্ড হিসেবে দেখাতে চাইছে। তারা বলছে, বাংলাদেশে একটা ভয়ংকর কাণ্ড হয়ে গিয়েছে, সেই ভয়ংকর কাণ্ড থেকে রক্ষা করতে হবে। তারা রক্ষার জন্য এগিয়ে আসতে চায়। তাদের অপপ্রচারকে মিথ্যা প্রমাণ করে বাস্তবকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। সেটার জন্য আমাদের সবাইকে একজোট হতে হবে।’

বিসিএসসহ সব সরকারি চাকরির আবেদন ফি সর্বোচ্চ ২০০ টাকা

প্রকাশ: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:১১ পিএম
বিসিএসসহ সব সরকারি চাকরির আবেদন ফি সর্বোচ্চ ২০০ টাকা
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

বিসিএসসহ সব সরকারি চাকরিতে আবেদন ফি সর্বোচ্চ ২০০ টাকা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে এ নিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। 

বুধবার (৪ ডিসেম্বর) প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। 

সভা শেষে সাংবাদিকদের এ বিষয়ে ব্রিফ করেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোখলেস উর রহমান।

তিনি বলেন, ‘বিসিএসে আবেদনের ক্ষেত্রে আগে ছিল ৭০০ টাকা, পিএসসি প্রস্তাব করেছে ৩৫০ টাকা। কিন্তু সচিব কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে এটা হবে ২০০ টাকা। বিসিএসে চাকরিপ্রার্থীদের আবেদনের ফি কমানোর বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন থেকে আদেশ জারি করা হবে। অর্থ বিভাগের মাধ্যমে আরেকটি আদেশ জারি করা হবে। ব্যাংক, বিমা, আধা-সরকারি যেটাকে আমরা বলি এক্সটেনশন অব দ্য গভর্নমেন্ট, এমন যেকোনো প্রতিষ্ঠানের চাকরির আবেদন ফিও সর্বোচ্চ ২০০ টাকা।’

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকেও বিষয়টি মানার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ব্যাংক-বিমাতে এমন প্রতিষ্ঠান রয়েছে, দেড় হাজার থেকে ২ হাজার টাকাও আবেদন ফি নিয়ে থাকে। চাকরি হয় দুজনের হয়তো, আবেদন করে ২০০ জন।’ 

প্রতিবন্ধী প্রার্থীদের ক্ষেত্রে আলাদা ফি থাকবে না জানিয়ে সিনিয়র সচিব বলেন, ‘বিসিএসে যারা প্রতিবন্ধী প্রার্থী তাদের আলাদা ফি ছিল ১০০ টাকা। এটাকে কমিয়ে ৫০ টাকা করার প্রস্তাব এসেছিল। সাধারণ প্রার্থীর চেয়ে অতিরিক্ত এই টাকা তারা দিত, তাদের জন্য স্পেশাল অ্যারেজমেন্ট। আজ থেকে এই অতিরিক্ত টাকাটাও দেওয়া লাগবে না।’ ৪৭ তম বিসিএস থেকে সবাই ২০০ টাকা ফি দিয়ে আবেদন করতে পারবেন বলে তিনি জানান।

প্রসঙ্গত, সরকারি চাকরিতে আবেদন ফি কমানোর দাবি জানিয়ে আসছিল শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীরা। কিন্তু এ বিষয়ে কেউ পদক্ষেপ নেয়নি। সরকার পট পরিবর্তন হলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে বিষয়টি নিয়ে জোর দাবি জানানো হয়। অন্যান্য ছাত্র সংগঠন ও শিক্ষার্থীরাও এ নিয়ে সরব ছিলেন। যার প্রেক্ষিতে আবেদন ফি কমানোর সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।