জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে নয়াপল্টনে বিএনপির সমাবেশ ও পদযাত্রা কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে শুক্রবার (৮ নভেম্বর) ছুটির দিনেও রাজধানীজুড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। পদযাত্রা কর্মসূচির কারণে রাজধানীর নয়াপল্টন, কাকরাইল, শাহবাগ, বাংলামোটর, ফার্মগেট এলাকায় সৃষ্ট যানজটের প্রভাব রয়ে যায় রাত পর্যন্ত। এসব এলাকার যানজট ছড়িয়ে পড়ে অলিগলিতেও। তবে ছুটির দিনে অফিস থেকে ফেরার তাড়া না থাকায় মানুষের দুর্ভোগের মাত্রা ছিল কম। বেলা ৩টার পর থেকে রাজধানীতে বাসের সংখ্যা ছিল অপ্রতুল। এতে নগরীতে গণপরিবহনসংকট দেখা দেয়।
জানা যায়, নগরবাসীর দুর্ভোগ কমাতে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে শোভাযাত্রা কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি। সমাবেশে যোগ দিতে নেতা-কর্মীরা রাজধানীর ও শহরতলির বিভিন্ন পরিবহনের বাস ভাড়া করে সমাবেশস্থলে আসেন। বেলা ৩টায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ শুরু হয়। জুমার নামাজের পরই নয়াপল্টন এলাকায় বিএনপির ও অঙ্গসংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরা জড়ো হতে থাকেন। এ সময় রাজধানীর মালিবাগ, শান্তিনগর, কাকরাইল, সেগুনবাগিচা এলাকায় যানজট ছড়িয়ে পড়ে। দুপুর ২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত নগরীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে যানবাহন ও মানুষকে আটকে থাকতে দেখা গেছে। এতে জরুরি কাজে বের হওয়া মানুষ দুর্ভোগে পড়েন।
আড়াইটার দিকে শান্তিনগরের কর্ণফুলী মার্কেট প্লাজার সামনে গাজীপুর, মানিকগঞ্জ থেকে বিএনপির নেতা-কর্মীরা মিছিল নিয়ে জড়ো হন। তাদের নিয়ে আসা মিনিবাস ও পিকআপগুলো সড়কে এলোপাতাড়ি রাখায় ফ্লাইওভার থেকে কোনো গাড়ি নামতে পারছিল না। পরে পরিবহন শ্রমিক ও স্থানীয়দের অনুরোধে গাড়িগুলো সরানো হয়। তবে এতেও সড়কে যানজট কমেনি। মালিবাগ ফ্লাইওভার এলাকায় বেশ কিছু অটোরিকশাকে উল্টোপথে যেতে দেখা যায়।
বেলা পৌনে ৩টার দিকে শান্তিনগর মোড়ে সদরঘাট-আশুলিয়া রুটের ভিক্টর পরিবহনের চালক ইমরান হোসেন বলেন, ‘আমি বেলা দেড়টার পর থেকে আটকে আছি যানজটে। বাস সামনে এগোনোর উপায় ছিল না। যাত্রীরা নেমে গেছেন।’ একই রুটের বলাকা পরিবহনের চালক কাউসার হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘রাজনৈতিক সভা, সমাবেশ ঢাকাবাসীর জন্য নতুন কিছু না। রাস্তাঘাট আটকিয়ে মিছিল করছে। মানুষ কীভাবে কোন দিকে যাবে, সেটা নেতাদের ভাবার দরকার নেই।’
রাজধানীর রামপুরা থেকে ঠাটারিবাজার যাচ্ছিলেন মো. জুবায়ের। তিনি বলেন, ‘বাস থেকে নেমে হেঁটে চলেছি। কাকরাইল থেকে পুরানা পল্টন পর্যন্ত হেঁটে যাব। তারপর বাকি পথ রিকশায়। বেলা সাড়ে ৩টার দিকে পুরান ঢাকার বংশাল, তাঁতীবাজার মোড়, রায়সাহেব বাজার মোড় এলাকা ঘুরে গণপরিবহনের সংকট দেখা গেছে। অনেক মানুষকে হেঁটে গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে। ৪টার দিকে তাঁতীবাজার মোড়ে কথা হয় শফিকুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আধা ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করে আছি, মিরপুরে যাব। কিন্তু বাস খুব কম। যে কয়টা বাস এসেছে তাতেও ওঠার উপায় নেই।’
শুক্রবার বিকেলে পুরান ঢাকার পথ অনেকটা ফাঁকা দেখা যায়। শাঁখারীবাজার মোড়ে কথা হয় কয়েকজন বাস চালকের সঙ্গে। তারা জানান, বিএনপির নেতা-কর্মীরা রিক্যুইজিশন করে ফেলায় সড়কে বাস কম। ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির নেতারাও এ তথ্য স্বীকার করেন।
বিকেল ৪টার দিকে বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচি মৎস্য ভবন এলাকা অতিক্রম করলে তার প্রভাব পড়ে কাকরাইল, বেইলি রোড, জাতীয় প্রেসক্লাব, হাইকোর্ট এলাকায়। প্রেসক্লাব থেকে বাসগুলো কদম ফোয়ারা মোড় হয়ে বামে হাইকোর্ট চত্বর দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ঢুকে পড়ে। এতে বাংলা একাডেমি, টিএসসি ও নীলক্ষেত এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাসেল সরকার বলেন, ‘শুক্রবার ক্যাম্পাসে তুলনামূলকভাবে অনেক মানুষের আনাগোনা হয়। বিএনপির কর্মসূচি চলায় দুর্ভোগ আরও বেড়েছে। ঢাবি ক্যাম্পাস রাজনৈতিক কর্মসূচির আওতামুক্ত রাখতে পারলে ভালো হয়।’