পিআইবিতে ‘অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশ: মানুষ কী ভাবছেন’ শীর্ষক সভা। ছবি: সংগৃহীত
অন্তর্বর্তী সরকারের চেয়ে নির্বাচিত সরকার ভালোভাবে দেশ পরিচালনা করতে পারবে বলে মনে করেন দেশের ৭৯ শতাংশ মানুষ। আর রাজনৈতিকভাবে দেশ সঠিক পথে অগ্রসর হচ্ছে বলে অভিমত ৫৬ শতাংশ মানুষের।
বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) রাজধানীর পিআইবিতে ‘অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশ: মানুষ কী ভাবছেন’ শীর্ষক সভায় উপস্থাপিত জরিপের ফলাফলে এসব তথ্য জানানো হয়। জরিপটি পরিচালনা করে ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি)। ‘পালস সার্ভে দ্বিতীয় ধাপ: অক্টোবর ২০২৪’ শীর্ষক এই জরিপে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও নানা বিষয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ৪ হাজার ১৫৮ জনের মতামত নেওয়া হয়।
জরিপের ফলাফল অনুযায়ী, ৫৬ শতাংশ মানুষ বিশ্বাস করেন দেশ রাজনৈতিকভাবে সঠিক পথে অগ্রসর হচ্ছে। ৩৪ শতাংশ মনে করে ভুল পথে যাচ্ছে। অপরদিকে ৫২ শতাংশ মনে করে অর্থনৈতিকভাবে দেশ সঠিক পথে নেই। ৪৩ শতাংশের মত সঠিক পথে রয়েছে। এই বিষয়ে গত আগস্ট মাসে মানুষের যে প্রত্যাশা ছিল সে তুলনায় হতাশা প্রকাশ পেয়েছে। এ ছাড়া ৪৬ শতাংশ মানুষ মনে করেন সহনশীলতা বৃদ্ধি পেয়েছে। আর ৩১ শতাংশ মনে করে হ্রাস পেয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকার নিয়ে ৪০ শতাংশ মানুষ মনে করেন এই সরকারের মেয়াদ দুই বছর হওয়া উচিত। ৪৬ শতাংশের অভিমত এক বছর। আর তিন বছর থাকার পক্ষে মত দিয়েছেন ২৪ শতাংশ মানুষ, যা আগস্ট মাসে ছিল ৩৮ শতাংশ। ৪৬ শতাংশ মনে করে সরকার জনগণের মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে। ৫৬ শতাংশ মনে করে সরকার দৃঢ়ভাবে দেশ চালাচ্ছে। তবে ৩৯ শতাংশ ভিন্নমত পোষণ করে। ৭৯ শতাংশ মানুষ অভিমত দেন যে, নির্বাচিত একটি রাজনৈতিক সরকার অন্তর্বর্তী সরকারের চেয়ে দেশ ভালোভাবে পরিচালনা করতে পারে। ১৫ শতাংশ এই মতের বিপক্ষে অবস্থান নেন।
অপরদিকে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে ১৬ শতাংশ মানুষ বিএনপিকে, ১১ শতাংশ জামায়াতে ইসলামীকে এবং ৯ শতাংশ আওয়ামী লীগকে ভোট দেবেন বলে জানিয়েছেন। ৩৮ শতাংশ মানুষ এখনো ভোট দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেননি। আর ৪০ শতাংশ মানুষ শিক্ষার্থীরা রাজনৈতিক দল গঠন করলে তাদের ভোট দেবেন বলে মত দিয়েছেন।
জরিপের ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার যখন দায়িত্ব নেয়, তখন দেশের অর্থনীতি ও রাজনীতি ভঙ্গুর অবস্থায় ছিল। এই সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর মাত্র চার মাস অতিবাহিত হয়েছে। বর্তমানে দেশে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এই সংক্ষিপ্ত সময়কালে একাধিক জটিল সমস্যার সমাধান করা অত্যন্ত কঠিন বটে। তবে আমরা সবাই মিলে দেশের উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করার জন্য দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, জনগণ অন্তর্বর্তী সরকারের কাছ থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিকল্পনা চায়, যাতে তারা বুঝতে পারে সরকার কীভাবে এবং কী কী কাজ করে দেশের উন্নতি করবে।
পিআইবির মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ বলেন, অভ্যুত্থানের পর জনগণের উচ্ছ্বাস তাদের প্রত্যাশাকেও অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু বাস্তবতার কারণে জনগণের সেই প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। জনমনে এত প্রত্যাশা জন্মানোর পেছনে সরকারের বার্তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে এবং এই বার্তা পুনর্মূল্যায়ন করা জরুরি।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বিআইজিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ইমরান মতিন। প্রতিষ্ঠানটির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. মির্জা এম হাসান, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) পরিচালক ড. আহমেদ আহসান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।