রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমিতে নাটক মঞ্চায়নের ইস্যুতে যে অস্থিরতা চলছে, তা দ্রুত নিরসন করে নাট্যচর্চায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন নাট্যকর্মীরা। নাট্যচর্চায় বাধা দেওয়া দুর্বৃত্তদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনার জোর দাবিও জানিয়েছেন তারা।
গতকাল শনিবার সকালে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা ভবনের সেমিনার কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এই দাবি জানান। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল কামাল বায়েজিদ। এ সময় অভিনেতা, নির্দেশক, নাট্যকারসহ মঞ্চশিল্পীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ঝুনা চৌধুরী, মাসুম রেজা, আকতারুজ্জামান, তপন হাফিজ, ফেডারেশনের অনুষ্ঠান সম্পাদক খন্দকার শাহ আলম।
কামাল বায়েজিদ বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নাট্যচর্চা চালিয়ে যেতে চাই। কিন্তু বিক্ষোভের নামে কিছু উচ্ছৃঙ্খল ব্যক্তি শিল্প-সংস্কৃতিকে ধ্বংস করতে চাইছে। তাই নাট্য প্রদর্শনী চালিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা চাই।’
তিনি বলেন, নাটকের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয় ও কোনো প্ল্যাটফর্ম বা সুনির্দিষ্ট পরিচয় নেই এমন কয়েকজন ব্যক্তি গত ২ নভেম্বর হুমকি দিয়ে ‘নিত্যপুরাণ’ নাটকের প্রদর্শনী বন্ধ করেছে। এদের ‘দুষ্কৃতকারী’ হিসেবে উল্লেখ করে কামাল বায়েজিদ বলেন, তারা শুক্রবার বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটারের প্রতিবাদ সমাবেশে হামলা করেছে। বিক্ষোভকারী নামধারীর এসব উচ্ছৃঙ্খল ব্যক্তির অনাকাঙ্ক্ষিত কর্মকাণ্ডে নাট্যচর্চায় সংকট নেমে এসেছে। ভিডিও ফুটেজ দেখে দুর্বৃত্তদের শাস্তির আওতায় এনে শিল্প-সংস্কৃতিচর্চার সুষ্ঠু পরিবেশ রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান কামাল। তবে সেই পরিবেশ সৃষ্টি না হলে আগামী ১৫ নভেম্বর রাজধানীসহ দেশের প্রতিটি জেলায় গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন প্রতিবাদ সমাবেশ করবে বলে জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে নাট্যকর্মীরা অভিযোগ করেন, গত শুক্রবার শিল্পকলা একাডেমির প্রধান ফটকের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশে নাট্যজন মামুনুর রশীদ বক্তব্য রাখছিলেন। সেই সময় কিছু দুষ্কৃতকারী দুদকের গেটের দিক থেকে সমাবেশ লক্ষ্য করে ইট ও ডিম ছুড়ে মারে। এতে অনেকে আঘাতপ্রাপ্ত হন। এ সময় দায়িত্বরত পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ‘যথাযথ দায়িত্ব পালন করেননি’। এতে নাটক দেখতে আসা অনেক দর্শক শিল্পকলা একাডেমি ছেড়ে যান।
সংবাদ সম্মেলনের বাইরে বিক্ষোভ, ৪ জন থানায়
এদিকে গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সংবাদ সম্মেলন চলাকালে শিল্পকলা একাডেমির মেইন গেটের সামনে প্ল্যাকার্ড নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন ১০ থেকে ১৫ জন বিক্ষোভকারী। প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল ‘আবু সাঈদ মুগ্ধ/শেষ হয়নি যুদ্ধ’, ‘তুমি কে আমি কে বাংলাদেশ বাংলাদেশ’। তাদের কাছে পরিচয় জানতে চাইলে তারা ‘সাধারণ জনতা’ বলে নিজেদের পরিচয় দেন। তবে তারা নিজেদের নাম বলতে রাজি হননি। তাদের একজন এ সময় বলেন, ‘আমি সংস্কৃতি অঙ্গনের কেউ না। তবে দেশ নাটকের এহসান বাবু আওয়ামী লীগের দালাল। আমাদের উপদেষ্টাদের নিয়ে কটূক্তি করে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছে। আমরা তার নাটক এখানে করতে দেব না।’
এহসান বাবুর কোনো নাটক তিনি দেখেছেন কি না বা কোনো সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত আছেন কি না প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমি মালিবাগে থাকি, সংস্কৃতি অঙ্গনের কেউ না।’ পরে প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়ানোদের মধ্য থেকে চারজনকে রমনা থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।
নাট্যকর্মীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে গতকাল সন্ধ্যায় জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে আরণ্যক নাট্যদল ‘কম্পানি’ নাটকের প্রদর্শনী বাতিল করেছে।