সড়কে মৃত্যুর মিছিল কমছে না; একের পর এক দুর্ঘটনায় সড়ক ব্যবস্থাপনার ত্রুটি আর গাফিলতিকে বড় করে তুলে ধরছে। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পরিসংখ্যান বলছে, গত অক্টোবর মাসে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৪৪৩টি। এসব দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৪৬৯ জন এবং আহত হয়েছেন ৮৩৭ জন।
রবিবার (১০ নভেম্বর) গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি এই পরিসংখ্যান প্রকাশ করে।
বেসরকারি এই প্রতিষ্ঠানের তথ্য বলছে, গত সেপ্টেম্বর মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় ৪২৬ জন নিহত হয়েছিল। এই হিসাবে অক্টোবরে দুর্ঘটনার হার বেড়েছে ১১ দশমিক শূণ্য ১ শতাংশ; মৃত্যুর হার বেড়েছে ১০ দশমিক শূণ্য ৯ শতাংশ।
সেপ্টেম্বর মাসে প্রতিদিন গড়ে নিহত হয়েছিল ১৪ দশমিক ২ জন। অক্টোবর মাসে প্রতিদিন গড়ে নিহত হয়েছে ১৫ দশমিক ১২ জন।
গত সেপ্টেম্বর মাসে পথচারী নিহত হওয়ার ঘটনা কিছুটা কমে এলেও অক্টোবরে সেই সংখ্যা ফের শতকের ঘর ছাড়িয়েছে। পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, গত অক্টোবর মাসে দুর্ঘটনায় ১০২ জন পথচারী নিহত হয়েছেন, যা মোট নিহতের ২১ দশমিক ৭৪ শতাংশ। এ বছর জুন মাসে সর্বোচ্চ ১২৮ জন পথচারী সড়কে প্রাণ হারান; সেপ্টেম্বরে যা ছিল ৯৭ জন। এর আগের তিন মাসে এই সংখ্যাটি শতকের ঘর ছাড়িয়ে গিয়েছিল। পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, গত অক্টোবর মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় ৫৩ জন শিশু ও ৫৮ জন শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন।
গত অক্টোবর মাসে ২০৮টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত ১৯৬ জন, যা মোট নিহতের ৪১.৭৯ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৪৬.৯৫ শতাংশ। দুর্ঘটনায় যানবাহনভিত্তিক নিহতের পরিসংখ্যানে দেখা যায়- অক্টোবর মাসে দুর্ঘটনায় ৩১ জন বাস যাত্রী, ২০ জন ট্রাক-কাভার্ডভ্যান-পিকআপ-ট্রলি লরি আরোহী ২০ জন, ১২ জন প্রাইভেটকার-মাইক্রোবাস-অ্যাম্বুলেন্স আরোহী ১২ জন, ৯৪ জন ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-টমটম যাত্রী ৯৪ জন, ১০ জন নসিমন-করিমন যাত্রী নিহত হয়েছেন।
দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ১৭৩টি জাতীয় মহাসড়কে, ১৬২টি আঞ্চলিক সড়কে, ৬৪টি গ্রামীণ সড়কে এবং ৩৮টি শহরের সড়কে এবং ৬টি অন্যান্য স্থানে সংঘটিত হয়েছে। এসব দুর্ঘটনার মুখোমুখি সংঘর্ষে ১১২টি, নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ১৭১টি, পথচারীকে চাপ বা ধাক্কা দিয়ে ১০৪টি, যানবাহনের পেছনে আঘাত করে ৪২টি এবং অন্যান্য কারণে ১৪টি ঘটনা ঘটেছে।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি ২৬ দশমিক ১৮ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটেছে মধ্যরাতে; সকালে এই হার ২৬ দশমিক ৬৩ শতাংশ। সবচেয়ে কম ৫ দশমিক ৪১ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটেছে ভোরে।
দুর্ঘটনার বিভাগওয়ারী পরিসংখ্যান বলছে, গত অক্টোবর মাসে ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি ১৩১টি দুর্ঘটনায় ১৪৪ জন নিহত হয়েছেন। সিলেট বিভাগে সবচেয়ে কম ২২টি দুর্ঘটনায় ২৪ জন নিহত হয়েছেন। একক জেলা হিসেবে চট্টগ্রাম জেলায় ৩৪টি দুর্ঘটনায় ৩৯ জন নিহত হয়েছে। সবচেয়ে কম মাগুরা, ঝালকাঠি, বরগুনা ও পঞ্চগড় জেলায়। এই ৪টি জেলায় কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটলেও প্রাণহানি ঘটেনি। রাজধানী ঢাকায় ২৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২১ জন নিহত এবং ৩৪ জন আহত হয়েছে।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান বলেন, ‘অধিকাংশ দুর্ঘটনা ঘটছে অতিরিক্ত গতির কারণে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে। এই গতি নিয়ন্ত্রণে প্রযুক্তির মাধ্যমে নজরদারী এবং চালকদের মোটিভেশনাল প্রশিক্ষণ দরকার। বেপরোয়া যানবাহন এবং পথচারীদের অসচেতনতার কারণে পথচারী নিহতের ঘটনা বাড়ছে। তাই সরকারি উদ্যোগে গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জীবনমুখি সচেতনতামূলক প্রচারণা চালাতে হবে।’
সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করতে সড়ক পরিবহন নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবস্থাপনা ও কাঠামোগত সংস্কার করে প্রাতিষ্ঠানিক জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার পরামর্শও দিয়েছেন তিনি।
জয়ন্ত সাহা/এমএ/