বাংলাদেশ ও ভারতের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে নানা পরিবর্তন, পেশাগত চ্যালেঞ্জ, উত্থান-পতন সত্ত্বেও পারস্পরিক সংবেদনশীলতা, বিশ্বাস ও শ্রদ্ধার ভিত্তিতে এই সম্পর্ক টিকে আছে। ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা এ মন্তব্য করেছেন।
‘বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে ভারতের সামরিক ও কূটনৈতিক ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী দিবস উপলক্ষে শনিবার (৭ ডিসেম্বর) এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘরে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ-ভারত ইতিহাস ও ঐতিহ্য পরিষদ।
প্রণয় ভার্মা বলেন, ‘আমাদের সুসম্পর্কের ভিত্তি হচ্ছে বিশ্বাস, যেখানে অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি পরস্পরের সঙ্গে জড়িত। প্রতিবেশী দেশ হিসেবে আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ, গঠনমূলক সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করেছি। এর ভিত্তি ছিল সমতা, পারস্পরিক শ্রদ্ধা, পারস্পরিক বোঝাপড়া। আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে দুই দেশের জনগণ প্রধান অংশীদার। যে সম্পর্ক আমরা তৈরি করেছি, তার প্রধান উদ্দেশ্য দুই দেশের জনগণের উন্নয়ন। এতে দুই দেশের জনগণই উপকৃত। দুই দেশের বর্ডার ট্রান্সপোর্ট, ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য সম্পর্ক, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সঞ্চালন, আমাদের অর্থনৈতিক সংযোগ- এগুলো মূলত আমাদের জনগণের সমৃদ্ধি তৈরি করে এবং তাদের কল্যাণে অবদান রাখে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের সমাজ গভীরভাবে সংযুক্ত। আমরা কেউ এককভাবে সমৃদ্ধি অর্জন করতে পারব না। আমরা আমাদের ভৌগোলিক ঘনিষ্ঠতাকে ক্রমবর্ধমান ক্ষমতা এবং নতুন উচ্চাকাঙ্ক্ষা দ্বারা চালিত নতুন সুযোগে রূপান্তর করতে চাই। এটা সত্য যে বাংলাদেশে অশান্ত পরিবর্তন সত্ত্বেও আমাদের বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক, আমাদের পরিবহন ও জ্বালানি সহযোগিতা, আমাদের জনগণের সঙ্গে জনগণের সম্পৃক্ততা ইতিবাচক গতি বজায় রেখেছে- যা প্রমাণ করে আমাদের সম্পর্ক সত্যিই স্থিতিশীল।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের চারপাশে যা পরিবর্তন হচ্ছে তা পারস্পরিক নির্ভরতার বাস্তবতা এবং পারস্পরিক সুবিধা সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকবে।’
ভারতীয় হাইকমিশনার বলেন, ‘৫৩ বছর আগে ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশকে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় ভারত। ইতিহাসগতভাবেই ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ক অনেক স্মরণীয়। কারণ বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার ১০ দিন আগেই ভারত স্বীকৃতি দেয়। এটি একটি মাইলফলক, যা কখনো মুছে ফেলা যায় না। ওই তারিখটি দুই দেশের অংশীদারত্বের একটি বড় চিহ্ন।’
তিনি বলেন, ‘গত ৫৩ বছরে বাংলাদেশ অনেক কিছু অর্জন করেছে। ১৯৭১ সাল থেকে বাংলাদেশ এবং ভারত অনেক দূর এগিয়েছে, উন্নতি করেছে দ্রুতগতির সঙ্গে। দ্রুতগতির অর্থনীতি, ধারাবাহিক উন্নতি, মানুষের উন্নত ভবিষ্যতের আকাঙ্ক্ষার উন্নয়ন দুই দেশের মধ্যে নতুন সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে। যা আজ আমাদের বহুমুখী দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক একে অপরের উন্নয়নের পরিপূরক।’
বাংলাদেশ-ভারত ইতিহাস ও ঐতিহ্য পরিষদের সভাপতি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন পাহাড়ির (বীর প্রতীক) সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক এরশাদুল ইসলামের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন শিল্পকলা একাডেমির সাবেক পরিচালক মনিরুজ্জামান, বীর মুক্তিযোদ্ধা নাজির আহমেদ চৌধুরী, বাচিকশিল্পী টিটু মুনশী প্রমুখ। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ও ভারতের জাতীয় সংগীতসহ বিভিন্ন রণসংগীত ও দেশাত্মবোধক গান পরিবেশন করেন শিল্পীরা।
এমএ/