বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে নির্বাচনের পদ্ধতি পরিবর্তনের চেয়ে যোগ্য নির্বাচন কমিশন এবং চলমান পদ্ধতি যথাযথভাবে কার্যকর করা বেশি জরুরি বলে মনে করছেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) মোহাম্মদ আবু হেনা।
সোমবার (১১ নভেম্বর) আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে নির্বাচন সংস্কারবিষয়ক কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
আর সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, নির্বাচন ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে সবার মতামতের ভিত্তিতেই তাদের সংস্কার প্রস্তাবনা তৈরি কাজ চলছে। কমিশনের সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন হলে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথ সুগম হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সাবেক সিইসি আবু হেনা বলেন, ‘কমিশনের আমন্ত্রণে এসেছিলাম। অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছি। আমি ১৯৯২ সালের ১২ জুন সাধারণ নির্বাচন পরিচালনা করেছি। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে যারা আহত, নিহত হয়েছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি। আগামী নির্বাচন নিয়ে আমার কিছু সুপারিশ আছে। আমি তাদের বলেছি, আশা করি তারা বিবেচনা করবেন। আমি চাই দেশে আগামীতে যে নির্বাচন হবে, সাধারণ বা অন্য নির্বাচন যাই হোক, সেগুলো যেন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয় এবং দেশের কল্যাণ হয়।’
নির্বাচনব্যবস্থার সংস্কার ও নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন প্রশ্নে সাবেক সিইসি বলেন, ‘আইন যত ভালোই হোক না কেন, প্রয়োগ না হলে সুফল আসে না। যত রিফর্ম করেন না কেন, নির্বাচন কমিশনে যোগ্য সিইসি ও যোগ্য কমিশনারদের দরকার। তারা যদি যোগ্য না হন তবে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। কারণ নির্বাচনের সফলতা নির্ভর করে নির্বাচনি আইন প্রয়োগের ওপর। এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। আর আইন শুধু সংশোধন করলেই হয় না। আইনের প্রয়োগে দরকার যোগ্য লোক। কোনো দলের সঙ্গে সম্পৃক্ততা নেই, সুনাম আছে এরকম লোক দরকার। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কমিটমেন্ট থাকলে সেটা করা যায়। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির উন্নয়ন। এ ছাড়া প্রার্থী নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া, ওপর থেকে প্রার্থী আরোপ করা নয়, তৃণমূল থেকে প্রার্থীদের উঠে আসার সুযোগ রাখতে হবে। ভোটের মাধ্যমে স্থানীয় পর্যায়ে নির্বাচনের মাধ্যমে যোগ্য প্রার্থী দিতে হবে। এটা যদি সব দল বাস্তবায়ন করে তবে দেশের জন্য কল্যাণ হবে।’
নির্বাচনের পদ্ধতি সম্পর্কে আবু হেনা বলেন, ‘আমি মনে করি নির্বাচন পদ্ধতি পরিবর্তনের কোনো প্রয়োজন নেই। দেশের চলমান যে পদ্ধতি রয়েছে, সেটা যথাযথ বাস্তবায়ন হতে পারে। কারণ দেশের মানুষ এই পদ্ধতির সঙ্গে পরিচিত এবং সেটা মানুষের কাছে পরীক্ষিত, এই সিস্টেমই কার্যকর করে তোলা দরকার। নতুন কোনো সিস্টেম দরকার আছে বলে মনে করি না।’
সংসদের পদ্ধতিগত পরিবর্তনের প্রয়োজন আছে কী? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘সংসদ কত কক্ষের হবে, এটা দলগুলোর ওপর ছেড়ে দেওয়া ভালো। দ্বিকক্ষবিশিষ্ট হবে নাকি বর্তমান সিস্টেমে চলবে, এটি রাজনৈতিক দলগুলো ঠিক করবে।’
এ সময় নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে কমিশন প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘সব আইন-কানুন, বিধিবিধান আমরা পর্যালোচনা করছি। এ পর্যন্ত ১৭ থেকে ১৮টি মিটিং করেছি। আমাদের অগ্রগতি নিয়ে আমরা সন্তুষ্ট। কিছু দলের মতামত পেয়েছি। অনেক ইস্যু চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি এবং এর গভীরে যাওয়ার চেষ্টা করছি। এগুলো আইনে কীভাবে প্রতিফলিত হবে সেগুলোর প্রতি নজর দিচ্ছি। আশা করছি, যথাসময়ে আমাদের প্রস্তাবনা সরকারের কাছে পেশ করতে পারব।’
রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে প্রস্তাব পেয়েছেন কি না, জানতে চাইলে কমিশন প্রধান বলেন, ‘আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিকভাবে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে অনেক প্রস্তাব পেয়েছি। আরও পাব আশা করি। এসবের মধ্যে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের বিষয়ে কেউ পক্ষে, কেউ বিপক্ষে প্রস্তাব করেছে। আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের বিষয়ে যদি সিদ্ধান্ত হয় তাহলে তো সংবিধান সংশোধন করতে হবে। যদিও এ বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেইনি। এ রকম অনেক বিষয় আছে, যে কারণে সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন হতে পারে। সংবিধান সংশোধনের বিষয়ে যে কমিশন আছে, প্রধানত তাদেরই সুপারিশ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে আমরা সংশ্লিষ্ট কমিশনের সঙ্গেও বসে কাজ করব। সবার মতামতের ভিত্তিতে সুপারিশমালা উপস্থাপন করব, আশা করি তা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথ সুগম করবে।’
রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বসা প্রসঙ্গে ড. বদিউল আলম বলেন, ‘তাদের সঙ্গে তো আমাদের (কমিশনের) কোনো লেনদেনের কিছু নেই। আমাদের কাজটি কারিগরি, সুপারিশ করা কীভাবে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করা যায়। আমরা তাদের কাছ থেকে সুপারিশ পাওয়ার চেষ্টা করছি। সম্ভব হলে সাবেক সিইসিদের সঙ্গে বসে তাদের মতামত জানার ইচ্ছা আমাদের রয়েছে। সাংবাদিকদের সঙ্গেও আমরা বসব।’