ঢাকা ৩ ফাল্গুন ১৪৩১, রোববার, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
English
রোববার, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৩ ফাল্গুন ১৪৩১

ভয়েস অব আমেরিকার জরিপ আগের চেয়ে এখন বেশি নিরাপত্তা পাচ্ছেন সংখ্যালঘুরা

প্রকাশ: ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৪০ পিএম
আগের চেয়ে এখন বেশি নিরাপত্তা পাচ্ছেন সংখ্যালঘুরা
ভয়েস অব আমেরিকা (ভিওএ) বাংলায় প্রকাশিত জরিপ নিয়ে প্রতিবেদনের স্ক্রিনশট। ছবি: ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া

জুলাই-আগস্টের গণ-আন্দোলনের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার দেশের ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীকে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের চেয়ে বেশি নিরাপত্তা দিতে পারছে বলে মনে করছেন বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ভয়েস অব আমেরিকা (ভিওএ) বাংলার এক জরিপে এই তথ্য জানা গেছে। তবে জরিপের ফলাফলে নিরাপত্তা নিয়ে ধারণায় মুসলিম ও অমুসলিমদের মধ্যে কিছুটা পার্থক্য লক্ষ্য করা গেছে।

গত অক্টোবর মাসের শেষের দিকে পরিচালিত জরিপে দেখা গেছে, ৬৪ দশমিক ১ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের তুলনায় অন্তর্বর্তী সরকার ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীকে বেশি নিরাপত্তা দিচ্ছে। মাত্র ১৫ দশমিক ৩ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন, বর্তমান সরকার সংখ্যালঘুদের জন্য আগের চেয়ে খারাপ নিরাপত্তা দিচ্ছে। ১৭ দশমিক ৯ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন, পরিস্থিতি আগের মতোই আছে।

জরিপে এক হাজার উত্তরদাতাকে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের আমলের সঙ্গে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনের তুলনা করতে বলা হয়। বাংলাদেশের জনতত্ত্বের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জরিপের জন্য এক হাজার উত্তরদাতা বাছাই করা হয়। উত্তরদাতাদের মধ্যে সমানসংখ্যার নারী ও পুরুষ ছিলেন, যাদের মধ্যে ৯২ দশমিক ৭ শতাংশ মুসলিম। উত্তরদাতাদের মধ্যে অর্ধেকের একটু বেশির বয়স ৩৪ বছরের নিচে এবং প্রায় এক-চতুর্থাংশ শহুরে মানুষ।

বাংলাদেশে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে যে প্রতিশোধপ্রবণতা লক্ষ করা যায়, তার বড় ধাক্কাটি গিয়ে পড়ে দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘু, বিশেষ করে সনাতন ধর্মাবলম্বী বা হিন্দুদের ওপর। দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় স্থাপনাগুলোতে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।

বাংলাদেশের মানবাধিকারকর্মী নূর খান বলেন, ‘আমরা দেখেছি, সংখ্যালঘুদের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার কারণে তাদের ওপর আক্রমণ হয়েছে। আবার শুধু সংখ্যালঘু হওয়ার কারণেও তাদের ওপর হামলা হয়েছে। পঞ্চগড়ে আহমদিয়াদের আবাসস্থলেও হামলা চালানো হয়েছে, অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।’

সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত গুম কমিশনের একজন সদস্য নূর খান। ভয়েস অব আমেরিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘বেশ কিছু দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ আমরা লক্ষ করেছি সাধারণ মানুষের তরফ থেকে, রাজনৈতিক দলের তরফ থেকে এবং ধর্মীয় গোষ্ঠীর তরফ থেকে। এর ফলে দেখা গেছে, পরবর্তী এক মাসের মধ্যেই অবস্থার উন্নতি হয়েছে।’

ভয়েস অব আমেরিকার জরিপের ফলাফলে নিরাপত্তা নিয়ে ধারণায় মুসলিম ও অমুসলিমদের মধ্যে কিছুটা তফাত লক্ষ করা গেছে। মুসলিম উত্তরদাতাদের মধ্যে ৬৬ দশমিক ১ শতাংশ মনে করছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের চেয়ে অন্তর্বর্তী সরকার সংখ্যালঘুদের বেশি নিরাপত্তা দিচ্ছে। আর তাদের মধ্যে মাত্র ১৩ দশমিক ৯ শতাংশ মনে করেন, বর্তমান পরিস্থিতি আগের থেকে খারাপ। অন্যদিকে ধর্মীয় সংখ্যালঘু উত্তরদাতাদের মধ্যে ৩৯ দশমিক ৫ শতাংশ মনে করেন, বর্তমানে তারা বেশি নিরাপত্তা পাচ্ছেন এবং ৩৩ দশমিক ৯ শতাংশ মনে করেন, তাদের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকার বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের চেয়ে খারাপ করছে। অর্থাৎ সংখ্যালঘুদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ মনে করে, আগের তুলনায় তারা বেশি নিরাপত্তা পাচ্ছে।

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার সংখ্যালঘুদের ওপর হামলাকে ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ বলে অভিহিত করেছে। তারা বলছে, ফায়দা হাছিল করতে হিন্দুদের ওপর নির্যাতনের খবর ‘অতিরঞ্জিত’ করে প্রচার করা হচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিন পূর্তি উপলক্ষে গত ১৭ অক্টোবর জাতির উদ্দেশে ভাষণে ড. ইউনূস বলেন, ‘কয়েকটি ক্ষেত্রে সংখ্যালঘুরা সহিংসতার শিকার হয়, কিন্তু সেগুলো ছিল রাজনৈতিক। অল্প যেসব সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে, তার মূল কারণ ছিল রাজনৈতিক। কিন্তু এসব ঘটনাকে ধর্মীয় আবরণ দিয়ে উদ্দেশ্যমূলক নতুন করে সরকারকে অস্থিতিশীল করে তোলার চেষ্টা হয়েছে।’

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মীনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেন, ‘শেখ হাসিনার নিপীড়নমূলক শাসনের প্রতি ভারতের সমর্থনও হিন্দুদের ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে এবং ভবিষ্যতে নয়াদিল্লির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত, সব জায়গাতে সংখ্যালঘুদের অধিকার নিয়ে চিন্তিত হওয়া। কিন্তু যেসব গোষ্ঠী ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে ঘৃণা ও সহিংসতা ছড়াতে চায়, তাদের ব্যাপারে বিশেষ করে ভারতের আরও সাবধান হওয়া উচিত।’

মানবাধিকারকর্মী নূর খান জানান, বাংলাদেশে যেকোনো অজুহাতে হিন্দুদের নিশানা করার ঘটনা নতুন নয়। দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার সময় দুর্বলের প্রতি সবলের আঘাত বিগত দিনেও দেখা গেছে এবং এর প্রধান শিকার হয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ইতিবাচক ইঙ্গিত দেখতে পাচ্ছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের সময় যে শঙ্কা ছিল, সে শঙ্কা ক্রমান্বয়ে কেটে যাচ্ছে। এক ধরনের স্বস্তি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে আসতে শুরু হয়েছে। কিন্তু এখনই বলা যাবে না, তারা সম্পূর্ণ আস্থাশীল হতে পেরেছে কি না। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের আস্থার জায়গাটা আরও মজবুত হবে কি না, তা নির্ভর করবে আগামী ৬ থেকে ৯ মাসের কার্যক্রমের ওপর, সরকারের পদক্ষেপের ওপর।’

মানবাধিকারকর্মীরা মনে করছেন, ‘সংখ্যালঘুদের অধিকার ও নিরাপত্তা সম্পর্কে জনসমক্ষে আশ্বস্ত করতে সরকার ও ছাত্রনেতাদের আরও পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।’

ডিসি সম্মেলন শুরু আজ

প্রকাশ: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৩:০৫ এএম
আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১:৫২ পিএম
ডিসি সম্মেলন শুরু আজ
ছবি: সংগৃহীত

তিন দিনের জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলন আজ রবিবার থেকে শুরু হচ্ছে। সকাল সাড়ে ১০টায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এই সম্মেলন উদ্বোধন করবেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হবে তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের শাপলা হলে। আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি এই সম্মেলন শেষ হবে।

শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে সচিবালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশিদ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জনপ্রশাসন সচিব ড. মোখলেস উর রহমান ও স্বরাষ্ট্রসচিব ড. নাসিমুল গনি।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ডিসি সম্মেলনে সর্বমোট ৩৪টি অধিবেশন রয়েছে। এর মধ্যে কার্য-অধিবেশন রয়েছে ৩০টি। কার্য-অধিবেশনগুলো অনুষ্ঠিত হবে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে। বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকদের কাছ থেকে পাওয়া ১ হাজার ২৪৫টি প্রস্তাবের মধ্যে ৩৫৪টি প্রস্তাব কার্যপত্রে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই প্রস্তাবগুলো নিয়ে আলোচনা হবে।

প্রস্তাবগুলোর মধ্যে জনসেবা বৃদ্ধি, জনদুর্ভোগ হ্রাস করা, রাস্তাঘাট ও ব্রিজ নির্মাণ, পর্যটনের বিকাশ, আইনকানুন বা বিধিমালা সংশোধন, জনস্বার্থ সংরক্ষণের বিষয়গুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করা হয়েছে। বেশিসংখ্যক ২৮টি প্রস্তাব সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের। গতবারের ডিসি সম্মেলন ছিল চার দিনব্যাপী।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ডিসিদের মুক্ত আলোচনা এবং বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে ডিসিদের সভা হবে। এ ছাড়া সুপ্রিম কোর্টে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে ডিসিরা সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারদের সঙ্গে এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের সঙ্গে ডিসিদের কার্য-অধিবেশন রয়েছে।

জাতিসংঘের প্রতিবেদন আন্দোলনকারীদের ভয় দেখাতে ব্যবহার করা হয় হেলিকপ্টার

প্রকাশ: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১:৫০ পিএম
আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১:৪৯ পিএম
আন্দোলনকারীদের ভয় দেখাতে ব্যবহার করা হয় হেলিকপ্টার
ছবি: সংগৃহীত

জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতাকে ভয় দেখাতে র‌্যাব ও পুলিশের এভিয়েশন ইউনিট হেলিকপ্টার মোতায়েন করেছিল। সেনাবাহিনীরও এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টতা ছিল। বিক্ষোভকারীদের ভয় দেখানোর জন্য র‌্যাবের কালো রঙের হেলিকপ্টার মোতায়েন ছিল উল্লেখ করার মতো। এসব হেলিকপ্টার থেকে বিক্ষোভকারীদের ওপর বেআইনি বল প্রয়োগ করা হয়েছে।

জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের (ওএইচসিএইচআর) তথ্যানুসন্ধান দলের প্রতিবেদনে এই হেলিকপ্টার মোতায়েন ও বলপ্রয়োগের তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা ওএইচসিএইচআর তথ্যানুসন্ধান দলকে জানিয়েছেন, হেলিকপ্টার থেকে বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে রাইফেল ও শটগান দিয়ে গুলি করা হয়েছে। বিশেষ করে ১৯ ও ২০ জুলাই হেলিকপ্টার থেকে রাইফেল ও শটগান দিয়ে প্রাণঘাতী গুলি ছোড়ার কথা জানিয়েছেন তারা। 

প্রতিবেদনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে বলা হয়, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বিক্ষোভকারীদের ভয় দেখাতে আরও বেশি হেলিকপ্টার মোতায়েন করতে বলেছিলেন। তার কথামতো আন্দোলন দমাতে র‍্যাব হেলিকপ্টারের ব্যবহার করেছিল।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পুলিশের মহাপরিদর্শক ও র‍্যাবের মহাপরিচালক দুজনই হেলিকপ্টার থেকে বিক্ষোভকারীদের ওপর কাঁদানে গ্যাসের শেল এবং সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ার কথা স্বীকার করেছেন। তবে এই দুই কর্মকর্তার কেউ র‍্যাবের হেলিকপ্টার থেকে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা গুলি ছুড়েছিলেন কি না, তা নিশ্চিত করতে পারেননি।

প্রত্যক্ষদর্শীদের তথ্য অনুযায়ী, মিরপুরে (১৮ জুলাই), মহাখালীতে (১৮ জুলাই), ধানমন্ডিতে (১৮ ও ১৯ জুলাই), বাড্ডায় (১৯ জুলাই), মোহাম্মদপুরে (১৯ জুলাই), রামপুরায় (১৯ জুলাই), শাহবাগে (১৯ জুলাই), বসুন্ধরায় (১৯ জুলাই, ২ ও ৩ আগস্ট), গাজীপুরে (২০ জুলাই) এবং যাত্রাবাড়ীতে (২০ ও ২১ জুলাই) র‍্যাব ও পুলিশের হেলিকপ্টার থেকে বিক্ষোভকারীদের ওপর বারবার কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়া হয়। সেই সঙ্গে রামপুরায় ১৮ জুলাই সাউন্ড গ্রেনেডও ছোড়া হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীদের তথ্য অনুযায়ী, ১৯ থেকে ২১ জুলাই হেলিকপ্টার থেকে বাড্ডা, বসুন্ধরা, গাজীপুর, যাত্রাবাড়ী, মিরপুর, মহাখালী, মোহাম্মদপুর এবং রামপুরা এলাকায় গুলি ছুড়তে দেখা গেছে। ৫ আগস্ট যমুনা ফিউচার পার্ক এলাকায় হেলিকপ্টার থেকে ছোড়া গুলি এক ব্যক্তির শরীরে আঘাত করেছিল বলেও তথ্য পেয়েছে ওএইচসিএইচআর। তারা সেটি যাচাই করে দেখেছে।

ওএইচসিএইচআরকে দেওয়া র‍্যাবের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, র‌্যাব হেলিকপ্টার থেকে ৭৩৮টি কাঁদানে গ্যাসের শেল, ১৯০টি সাউন্ড গ্রেনেড এবং ৫৫৭টি স্টান গ্রেনেড ছুড়েছে। তবে তারা ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত হেলিকপ্টার থেকে একবারও রাইফেল অথবা শটগান দিয়ে গুলি ছোড়েনি বলে দাবি করেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হেলিকপ্টার থেকে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে বিক্ষোভকারীদের ভিড় লক্ষ্য করে নির্বিচার গুলি ছোড়া স্বাভাবিকভাবেই মানবাধিকারে সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। কিন্তু হেলিকপ্টার থেকে মারণঘাতী গুলি ছোড়া হয়েছিল কি না, সে ব্যাপারে ওএইচসিএইচআর নিশ্চিত হতে পারেনি।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময়ের হেলিকপ্টার থেকে নিরাপত্তা বাহিনীর অ্যাকশনের বেশ কয়েকটি ভিডিও বিশ্লেষণ করে দেখেছে ওএইচসিএইচআর। তারা দেখেছে, র‍্যাব ও পুলিশের হেলিকপ্টারে থাকা নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ছেন। দূর থেকে দেখলে ওই লঞ্চারগুলো রাইফেল অথবা শটগানের মতো দেখতে লাগে। তবে ওএইচসিএইচআর এমন কোনো ভিডিও হাতে পায়নি, যেখানে হেলিকপ্টার থেকে পরিষ্কারভাবে রাইফেল অথবা শটগান দিয়ে গুলি ছোড়ার বিষয়টি বোঝা যায়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রত্যক্ষদর্শীরা যে সময়ে হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালানো হয়েছে বলে দাবি করছেন, সে সময় সরকার মোবাইল ও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে রেখেছিল। ফলে তখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা ওয়েবসাইটে ভিডিও ফুটেজ ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব ছিল না। যেসব তথ্য পাওয়া গেছে, তার ভিত্তিতে হেলিকপ্টার থেকে রাইফেল বা শটগান দিয়ে গুলি ছোড়ার বিষয়টি যেমন নিশ্চিত করতে পারছে না, তেমনি বাতিল করতেও পারছে না।

তথ্যানুসন্ধানী দল বলেছে, ওপর থেকে আঘাতে যারা হতাহত হয়েছেন, তাদের কেউ কেউ ওপর থেকে ছোড়া কোনো রাইফেলের আঘাত পেয়েছেন বলে মনে হচ্ছে। অথবা ফাঁকা গুলি ছোড়া হয়েছিল, যা পরে ভূমিতে পড়ার সময় কারও গায়ে আঘাত করতে পারে।

এ বিষয়ে আরও তদন্ত প্রয়োজন বলে মত দিয়েছে জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধান দল। এতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পূর্ণ সহযোগিতা জরুরি বলে মন্তব্য করা হয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে যারা ওই সময় হেলিকপ্টারে দায়িত্বে ছিলেন, তাদেরও তদন্তের আওতায় আনা প্রয়োজন বলে উল্লেখ করা হয়েছে রিপোর্টে।

দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করে নির্বাচনে যাওয়াই লক্ষ্য: আলী রীয়াজ

প্রকাশ: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০:৪৮ পিএম
আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০:৫০ পিএম
দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করে নির্বাচনে যাওয়াই লক্ষ্য: আলী রীয়াজ
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর বৈঠকের পর সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। ছবি: সংগৃহীত

যত দ্রুত সম্ভব রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করে নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হওয়া যায়, সেই চেষ্টা করা হবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ।

শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর বেইলি রোডে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর বৈঠকের পর সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।

আলী রীয়াজ বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য ছিল, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাজের আনুষ্ঠানিক সূচনা করা। সেজন্য সব রাজনৈতিক দলগুলোকে তাদের নেতৃত্বাধীন ব্যক্তিদের পাঠানোর অনুরোধ করেছিলাম, যাতে করে তারা পরস্পরের সঙ্গে কেবল পরিচিতই হবেন না, পাশপাাশি তাদের বক্তব্যগুলোও যেন শোনা যায়।’

তিনি বলেন, ‘এখানে আজ কোনো রকমের সংলাপের বিষয় ছিল না। আজকের লক্ষ্য ছিল, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রক্রিয়া কী হবে— সে বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করা।’

‘মূলত: এক অর্থে এটিকে আমরা আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হিসেবে বিবেচনা করছি। এখানে দেশের ২৭টি রাজনৈতিক দল (বৈঠকে) উপস্থিত ছিল। সবগুলো দল ও জোটের পক্ষ থেকে শতাধিক ব্যক্তি অংশ নিয়েছেন, তাদের মধ্যে ৩২ জন কথা বলেছেন।’

সংবিধান সংস্কার কমিশনের এই প্রধান বলেন, ‘বৈঠকে যে বিষয়গুলো স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে, তা হচ্ছে— রাজনৈতিক দলগুলো মনে করছে যে জাতীয় ঐক্য রক্ষার আর কোনো বিকল্প নেই। সংস্কার প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে তারা তাদের দৃঢ়চিত্ততা প্রকাশ করেছে। তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রক্রিয়াকে সহযোগিতার পাশাপাশি এই প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণও করবেন।’

আলী রিয়াজ বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস যে বলেছেন, প্রতিটি রাজনৈতিক দল, নাগরিক ও সমাজের বিভিন্ন অংশের মানুষ হিসেবে আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে এই সংস্কার প্রক্রিয়াকে সুষ্ঠুভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া— রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে দেওয়া এই বক্তব্য সুস্পষ্টভাবে তা-ই প্রমাণ করে।’

‘সেই লক্ষ্য থেকেই আজকের এই বৈঠক। আমরা আশা করছি, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাজ এখন শুরু হবে। আমরা আলাদাভাবে সব রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কথা বলব; জোটগতভাবে কথা বলব; একপর্যায়ে আবার সবাইকে একত্রিত করে ফিরে আসব।’

তবে এই প্রক্রিয়াটিতে দীর্ঘসূত্রতা করতে চান না জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘স্বল্প কিছুদিনের মধ্যে করতে পারব বলে আশা করছি। এই প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়েছে, তাদের কাছে যেন সংস্কার প্রতিবেদনগুলোর হার্ডকপি পৌঁছে দেওয়া হয়; আমরা দ্রুত সেই পদক্ষেপ নেব।’

ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে কারও মধ্যে কোনো দ্বিধা-সংকোচ নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আশা করি, এই প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে পারব।’

সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করে এই সংলাপ শেষ করতে কতদিন লাগতে পারে— জানতে চাইলে আলী রীয়াজ বলেন, ‘এই কমিশনের মেয়াদই হচ্ছে ছয় মাস। সেক্ষেত্রে আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, যতদ্রুত সম্ভব আমরা ঐকমত্যে পৌঁছাতে চাই, কিন্তু ছয়টি কমিশনের প্রতিবেদন পর্যালোচনার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে তো সময় দিতে হবে! আমরা খুবই দ্রুততার সঙ্গেই এই প্রক্রিয়া শেষ করতে চাই।’

‘এই সংস্কার কর্মসূচি অগ্রসর হওয়া দরকার, ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করা দরকার, যাতে আমরা নির্বাচনে দিকে অগ্রসর হতে পারি।’

‘সেটি ছয় মাসের মধ্যে হবে কি না’ প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করছি, এই সময়ের চেয়েও কম সময়ের মধ্যে করার। রাজনৈতিক দলগুলোর আগ্রহ আছে। তবে এটা আকস্মিক হবে না। আমরা প্রতিবেদনগুলো পেয়েছি, রাজনৈতিক দলগুলো সেটা পর্যালোচনা করবে। তাদের যথেষ্ট পরিমাণ সময় দিতে হবে। কাজেই কিছুটা সময় লাগবে। লক্ষ্য থাকবে, যত দ্রুত সংলাপ ও আলোচনা শুরু করা যায়, সেদিকে।’ সূত্র: ইউএনবি

এমএ/

আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতেই পিলখানা হত্যাকাণ্ড: অ্যাটর্নি জেনারেল

প্রকাশ: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০:১৫ পিএম
আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতেই পিলখানা হত্যাকাণ্ড: অ্যাটর্নি জেনারেল
বিডিআর হত্যাকাণ্ড নিয়ে আয়োজিত ছায়া সংসদে প্রধান অতিথি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। ছবি: সংগৃহীত

অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেছেন, পিলখানা হত্যাকাণ্ডে আমরা জাতির সূর্যসন্তানদের হারিয়েছি। তাদের হারানোর মাধ্যমে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের ভিতকে আঘাত করা হয়েছে। ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাকে হত্যার মাধ্যমে বাংলাদেশের কবর রচনা করে নৈরাজ্যবাদের জন্ম দিয়েছিল পতিত আওয়ামী সরকার। ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতা-কর্মীরা বিডিআরের পোশাক পরে পিলখানা হত্যাকাণ্ডে অংশ নিয়েছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। পিলখানা হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ডদের অনেকেই এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে আছেন। তাদের বিচারের আওতায় আনার প্রক্রিয়া চলছে। 

শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর এফডিসিতে বিডিআর হত্যাকাণ্ড নিয়ে আয়োজিত ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।

আসাদুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশের ওপর আধিপত্যবাদী শক্তির দখলদারত্ব কায়েমের জন্য আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশই ছিল পিলখানা হত্যাকাণ্ড। এটি কোনো বিদ্রোহ ছিল না, ছিল পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে বিপন্ন করে দেশকে চোরাবালির সন্ধিক্ষণে দাঁড় করানো হয়েছিল। একটি রাষ্ট্র বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে বাংলাদেশে লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করেছিল। আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে খুন-গুমের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিকে আশ্রয় দিয়ে সেই রাষ্ট্র বাংলাদেশের মানুষের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে। 

সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দ্বিতীয়বার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর দুই মাসের মাথায় ঢাকার পিলখানায় দেশের ইতিহাসে কলঙ্কময় হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে, যা ইতিহাসের এক কালো দাগ। দেশের সার্বভৌমত্বের ওপর চরম আঘাত আনার লক্ষ্যে এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছিল। কোনো দাবি আদায়ের লক্ষ্যে নয়, সেনাবাহিনী যাতে দুর্বল হয়ে যায়, বিডিআর নামে যাতে শক্তিশালী কোনো বাহিনী না থাকে, তার জন্যই এই হত্যাকাণ্ড। সেনাবাহিনীর মাধ্যমে পিলখানা হত্যাকাণ্ড বন্ধ করার সুযোগ থাকলেও ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে এটাকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করার লোক দেখানো চেষ্টা করা হয়েছে। 
তিনি বলেন, ‘দরবার হলের কাছে র‌্যাবের একটি প্যাট্রোল টিম থাকলেও বিদ্রোহ দমনে তাদের পিলখানায় ঢুকতে দেওয়া হয়নি। আমরা লজ্জিত, দুঃখিত সেই সব সন্তানের প্রতি, যারা পিলখানার নারকীয় হত্যাকাণ্ডে তাদের বাবা-মা হারিয়েছেন, যারা স্বামী হারিয়েছেন। স্বজনহারা এসব পরিবারের সদস্যদের সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা আমাদের নেই। যেদিন এই হত্যাকাণ্ডের সঠিক বিচার হবে সেদিন হয়তো স্বজনহারারা কিছুটা স্বস্তি পাবেন।’

পিলখানায় হত্যাকাণ্ডের সঠিক বিচারের দাবিতে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ ১০ দফা দাবি উত্থাপন করেন। 

মাহফুজ/

জাতিসংঘের প্রতিবেদন আওয়ামী সরকার মানবাধিকার লঙ্ঘনের সত্য গোপন করেছে

প্রকাশ: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:৪৯ পিএম
আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:৫৩ পিএম
আওয়ামী সরকার মানবাধিকার লঙ্ঘনের সত্য গোপন করেছে
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণবিক্ষোভে নির্বিচারে গুলি চালায় পুলিশ। ছবি: খবরের কাগজ

জাতিসংঘের সত্যানুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণবিক্ষোভের সময় সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় দোষীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী সরকার কোনো উদ্যোগই নেয়নি, বরং ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছে।

জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর (ওএইচসিএইচআর) জানিয়েছে, ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট ২০২৪ পর্যন্ত সময়কালে সরকারি বাহিনী ও ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকদের সহিংসতা তদন্তের কোনো বাস্তব প্রচেষ্টা দেখা যায়নি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, হত্যার প্রমাণ মুছে ফেলতে পুলিশ কিছু নিহত ব্যক্তির মরদেহ পরিবারের কাছে ফেরত না দিয়ে হাসপাতাল থেকে নিয়ে যায়, গোপন রাখে, এমনকি পুড়িয়েও ফেলে।

জাতিসংঘ গত বুধবার ‘জুলাই-আগস্ট ২০২৪-এ বাংলাদেশে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ সংশ্লিষ্ট মানবাধিকার লঙ্ঘন’ শীর্ষক এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে।

ওএইচসিএইচআর জানায়, পুলিশের বিশেষ শাখা এবং র‌্যাবকে গোপনে অতিরিক্ত গোলাবারুদ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল, যাতে তাদের গুলিবর্ষণের হিসাব সরকারি নথিতে না আসে।

সাবেক সরকারি কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই সময়ের মধ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিবর্ষণ বা নির্যাতনের কোনো তদন্তই হয়নি। তৎকালীন কর্মকর্তারা দাবি করেন, ‘সংকটময় পরিস্থিতির’ কারণে কোনো ভুক্তভোগী আনুষ্ঠানিক অভিযোগ করেননি।

কিন্তু জাতিসংঘ বলেছে, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর প্রকাশিত প্রতিবেদনই তদন্ত শুরু করার জন্য যথেষ্ট ছিল। তবে সরকার জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা তো দূরের কথা, উল্টো সত্য গোপনের জন্য সমন্বিত চেষ্টা চালিয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গোয়েন্দা সংস্থা (ডিজিএফআই, এনএসআই), পুলিশের গোয়েন্দা শাখা ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আহতদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল এমন বিভিন্ন হাসপাতালে উপস্থিত থেকে নির্যাতনের প্রমাণ লোপাট করতে গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা নথি জব্দ করে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে নিহতদের বিষয়ে জবাবদিহিতার দাবি জানানো আইনজীবী, সাংবাদিক, ভুক্তভোগী ও তাদের পরিবারকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছিল।

ওএইচসিএইচআর জানায়, ‘বিভিন্ন আলোচিত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ডিজিএফআই সদস্যরা ভুক্তভোগীদের পরিবার ও তাদের আইনজীবীদের ফোন করেছিল বা সরাসরি দেখা করে ভয় দেখানোর চেষ্টা করেছিল।’

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আবু সাঈদের হত্যাকাণ্ডে পুলিশের জড়িত থাকার প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও শত শত নিরপরাধ ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। অথচ ভিডিও ফুটেজসহ অন্যান্য প্রমাণে স্পষ্ট ছিল যে পুলিশই তাকে হত্যা করেছে।

ওএইচসিএইচআর জানায়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তার মন্ত্রীরা প্রকাশ্যে বিএনপি ও জামায়াতের সদস্যদের বিক্ষোভকারীদের হত্যা ও আহত করার জন্য দায়ী করেন, যদিও নিরাপত্তা বাহিনীই এসব কাজ করেছিল।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আন্তর্জাতিক মহলের উদ্বেগ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও তথ্য মন্ত্রণালয়ে পৌঁছে দিয়েছিল বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

বর্তমানে পলাতক থাকা তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী দাবি করেন যে তিনি ব্যক্তিগতভাবে প্রধানমন্ত্রীকে আন্তর্জাতিক নেতাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছিলেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৪ সালের ১৭ জুলাই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠনের ঘোষণা দেন, তবে এর জন্য ‘বিরোধী উসকানিদাতা’ ও ‘সন্ত্রাসীদের’ দায়ী করেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘এই তদন্তের আওতায় কেবল ‘কোটা সংস্কার আন্দোলনের কারণে সংঘটিত মৃত্যু, সহিংসতা, ধ্বংসযজ্ঞ, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও ক্ষয়ক্ষতির’ বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত ছিল, ‘যা কেবল বিক্ষোভকারীদের কর্মকাণ্ডের ওপর একতরফা দৃষ্টি নিবদ্ধ করে, অথচ নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যাপক সহিংসতা এড়িয়ে যাওয়া হয়।’

জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৫ আগস্টের পর এই তদন্ত কমিটি কোনো অন্তর্বর্তী প্রতিবেদনও প্রকাশ করেনি, এমনকি তাদের কার্যক্রমের কোনো লিখিত রেকর্ডও পাওয়া যায়নি।

বাংলাদেশের জাতীয় মানবাধিকার কমিশনও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় কাউকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে ব্যর্থ হয়েছে।

কমিশন ৩০ জুলাই কেবল একটি অস্পষ্ট বিবৃতি দেয়, যেখানে ঘটনাকে ‘খুবই দুঃখজনক ও মানবাধিকার লঙ্ঘন’ বলা হয় এবং গণগ্রেপ্তার না করার আহ্বান জানানো হয়। সূত্র: বাসস

সিফাত/