ঢাকা ৩০ পৌষ ১৪৩১, মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারি ২০২৫

জীবনের চোখে ছররা গুলি, দুশ্চিন্তায় পরিবার

প্রকাশ: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৫৫ এএম
আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৩১ পিএম
জীবনের চোখে ছররা গুলি, দুশ্চিন্তায় পরিবার
জীবন রহমান জিম

জীবন রহমান জিম। এক আত্মবিশ্বাসী তরুণ। কলেজছাত্র জীবন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে অংশ নেন। কিন্তু পুলিশের ছররা গুলিতে তিনি আহত হন। একটি গুলি তার ডান চোখে লাগে। গুলিটি এখনো চোখের মধ্যে রয়ে গেছে।

ঢাকার ইস্পাহানি ইসলামিয়া চক্ষু ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের রেটিনা বিভাগে চিকিৎসা নিচ্ছেন জীবন। চিকিৎসকরা তাকে পরামর্শ দিচ্ছেন অস্ত্রোপচারের। অর্থাভাবে জীবনের পরিবার এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। ছররা গুলিটি অপসারণ না করলে তার ডান চোখ যেকোনো সময় নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এখন চোখ নিয়ে ঘোর অনিশ্চয়তার মধ্যে জীবন ও তার পরিবার।

পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হিসেবে জীবনের বাবা রবিউল ইসলাম রংপুর নগরীর শান্তিনগর খামার এলাকায় ছোট্ট একটি পানের দোকান চালান। তার মা জামিলা বেগম গৃহিণী। পাঁচ সদস্যের পরিবারে আর্থিক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও রবিউল ও জামিলা তাদের ছেলেমেয়ে নিয়ে সুখী জীবনযাপন করছিলেন। 

গত ১৯ জুলাই নগরীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে অংশ নিয়ে পুলিশের গুলিতে ডান চোখের রেটিনা ক্ষতিগ্রস্ত হয় জীবনের। পুলিশের গুলিতে জীবনের শরীরে অন্তত ১০টি রাবার বুলেট বিদ্ধ হয় এবং তিনি গুরুতর আহত হন।

নগরীর শান্তিনগর খামার এলাকায় আলাপকালে জীবন (২৩) বলেন, ‘তার স্বপ্ন ছিল পুলিশ কর্মকর্তা হয়ে পরিবারে দরিদ্র বাবা-মায়ের জন্য সম্মান, সুখ ও সচ্ছলতা নিয়ে আসা।’ কিন্তু দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেওয়ার কারণে তার স্বপ্নের সঙ্গে জীবনের ঘটনাপ্রবাহগুলো মসৃণভাবে যায়নি। তার ডান চোখ এখন স্থায়ীভাবে অকার্যকর হওয়ার পথে। 

রংপুর উচ্চবিদ্যালয় থেকে ২০১৮ সালে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা (বাণিজ্য বিভাগ) পাস করার পর তিনি শহরের লালবাগ এলাকার রংপুর কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তি হন। ২০২১ সালে উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট পরীক্ষায় (বাণিজ্য বিভাগ) পাস করার পর তিনি অনার্স কোর্সে রংপুর সরকারি কলেজে ভর্তি হন। বর্তমানে তিনি সেখানে অনার্স (হিসাববিজ্ঞান) দ্বিতীয় বষের্র ছাত্র। জীবন বাবা মায়ের একমাত্র ছেলে। তার একমাত্র বোন রাবেয়া বাসরি (১৩) শহরের সমাজ কল্যাণ বিদ্যা বীথি গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী।

জীবন বলেন, ‘ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসন থেকে জাতিকে মুক্ত করতে জুলাই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে তিনি নিয়মিতভাবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেন। ১৬ জুলাই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থী শহিদ আবু সাঈদকে পুলিশ গুলি করে হত্যার পর দেশের অন্যান্য স্থানের মতো রংপুরেও পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ রূপ নেয়।’

জীবন বলেন, ‘১৯ জুলাই বিকেল ৪টার দিকে গ্র্যান্ড হোটেল মোড়ে মিছিলে যোগ দিয়ে মিনি সুপার মার্কেট অফিস, সিটি মার্কেট ও জেলা পরিষদ কার্যালয় এলাকায় মিছিল করি। এ সময় পুলিশ মিছিলে রাবার বুলেট, টিয়ারশেল ও গুলি ছুড়তে থাকে। একসময় হরিজন সম্প্রদায়ের মন্দিরের কাছে শিশু হাসপাতালের দিকে যাই। পুলিশ তখন এলাকাটি ঘিরে ফেলে। বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে হরিজন সম্প্রদায়ের মন্দিরের সামনে অতি কাছ থেকে পুলিশ আমাকে লক্ষ্য করে অন্তত ১০টি রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এসব বুলেট আমার মাথা, হাত ও শরীরের অন্যান্য অংশে বিদ্ধ হয়। শরীর রক্তাক্ত হয়ে যায়।’

কারমাইকেল কলেজের ছাত্র আবু বকর সিদ্দিক (২৬) স্থানীয়দের সহায়তায় জীবনকে উদ্ধার করে রিকশাযোগে শাপলা চত্বর মোড়ে পাঠান। শাপলা চত্বর মোড়ে যাওয়ার সময় জীবন মাকে মোবাইল ফোনে গুলিবিদ্ধ হওয়ার কথা জানান। 

দ্রুতই মা জামিলা বেগম এবং খালা ইসমত আরা আলো তাকে শহরের ধাপ মেডিকেলের পাশে ডা. আবদুল হাকিমের বাসায় নিয়ে যান। নিরাপত্তার কারণে এবং পুলিশি হয়রানি এড়াতে ডা. হাকিম জীবনকে দর্শনার প্রাইভেট সেক্টর দীপ আই কেয়ার ফাউন্ডেশনে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। পুলিশি হয়রানি এড়াতে দীপ আই কেয়ার ফাউন্ডেশনও বন্ধ করে রাখা হয়েছিল। উপায় না পেয়ে জামিলা বেগম তার ছেলে জীবনকে আরপিএমসিএইচে ভর্তি করেন।

জীবন বলেন, ‘ডাক্তাররা আমার শরীর থেকে মাত্র একটি রাবার বুলেট বের করতে পারে। বাকি ৯টি গুলি ভেতরে থেকে যায়। এগুলোর মধ্যে আমি স্পষ্টতই এখন পাঁচটি ছররা অনুভব করছি। একটি ডান চোখের ভেতরে থাকায় সেখানে আমি সর্বদাই যন্ত্রণা ভোগ করছি।’

জীবনের মা জামিলা বলেন, জীবনের জন্য ওষুধ কেনা, চেকআপ করা এবং ছেলে ও মেয়ের লেখাপড়া ও প্রাইভেট টিউশনের জন্য মাসে ১৫ হাজার টাকার মতো খরচ মেটানো এখন আমাদের জন্য অসম্ভব হয়ে পড়েছে।’
জীবনের বাবা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তার ছেলের ডান চোখ থেকে ছররা গুলি অপসারণের জন্য পদক্ষেপ নিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আকুল আহ্বান জানিয়েছেন।

জীবন বলেন, ‘আমার ডান চোখের রেটিনা গুলির আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে ডাক্তাররা জানিয়েছেন। চোখটি বাঁচানোর জন্য দ্রুত অস্ত্রোপচার করা উচিত।’ 

চোখের চিকিৎসার বিষয়ে কথা বলতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ও জুলাই শহিদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সারজিস আলমের সঙ্গে দেখা করতে চান জীবন। কিন্তু অর্থাভাবে তিনি ঢাকায় আসতে পারছেন না বলে জানা গেছে। সূত্র: বাসস

জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে সর্বদলীয় বৈঠক বৃহস্পতিবার: মাহফুজ আলম

প্রকাশ: ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:১০ পিএম
আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:১০ পিএম
জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে সর্বদলীয় বৈঠক বৃহস্পতিবার: মাহফুজ আলম
রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। ছবি: সংগৃহীত

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র নিয়ে আগামী বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) সর্বদলীয় বৈঠক হবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম।

মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান তিনি।

মাহফুজ আলম বলেন, ‘আলোচনার স্থান এখনো নির্ধারিত হয়নি। খসড়া ঘোষণাপত্র নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে অনির্ধারিত আলোচনা হয়েছে। বিএনপি, জামায়াত, গণতন্ত্রমঞ্চসহ রাজনৈতিক দল ও শ্রেণি-পেশার সঙ্গে অনির্ধারিত আলোচনা হয়েছে।’

এর আগে গত ১০ জানুয়ারি সন্ধ্যায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রেস ব্রিফিংয়ে মাহফুজ আলম বলেন, ‘ঘোষণাপত্র সরকার দেবে না। সরকার ঘোষণাপত্রের প্রক্রিয়াকে সহায়তা করছে। ঘোষণাপত্র আসবে সবার ঐকমত্যের ভিত্তিতে।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি গত ৩১ ডিসেম্বর ঢাকার কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র প্রকাশ করতে চেয়েছিল। সেজন্য সংগঠন দুটির কর্মীরা সারাদেশ থেকে শহিদ মিনারে জড়ো হয়েছিল। এ ঘোষণাপত্র নিয়ে তখন দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার সৃষ্টি হয়। পরে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেস উইং তখন এ উদ্যোগের সঙ্গে সরকার সম্পৃক্ত নয় বলে উল্লেখ করেছিল।

গত ৩০ ডিসেম্বর রাতে জরুরি প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের একটি ঘোষণাপত্র তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।ওই রাতেই বৈঠক করে ৩১ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে ‘মার্চ ফর ইউনিটি’ (ঐক্যের জন্য যাত্রা) কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি। ওই কর্মসূচি থেকে জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়। তাই এ লক্ষ্যে জনমত তৈরিতে সারা দেশে প্রচারপত্র বিতরণ ও জনসংযোগ করছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি।

মাহফুজ/এমএ/

এলপি গ্যাসের দাম বাড়ল

প্রকাশ: ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:২৬ পিএম
এলপি গ্যাসের দাম বাড়ল
ছবি : সংগৃহীত

তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) দাম ১২ কেজির সিলিন্ডারের ভোক্তাপর্যায়ে ৪ টাকা বাড়িয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১৪৫৯ টাকা।

মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) এক বিজ্ঞপ্তিতে নতুন দামের ঘোষণা দেয় বিইআরসি। আজ সন্ধ্যা থেকে নতুন দাম কার্যকর হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গ্রাহক পর্যায়ে প্রতি ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১৪৫৯ টাকা, যা মাসের শুরুতে নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৪৫৫ টাকায়। 

এছাড়া বেসরকারি এলপিজির রিটেইলার পয়েন্টে ভোক্তাপর্যায়ে মূসকসহ প্রতি কেজি গ্যাসের দাম ১২১ টাকা ৫৬ পয়সা ও রেটিকুলেটেড পদ্ধতিতে তরল অবস্থায় সরবরাহ করা গ্যাসের দাম ১১৭ টাকা ৮১ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এছাড়াও গাড়িতে ব্যবহৃত এলপিজির (অটো গ্যাস) নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি লিটার ৬৭ টাকা ২৭ পয়সা, যা আগে ছিল ৬৬ টাকা ৭৮ পয়সা।

এমএ/

জাতীয় নির্বাচনে ইসিকে সহায়তা দেবে ইউএনডিপি

প্রকাশ: ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:০৭ পিএম
আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:৩০ পিএম
জাতীয় নির্বাচনে ইসিকে সহায়তা দেবে ইউএনডিপি
নির্বাচন কমিশনে কথা বলেন জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস। ছবি: সংগৃহীত

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইসির চাহিদা অনুযায়ী সব ধরনের সহায়তা দেবে আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচি- ইউএনডিপি। অন্যদিকে আগামী নির্বাচনের জন্য ভোটার তালিকা তৈরি, টেকনিক্যাল ও প্রযুক্তিগত সাপোর্ট, প্রশিক্ষণ কার্যক্রমসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইউএনডিপির কাছে সহায়তা চেয়েছে নির্বাচন কমিশন।

মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) দুপুরে আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে ইউএনডিপির প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের কাছে এসব তথ্য জানান জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস এবং ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ।

ইসি সচিব আখতার আহমেদ জানান, প্রধান উপদেষ্টার ঘোষিত সময় অনুযায়ী আগামী জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন।

এর আগে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইসের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যদের প্রতিনিধিদল প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দিন, চার নির্বাচন কমিশনার এবং ইসি সচিবের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করেন।

আলোচনা শেষে লুইস সাংবাদিকদের বলেন, ‘নির্বাচনে সহায়তা চেয়ে জাতিসংঘে ইসির পাঠানো চিঠির প্রেক্ষিতে আমরা এসেছি। কমিশন কীভাবে নির্বাচন আয়োজন করতে চায়- আমরা তা বোঝার চেষ্টা করছি। আইটি সক্ষমতা উন্নয়ন থেকে শুরু করে বিভিন্ন কাজের জন্য কারিগরি সহায়তা চেয়ে অনুরোধ করেছে ইসি। অপতথ্যের বিস্তৃতিরোধেও সহায়তা চেয়েছে তারা। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনে কমিশনের আরও কী কী সহযোগিতা প্রয়োজন, সেগুলোর মূল্যায়ন আমরা করবো। এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন এবং সুশীল সমাজ, শিক্ষাবিদ ও রাজনৈতিক দলসহ অন্যান্য অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে আগামী ১০ দিনের মধ্যে তারা এই মূল্যায়ন সম্পন্ন করতে চান। ইসির সক্ষমতা বৃদ্ধি, প্রযুক্তি ও অপতথ্য মোকাবিলায় সহযোগিতাসহ বিস্তৃত বিষয়ে সহায়তা দিতে পারে ইউএনডিপি।

নির্বাচন ইউএনডিপির কাছে কমিশনের সহায়তা চাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেন, ‘ইউএনডিপির কাছে আমরা আগামী জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের জন্য ভোটার তালিকা তৈরির কার্যক্রম, নির্বাচন প্রক্রিয়ায় প্রযুক্তিগত ও কারিগরি সহায়তা চেয়েছি। তার মধ্যে রয়েছে হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার, প্রশিক্ষণ, দক্ষতা উন্নয়ন, যোগাযোগ, এসডিজির কিছু গোল অর্জনের মতো কিছু বিষয়। তবে ইভিএম বিষয়ে এবং অর্থনৈতিক সহায়তার বিষয়ে কোনও আলোচনা হয়নি। প্রতিনিধি দলটি এ সব প্রয়োজনীয়তা পর্যালোচনা করতেই এসেছে। সংস্থাটি বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহে সহায়তা করবে না, বরং ভোটার তালিকা হালনাগাদ কাজে তথ্য প্রক্রিয়াকরণে সহায়তা করবে। তাদের সহযোগিতা নিতে আমাদের এখানে তাদের একটা ক্যাম্প অফিস স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে তারা নিয়মিত কাজ করবেন।

এ সময় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ইসির পরিকল্পনা জানতে চাইলে আখতার আহমেদ বলেন, ধারাবাহিকভাবে আমাদের প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনাররা জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা আমাদের যে গাইডলাইন দিয়েছেন, আমরা তার ভেতর কাজ করছি। সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস জানিয়েছেন, আগামী বছর জুন অথবা চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তবে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর জানিয়েছে, সংস্কার সীমিত আকারের করা হলে ডিসেম্বরের মধ্যেই সংসদ নির্বাচন করা সম্ভব হবে।

এলিস/নাবিল/এমএ/

বিনিয়োগ সংস্থাগুলোকে একত্রিত করার নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার

প্রকাশ: ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮:৩৪ পিএম
আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮:৩৭ পিএম
বিনিয়োগ সংস্থাগুলোকে একত্রিত করার নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার
যমুনায় ড. ইউনূসের সঙ্গে ইয়াংওয়ান করপোরেশনের চেয়ারম্যান কিহাক সাংয়ের সাক্ষাৎ। ছবি: পিআইডি

দেশে অধিকহারে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে বিনিয়োগ সংস্থাগুলোকে এক ছাতার নিচে আনার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ইয়াংওয়ান করপোরেশনের চেয়ারম্যান কিহাক সাং এবং কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় বিদেশি বিনিয়োগকারী প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এ নির্দেশনা দেন।

সাক্ষাতে কিহাক সাং বেশ কিছু সমস্যা উত্থাপন করে বলেন, এসব সমস্যা বাংলাদেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত করছে। তিনি বড় আকারে বিনিয়োগ আকর্ষণে বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নয়নের আহ্বান জানান।

প্রধান উপদেষ্টা কিহাক সাং-কে জানান, কোরিয়ান ইপিজেডের ভূমি অধিগ্রহণ সমস্যা শিল্প পার্কে বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আগামী ৬ ফেব্রুয়ারির মধ্যে এর সমাধান করা হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা চাই কোরিয়ান ইপিজেড সবার জন্য একটি মডেল হোক। আমরা আশা করি এটি বড় বিনিয়োগ আকর্ষণ করবে এবং এতে প্রচুর কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।’

কোরিয়ান ইপিজেডের দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা সমাধানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করায় প্রশংসা করেন কিহাক সাং। তিনি বলেন, ‘আরও কোরিয়ান বিনিয়োগকারী এখন বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হবেন।’

কিহাক সাং বলেন, ‘এটি অন্য বিনিয়োগকারীদের জন্য দরজা খুলে দেবে। কোরিয়ান ইপিজেড অবশ্যই বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি মডেল হবে।’

ইয়াংওয়ান করপোরেশনের চেয়ারম্যান সরকারকে চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য শিপমেন্ট প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, দেশের বৃহত্তম বন্দরে ধীর কার্যক্রমের কারণে শীর্ষস্থানীয় গ্লোবাল ব্র্যান্ডগুলো উচ্চমানের ও ফ্যাশন পোশাকের অর্ডার দিতে আগ্রহী নয়।

তিনি বলেন, ফ্যাশন পোশাকের দ্রুত রপ্তানি কার্যক্রম সম্পন্ন করা প্রয়োজন, সেটি ১০-১৫ দিনের মধ্যে হতে হবে। কিন্তু বাংলাদেশে কখনও কখনও শিপমেন্ট সম্পন্ন করতে কয়েক মাস সময় লাগে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

কিহাক সাং ভিয়েতনামের উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, সেখানে তিনি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বড় বিনিয়োগ করেছেন। দেশটি রপ্তানি প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার জন্য পদক্ষেপ নিয়েছে বলে জানান তিনি।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, বন্দরের কার্যক্রমে দক্ষতা বাড়াতে কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা জানান, তার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী চট্টগ্রাম বন্দরকে এই অঞ্চলের শীর্ষ বন্দর হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে বেশ কিছু পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছেন।

কিহাক সাং ও ব্রিটিশ বিনিয়োগকারী মোহাম্মদ এ মতিন সকল বিনিয়োগ উন্নয়ন সংস্থাকে এক ছাতার নিচে নিয়ে আসার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন। তারা বলেন, এটি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য একক সেবা প্রদান নিশ্চিত করবে।

কিহাক সাং বলেন, ইয়াংওয়ান বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট বাংলাদেশে নির্মাণ করেছে, যেখান থেকে প্রতি বছর হাজার হাজার বাংলাদেশি তরুণ প্রশিক্ষণ নেবে। তিনি জানান, আগামী তিন মাসের মধ্যে এই প্রতিষ্ঠানের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হচ্ছে।

কিহাক সাং অধ্যাপক ইউনূসকে ইনস্টিটিউটের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানান। সূত্র: বাসস

‘প্লে উইথ এ পারপাস’ কর্মশালা শিশুর মানসিক বিকাশকে অতি জরুরি সেবা গণ্য করার সুপারিশ

প্রকাশ: ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮:০৬ পিএম
আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮:১০ পিএম
শিশুর মানসিক বিকাশকে অতি জরুরি সেবা গণ্য করার সুপারিশ
কক্সবাজারে ‘প্লে উইথ এ পারপাস’ শীর্ষক কর্মশালায় অতিথিরা। ছবি: সংগৃহীত

শুধু স্বাভাবিক সময়ে নয়, দুর্যোগ ও মানবিক বিপর্যয় পরিস্থিতিতেও শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ নিশ্চিত করা সমান জরুরি। শিশুর প্রারম্ভিক বিকাশকে অতি জরুরি সেবা হিসেবে গণ্য করার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয়।

‘প্লে টু লার্ন’ প্রকল্পের সার্বিক চিত্র তুলে ধরতে মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) কক্সবাজারে ‘প্লে উইথ এ পারপাস’ শীর্ষক কর্মশালায় এ সুপারিশ করা হয়।

কক্সবাজারে অবস্থানরত মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ তথা শিশুর প্রারম্ভিক বিকাশ নিশ্চিত করতে ব্র্যাক, আইআরসি ও নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির সঙ্গে যৌথভাবে ‘প্লে টু লার্ন’ নামের প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সিসেমি ওয়ার্কশপ।

সিসেমি ওয়ার্কশপ যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা এবং বাংলাদেশের জনপ্রিয় শিশুতোষ টেলিভিশন সিরিজ সিসিমপুরের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান।

দিনব্যাপী সরকারি-বেসরকারি ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের প্রায় দেড় শতাধিক প্রতিনিধি কর্মশালায় অংশ নেন।

কর্মশালার উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথি ছিলেন- শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। দুপুরের সেশনে প্রধান অতিথি ছিলেন- শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন বিষয়ক অতিরিক্ত কমিশনার মো. শামস উদ দ্দোজা। সমাপনী অধিবেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন-কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহ্উদ্দিন।

এসময় অন্যান্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র থেকে সিসেমি ওয়ার্কশপ ও নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির নেতৃস্থানীয় কর্মকর্তাসহ দাতা সংস্থা, জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক ও দেশি উন্নয়ন সংস্থার উর্ধ্বতন প্রতিনিধিরা।

আলোচনায় যেকোনো দুর্যোগ ও মানবিক বিপর্যয় পরিস্থিতিতে শিশুর প্রারম্ভিক বিকাশকে অতি জরুরি সেবা হিসেবে গণ্য করার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয়।

কর্মশালার নানা পর্যায়ে ‘প্লে টু লার্ন’ প্রকল্পের সার্বিক চিত্র তুলে ধরে জানানো হয়, বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা শিশুদের খেলা ও বিনোদনের মাধ্যমে শিক্ষা নিশ্চিত করতে দুটি রোহিঙ্গা শিশু চরিত্র তৈরি করে সিসেমি ওয়ার্কশপ। নূর ও আজিজ নামের এই দুই শিশু চরিত্র রোহিঙ্গা শিশুদের কাছে ভীষণ জনপ্রিয়। নূর ও আজিজকে নিয়ে রোহিঙ্গা শিশুদের জন্য রোহিঙ্গা ভাষায় তৈরি করা হয় প্রায় দেড় শতাধিক শিক্ষামূলক ভিডিও কন্টেন্ট। যা ভিডিও প্রজেক্টরের মাধ্যমে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থিত ব্র্যাকের প্লেল্যাব ও ইউএনএইচসিআর এবং সহযোগী সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন, টেরে দেস হোমস (টিডিএইচ), রিলিফ ইন্টারন্যাশনাল ও কোডেক-এর মাধ্যমে রোহিঙ্গা শিশুদের দেখানো হয়েছে এবং হচ্ছে। পাশাপাশি এ প্রকল্প থেকে ১২টি গল্পের বই বার্মিজ, ইংরেজি ও বাংলা ভাষায় উন্নয়ন ও প্রকাশ করা হয়েছে। এসব বই কক্সবাজারের ১৪টি সংস্থার শিশু শিক্ষাকেন্দ্রে বিতরণ করা হয়েছে এবং প্রায় দুই লাখের মতো শিশুতোষ বইগুলো ব্যবহার করে আসছে। এছাড়া বাড়িতেও শিশু বিকাশের পরিবেশ তৈরিতে বিতরণ করা হয়েছে শিশু বিকাশ হোমকিট। একই সঙ্গে অভিভাবক ও শিশু যত্নকারিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

কর্মশালায় আরও জানানো হয়, গত ছয় বছর ধরে চলমান ‘প্লে টু লার্ন’ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় ৮ লাখ রোহিঙ্গা শিশু, অভিভাবক এবং শিশু যত্নকারী সরাসরি উপকৃত হয়েছেন।

গবেষণায় দেখা গেছে, এই প্রকল্পের আওতাধীন শিশুদের মধ্যে ৭০ শতাংশ শিশুর সার্বিক বিকাশ সাধিত হয়েছে। শতকরা ৯১ ভাগ শিশুর মানসিক বিকাশ হয়েছে এবং ৯৬ ভাগ শিশু যত্নকারী ও অভিভাবকরা শিশুদের প্রতি আরও বেশি যত্নশীল হয়েছেন।

এমএ/