
বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের কথিত ঘটনাগুলোর ন্যায্য তদন্ত করতে সেক্যুলার সংবাদপত্র ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। কেননা, সংখ্যালঘু ইস্যু আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম এবং প্রভাবশালী দেশের সংসদীয় শুনানিতে অন্যায্যভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম শনিবার (৭ ডিসেম্বর) তার ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে পোস্ট করা এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘নেত্র নিউজ যখন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর বিপ্লব-পরবর্তী সময়ে হামলার প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছিল, আশা করেছিলাম ঐক্য পরিষদ এই বিষয়ে একটি বিবৃতি দেবে।’
প্রেস সচিব বলেন, ‘নেত্র নিউজ একটি শীর্ষস্থানীয় তদন্তমূলক ওয়েবসাইট, যা বাংলাদেশের বড় বড় দুর্নীতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা নিয়ে প্রতিবেদন করে সুনাম অর্জন করেছে। তবে নেত্র নিউজের প্রতিবেদনে সংখ্যালঘু পরিষদ যে ৯ জন হিন্দুর মৃত্যুর কথা বলেছিল, তাদের প্রায় সবার সঙ্গে রাজনৈতিক, ব্যক্তিগত বা অন্যান্য কারণ যুক্ত ছিল, যা আসলে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা নয়।’
শফিকুল আলম বলেন, ‘ঐক্য পরিষদ এ বছর জুলাই মাসে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিষয়ে আরেকটি বিতর্কিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। তারা বলেছিল ২০২৩-২৪ অর্থবছরে (যা ২০২৩ সালের ১ জুলাই থেকে শুরু হয়েছে) অন্তত ৪৫ জন সংখ্যালঘু (অধিকাংশ হিন্দু) নিহত হয়েছে। প্রতিবেদনটি বাংলাদেশের সংবাদপত্রগুলোর প্রথম এবং শেষ পাতায় প্রকাশিত হয়েছিল। ঐক্য পরিষদের এমন দাবির সত্যতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন থাকা সত্ত্বেও কোনো গণমাধ্যমই তা চ্যালেঞ্জ করেনি।’
তিনি বলেন, ‘দেশের বৃহত্তম মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) মতে, ২০২৩ সালে সংখ্যালঘু বিরোধী সহিংসতায় কেউ নিহত হয়নি এবং এ বছর (জানুয়ারি থেকে অক্টোবর) মাত্র দুজন নিহত হয়েছে।’
আসক একটি সেক্যুলার (ধর্মনিরপেক্ষ) গ্রুপ, বছরের পর বছর ধরে যেটির নেতৃত্বে ছিলেন আওয়ামী লীগের একজন অপরাধ স্বীকারকারী। এর বর্তমান চেয়ারম্যান হলেন মানবাধিকারবাদী আইনজীবী জেড আই খান পান্না। যিনি স্থানীয় মিডিয়াকে বলেছেন, তিনি বিচারে গণহত্যাকারী শেখ হাসিনাকে রক্ষা করতে আগ্রহী হবেন।
শফিকুল আলম বলেন, ‘ঐক্য পরিষদের প্রতিবেদনগুলোর সুদূরপ্রসারী প্রভাব রয়েছে। সম্প্রতি একজন ব্রিটিশ সংসদ সদস্য বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা নিয়ে কথা বলার সময় ঐক্য পরিষদের প্রতিবেদন উদ্ধৃত করেন। হিন্দুদের ওপর বিপ্লব-পরবর্তী হামলার প্রতিবেদনটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ১ কোটি ১০ লাখ বারের বেশি দেখা হয়েছে।’
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেন, ‘আমাদের জানা মতে, শক্তিশালী এবং সম্পদশালী হিন্দু আমেরিকান গোষ্ঠী, ভারতীয় জাতীয় ও আঞ্চলিক সংবাদপত্র এবং শীর্ষ ভারতীয় বিশ্লেষকরা ওই প্রতিবেদন উদ্ধৃত করে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের অবস্থা তুলে ধরেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংখ্যালঘু বিরোধী সহিংসতা নিয়ে মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর ক্ষেত্রে ঐক্য পরিষদের প্রতিবেদনগুলোই সবচেয়ে বড় উৎস।’
শফিকুল আলম বলেন, ‘বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা ঘটে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ক্ষেত্রে আমরা এখনো আদর্শ দেশ হতে পারিনি। ধর্মীয়ভাবে আপত্তিকর ফেসবুক পোস্টের কারণে সহিংসতার ঘটনাও ঘটে। কিছু প্রান্তিক গোষ্ঠী ও ব্যক্তি প্রায়শই সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ায়।’
তিনি বলেন, ‘সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ধর্মীয়ভাবে সংঘটিত ঘটনার সময় মানুষকে শান্ত থাকতে অন্তর্বর্তী সরকার, রাজনৈতিক, ধর্মীয় এবং সুশীল সমাজের নেতাদের পক্ষ থেকে বৃহত্তর প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে। ঐক্য পরিষদের প্রতিবেদনগুলো পরিকল্পিতভাবে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সংঘটিত সহিংসতার ঘটনাগুলো বাড়িয়ে দেখানো হয়েছে।’
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেন, ‘২০১৩ সালে হেফাজত কর্মীদের গণহত্যা নিয়ে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ চমৎকার একটি তদন্ত করেছিল। আশা করি তারা এখানে একই ধরনের তদন্ত করবে। সরকার এই গুজব খণ্ডনের জন্য কাজ করলে তার প্রতিবেদনের প্রতি সন্দেহের দৃষ্টিভঙ্গি থাকতে পারে।’
শফিকুল আলম আরও বলেন, ‘কেউ কেউ বাংলাদেশে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী পাঠানোর অথবা দেশের অভ্যন্তরে হস্তক্ষেপ করার আহ্বান জানান ওই সব প্রতিবেদনের ভিত্তিতে। আর সে কারণেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার সংখ্যালঘু নির্যাতনের কথিত ঘটনাগুলোর ন্যায্য তদন্ত চায়।’