ঢাকা ৩ মাঘ ১৪৩১, শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারি ২০২৫

গণহত্যায় জড়িতদের বিন্দুমাত্র ছাড় নয়: সারজিস

প্রকাশ: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:৪৩ পিএম
আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:২৪ পিএম
গণহত্যায় জড়িতদের বিন্দুমাত্র ছাড় নয়: সারজিস
রাজশাহী শিল্পকলা একাডেমিতে বক্তব্য রাখেন সারজিস আলম। ছবি: খবরের কাগজ

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক, জুলাই শহিদ স্মৃতি ফাউণ্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক ও জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেছেন, ‘পুলিশ হোক বা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ পরিচয় যা-ই হোক গণহত্যায় যারা সরাসরি জড়িত ছিল তাদের বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া হবে না। যদি ডকুমেন্ট থাকে তাহলে আমাদের কাছে তার একমাত্র পরিচয় একজন খুনি, হত্যাকারী। তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।’

শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজশাহী জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে ‘শহিদ পরিবারের পাশে বাংলাদেশ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।

অনুষ্ঠানে রাজশাহী বিভাগের ৬২ জন শহিদ পরিবারের মধ্যে ৪২ জনের পরিবারের প্রত্যেকে ৫ লাখ টাকার অনুদানের চেক বিতরণ করা হয়।

চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে শহিদদের লাশ উত্তোলন করা যাবে না উল্লেখ করে সারজিস আলম বলেন, ‘১৫ আগস্ট শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার পরিবারকে হত্যার সঙ্গে যারা জড়িত ছিল, তাদের বিচারের জন্য যদি ডেডবডি কবর থেকে তোলা না হয়, তাহলে এই চব্বিশের অভ্যুত্থানে নতুন বাংলাদেশ আনতে গিয়ে যারা শহিদ হয়েছেন—কেন তাদের লাশ উত্তোলন করতে হবে? তাই চব্বিশের অভুত্থানে যারা শহিদ হয়েছে তাদের হত্যা মামলার জন্য কারও লাশ উত্তোলন করা যাবে না। আমরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়, বিচারিক যে মন্ত্রণালয় রয়েছে, সংশ্লিষ্ট সকলকে একটি কথা বলে দিতে চাই- যে ভাইয়ের জীবনের রক্তের ওপরে ওই চেয়ারে আপনারা বসে রয়েছেন, আপনারা চার মাস পর তাদের লাশ উত্তোলন করতে পারেন না।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ক্ষমতা পিপাসু নই, বিবেকবোধের জায়গায় যদি আমাদেরও মনে হয়, আপনারা যারা এই অভ্যুত্থানের স্পিরিটের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করছেন, এমনকি প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ইউনূসও যদি হয়, আমরা তাকেও ছেড়ে কথা বলবো না। আমরা বিবেকবোধ বিক্রি করে দেওয়া ওই প্রজন্ম না। বিবেকবোধ বেঁচে দেওয়া ওই প্রজন্ম হলে ভারতের দালালি করতাম। কিন্তু আমরা তা করি নাই, করবো না। আমরা স্পষ্ট করে বলেছি, পৃথিবীর যে কোনো দেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক হবে সমতা এবং মর্যাদার। কেউ বিন্দুমাত্র ডমিন্যান্ট করার চেষ্টা করলে তার সঙ্গে চোখ রাঙিয়ে কথা হবে, পুলিশের সামনে বুক পেতে দেওয়া হবে।’

প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের প্রসঙ্গ টেনে সারজিস বলেন, ‘আপনাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক কী হবে সেটা আপনারা আপনাদের কাজের মাধ্যমে নির্ধারণ করবেন। হাসিনা এতগুলো মানুষকে খুন করে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যে দেশে গেছে, বাংলাদেশের মানুষের দ্বারা তাড়িত হয়ে যাওয়া সেই খুনি হাসিনাকে আপনারা আশ্রয় দিয়েছেন। যদি এই বাংলাদেশের সঙ্গে আপনারা সম্পর্ক স্থাপন করতে চান, খুনি হাসিনাকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে দিন। তার বিচার এই বাংলাদেশের মানুষ করবে।’

তিনি বলেন, ‘কোনো রাজনৈতিক দল আমাদের এই অভ্যুত্থানের স্পিরিটকে ভুলে গিয়ে যদি ক্ষমতার দিকে তাকিয়ে থাকে, সেটা যদি নাহিদ, আসিফ, সারজিস, হাসনাতও হয় আপনারা তাদের বিরুদ্ধেও কথা বলবেন। এই বাংলাদেশে আর যেন কোনো ক্ষমতাপিপাসু নরপিশাচের জায়গা না হয়।’

এখনো আওয়ামী লীগের অনেক নেতা গ্রেপ্তার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে সারজিস বলেন, ‘চব্বিশের অভ্যুত্থানের চার মাস পেরিয়েছে। খুনি হাসিনার অন্যতম দোসর নাটোরের খুনি এমপি শিমুল আজও আমাদের সামনে রয়েছে। আজও পাবনার সাঈদ চেয়ারম্যান, এই বাংলাদেশে তার অস্তিত্ব রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘এই খুনিরা প্রকাশ্যে আমার ভাইদের পুড়িয়ে মেরেছে, গুলি করে হত্যা করেছে। যে শহিদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে আজকে আপনারা উপদেষ্টা, পুলিশ সুপার, আইজিপি, ডিআইজি, বিভাগীয় কমিশনারের দায়িত্ব পালন করছেন, তাদের রক্তের সঙ্গে এই বেইমানি কীভাবে সম্ভব?’

সারজিস আলম বলেন, ‘বিভিন্ন রাজনৈতিক দল খুনি আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগকে টাকার বিনিময়ে বাঁচানোর জন্য ব্যাকডোরে নেগোশিয়েশন করছে। এই যে মামলা বাণিজ্য, এতে রাজনৈতিক দল যেমন জড়িত রয়েছে তেমনি প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিও জড়িত রয়েছেন। নতুন বাংলাদেশেও পুলিশ সদস্যরা বিভিন্ন জায়গায় মামলাবাণিজ্য করছে।’

পুলিশ দায়িত্বশীল হলে আগামী ছয় মাসেই বাংলাদেশ ঠিক হয়ে যাবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘কোনো রাজনৈতিক দলের দালালি আপনাদের কাছ থেকে আমরা প্রত্যাশা করি না। আপনারা এটা করবেন না।’

অনুষ্ঠানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক মেহরাব সিফাত, মোবাশ্বেরুজ্জামান, মাহিন সরকার, ‍রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার খোন্দকার আজিম আহমেদ, পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি আলমগীর রহমান বক্তব্য রাখেন। 

এ সময় অন্যদের মধ্যে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান, জেলা পুলিশ সুপার মো. আনিসুজ্জামান, জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতারসহ শহিদদের স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন।

এনায়েত করিম/নাবিল/এমএ/

কালোটাকার প্রভাবে পরিবেশ ধ্বংস হচ্ছে: রেহমান সোবহান

প্রকাশ: ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮:৫৫ পিএম
কালোটাকার প্রভাবে পরিবেশ ধ্বংস হচ্ছে: রেহমান সোবহান

অতি মুনাফা ও বাজার অর্থনীতি পরিবেশ ধ্বংসের মূল কারণ বলে মন্তব্য করেছেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা অধ্যাপক রেহমান সোবহান। তিনি বলেছেন, বাজার অর্থনীতির কারণে জমির অস্বাভাবিক মূল্য বেড়েছে। যে কারণে নদ-নদী, জলাভূমি ও বনভূমি দখল করে আবাসন নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে পরিবেশ ধ্বংস হচ্ছে এবং এ ক্ষেত্রে কালোটাকার প্রভাবও দায়ী।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি মিলনায়তনে যৌথভাবে বাপা ও বাংলাদেশ পরিবেশ নেটওয়ার্ক (বেন) আয়োজিত দুই দিনের বিশেষ সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রেহমান সোবহান এ মন্তব্য করেন। 

তিনি বলেন, 'দেশের বিদ্যমান আইন ও আন্তর্জাতিক নিয়ম মানলেই পরিবেশ সুরক্ষা করা সম্ভব। আইন যথাযথ বাস্তবায়নের অভাবে পরিবেশ সুরক্ষা কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ জন্য সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও উদ্যোগ প্রয়োজন। তবে সবার আগে এ বিষয়ে করণীয় নির্ধারণে বিশেষ কমিশন গঠন করতে হবে।'

পরিবেশ ধ্বংস করে এমন প্রকল্প থেকে বেরিয়ে আসতে হবে উল্লেখ করে রেহমান সোবহান বলেন, 'উন্নয়নকে সব সময় পরিবেশের বিপরীতে দাঁড় করানো হয়েছে। কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ প্রকল্প দেশের জ্বালানি সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে স্বপ্ন দেখানো হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে তা পূরণ হয়নি; বরং ওই অঞ্চলের বিপুলসংখ্যক সাধারণ মানুষ উদ্বাস্তু হয়েছে। আমাদের পরিবেশেরও মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে।'