
বেক্সিমকো গ্রুপের অনিয়মের ক্ষতিয়ান হাইকোর্টে দাখিল করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। রবিবার (১৫ ডিসেম্বর) দুপুরে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে এই প্রতিবেদন হাইকোর্টে দাখিল করেন আইনজীবী মুনীরুজ্জামান।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত বেক্সিমকোর ১৬টি ব্যাংক ও ৭টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে দায়ের পরিমাণ ৫০ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া বেক্সিমকোর ১৮৮ কোম্পানির মধ্যে ৭৮ কোম্পানি ঋণ সুবিধা নিয়ে পরিশোধ করেনি। যেসব ব্যাংক এসব ঋণ পরিশোধ করেনি বেক্সিমকো তার তালিকাও দাখিল করা হয়।
আদালতে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য সম্পর্কে আইনজীবী মুনীরুজ্জামান জানিয়েছেন, ১৬টি ব্যাংক ও ৭টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে বেক্সিমকো গ্রুপের ৭৮টি প্রতিষ্ঠানের দায়ের পরিমাণ ৫০ হাজার ৯৮ দশমিক ৩ কোটি টাকা। এসব প্রতিষ্ঠানের শ্রেণিকৃত ঋণ হচ্ছে ৩১ হাজার ৭৫ দশমিক ৬৭ কোটি টাকা। জনতা, আইএফআইসি, সোনালী, রূপালীসহ অন্যান্য ব্যাংক আইন ও প্রচলিত ব্যাংকিং রীতিনীতি ভঙ্গ করে বেক্সিমকো গ্রুপের ৭৮টি প্রতিষ্ঠানকে আর্থিক সুবিধা দিয়েছে। এর মধ্যে ঋণ, পুনঃ তফসিলিকরণ, ঋণের মেয়াদ বাড়ানো, অতিরিক্ত ঋণদান, এলসি সুবিধাসহ অন্যান্য আর্থিক সুবিধা রয়েছে। জনতা ব্যাংক একক ঋণ গ্রাহক হিসেবে বেক্সিমকো গ্রুপকে তার প্রাপ্যের চেয়ে প্রায় ২০ গুণ বেশি আর্থিক সুবিধা দিয়েছে। উল্লেখ্য, বেক্সিমকো গ্রুপের কোম্পানিগুলোকে দেওয়া ঋণের প্রায় ৫০ শতাংশই দিয়েছে জনতা ব্যাংক।
আদালতে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী ফিদা এম কামাল ও আইনজীবী আনিসুল হাসান। রিটের পক্ষে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী মাসুদ আর সোবহান। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদ উদ্দিন।
এর আগে গত ২৫ বছরে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসসহ সংশ্লিষ্ট কোম্পানির অন্য সব ব্যবসার ক্ষেত্রে পরিশোধের পর ঋণ মওকুফ বিষয়ে তথ্যাদি সরবরাহ করাসহ কয়েকটি বিষয় নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী মাসুদ আর সোবহান আবেদনকারী হয়ে গত ৪ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টে রিট করেন। ৫ সেপ্টেম্বর রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ দেন। এতে বেক্সিমকো গ্রুপের সব সম্পত্তি সংযুক্ত (অ্যাটাচ) করতে ও গ্রুপটির কোম্পানিগুলো ব্যবস্থাপনায় ৬ মাসের জন্য ‘রিসিভার’ নিয়োগ দিতে বাংলাদেশ ব্যাংককে নির্দেশ দেওয়া হয়। অপর নির্দেশনায় বিভিন্ন ব্যাংক থেকে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা সালমান এফ রহমানের নেওয়া অর্থ আদায় করতে ও বিদেশে পাঠানো অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশ ব্যাংককে নির্দেশ দেওয়া হয়।
এরপর বেক্সিমকো গ্রুপে ‘রিসিভার’ নিয়োগ দিতে হাইকোর্টের নির্দেশ স্থগিত চেয়ে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের পক্ষে আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করা হয়। এর শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগ গত ১২ নভেম্বর শুধু বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ক্ষেত্রে ‘রিসিভার’ নিয়োগের আদেশ স্থগিত করা হয়। পাশাপাশি বিচারপতি ফারাহ মাহবুবের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চকে দুই সপ্তাহের মধ্যে এ-সংক্রান্ত রুল নিষ্পত্তির নির্দেশ দেওয়া হয়। এর ধারাবাহিকতায় রুলের ওপর হাইকোর্টে ২৭ নভেম্বর শুনানি শুরু হয়।
বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস ও সালমান এফ রহমানের বেক্সিমকো গ্রুপ অব কোম্পানিজের অন্য সব ব্যবসা-সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কী পরিমাণ ঋণ অপরিশোধিত আছে, ঋণের বর্তমান অবস্থা ও রিপেমেন্টের (পরিশোধ) তথ্য দিতে এবং বেক্সিমকো গ্রুপের সব সম্পত্তি সংযুক্ত (অ্যাটাচ) করে সেসব ব্যবস্থাপনায় রিসিভার নিয়োগ বিষয়ে রুল দেওয়া হয়। ইতোমধ্যে হাইকোর্টের আদেশের প্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. রুহুল আমিনকে রিসিভার পদে নিয়োগ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
এলিস/মাহফুজ/এমএ/