শুরু হয়েছে ঈদের ছুটি। তাই অনেকেই রাজধানী ছেড়ে পাড়ি জমিয়েছেন বাড়ির পানে। এতে ঢাকা অনেকটা ফাঁকা হলেও ভিড় আছে মার্কেট-শপিংমল ও বিপণিবিতানগুলোতে। শেষ সময়ের কেনাকাটায় ব্যস্ত সময় পার করছেন রাজধানীবাসী। বানানোর সময় না থাকায় চাহিদা আছে রেডিমেড পোশাকের। বিশেষ করে প্রসাধনী-ব্যাগ-জুতা এসবের দোকানে এখন ভিড় বেশি। শেষ সময়ের এমন ভিড়ে খুশি বিক্রেতারাও।
বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) রাজধানীর হাতিরপুলের বসুন্ধরা সিটি, ইস্টার্ন প্লাজা, ইস্টার্ন মল্লিকা ঘুরে দেখা যায়, এসব শপিংমলের রেডিমেড পোশাকের দোকানগুলোতে এখন ভিড় বেশি। বিশেষ করে শিশুদের জামার দোকানে ভিড় অনেক। এসব শপিংমলে ব্র্যান্ড ও জামার কোয়ালিটিভেদে দাম হাঁকছেন বিক্রেতারা। ভিড় বেশি আছে ব্যাগ, জুতা ও প্রসাধনীর দোকানগুলোতে।
শেষ সময়ে ঈদ কেনাকাটা সারছেন মূলত যারা ছুটির সময় রাজধানীতে থাকবেন তারাই। পরীবাগ থেকে বাসার পাশের ইস্টার্ন প্লাজায় এসেছেন শাহরিয়ার হোসেন। সঙ্গে আছে পরিবার। জামা-কাপড়ের বড় কেনাকাটা শেষে এখন ঘুরছেন বিপণিবিতানগুলোতে। তার মেয়ের জন্য ম্যাচিং ব্যাগ আর জুতা কিনতে। তিনি খবরের কাগজকে বলেন, ‘ভিড় এড়াতে আমরা ঈদের ছুটি শুরুর পর কেনাকাটা শুরু করেছি। কারণ আমরা ঢাকাই ঈদ করব। ফলে বাড়ি যাওয়ার তাড়া নেই। তাই গতকাল জামা-কাপড় কেনাকাটা সেরেছি। আজ সেগুলোর সঙ্গে ম্যাচ করে মেয়ে ব্যাগ, স্যান্ডেল, মাথার ব্যান্ড এগুলো কিনব।’
অন্যদিকে কাঁঠাল বাগান থেকে ইস্টার্ন প্লাজায় প্রসাধনী ও ব্যাগ কিনতে এসেছেন তানিয়া আলম। তিনি খবরের কাগজকে বলেন, ‘এখান থেকে আমি নিয়মিতই প্রসাধনী কিনি। তাই ঈদের আগে কিছু প্রসাধনী ও মেহেদি কিনতে এসেছি। সঙ্গে ব্যাগ কেনার পরিকল্পনা আছে। এখানে ব্যাগের কালেকশনও ভালো। ম্যাচ করতে পারলে নিয়ে নেব।’
ইস্টার্ন প্লাজার ব্যাগ বিক্রেতা সাইফুল বলেন, ‘আমাদের এখানে দেশীয়, চাইনিজ, থাই ও মালয়েশিয়ান ব্যাগের ভালো সংগ্রহ আছে। শেষ সময়ে এগুলোর জন্য ভালো ক্রেতা আসছে। বিক্রিও ভালো।’
তিনি আরও বলেন, ‘ব্যাগের কোয়ালিটিভেদে দাম নির্ধারণ হয়। আমাদের এখানে রেগুলার ইউজের ছোট ব্যাগগুলোর দাম পড়ে ৮০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত। এর থেকে একটু ভালো কোয়ালিটির মাঝারি সাইজের ব্যাগগুলোর দাম ১ হাজার ২০০ থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত। আর হাইকোয়ালিটির একটু বড় ব্যাগগুলোর দাম পড়ে ২ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত।
পছন্দের জুতা কিনতে অনেকেই যাচ্ছেন এলিফ্যান্ট রোড ও ইস্টার্ন মল্লিকায়। ধানমন্ডি থেকে এলিফ্যান্ট রোডে জুতা কিনতে দোকানে দোকানে ঘুরছিলেন শরিফা ইয়াসমিন ও তার ১১ বছরের ছেলে তন্ময়। শরিফা খবরের কাগজকে বলেন, ‘ছেলের ও আমার জামা কেনা শেষ আড়ং থেকে। কিন্তু শেষ সময়ে সেখানে স্যান্ডেল পেলাম না ভালো। তাই এখানে এসেছি। কয়েকটি দোকান ঘুরেছি। কিন্তু এখনো পছন্দসই পাইনি।’
বড় সংগ্রহের জন্য বিখ্যাত এলিফ্যান্ট রোডের জুতার মার্কেট। এক জায়গায় অনেক দোকান থাকায় ক্রেতারা দেখতে পারেন অনেক সংগ্রহ। এখানকার দোকানি শহিদুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমি অনেক বছর এখানে কাজ করি। বেশির ভাগ সময়ে লম্বা ছুটি পড়লে শেষের দিকে ক্রেতা পাওয়া যায় না। কিন্তু এবার তেমন নয়। এবার ছুটি শুরুর পর অনেকেই আসছেন। ফলে বেচাবিক্রিও ভালো, তাই মালিকও খুশি।’
জামা-জুতার পর আসে প্রসাধনী ও অন্যান্য অনুষঙ্গের আবদার। আর তা পূরণ করতেই ইস্টার্ন মল্লিকায় ভিড় করছেন অনেকে। রেডিমেড জামা-জুতার পাশাপাশি এখানে রয়েছে অনেক ব্যাগ-প্রসাধনী ও গয়নার দোকান। তাই বিভিন্ন জায়গায় না ঘুরে এক জায়গা থেকে সবকিছু কিনতে অনেকেই আসেন এই শপিংমলে। এখান থেকে পোশাকের সঙ্গে ম্যাচিং গয়না কিনতে এসে সাদিয়া জামান খবরের কাগজকে বলেন, ‘এখানে ভালো নেকলেস ও কানের দুল পাওয়া যায়। জামা কেনা শেষ তাই এখানে এসেছি জামার সঙ্গে ম্যাচিং দুল ও গলার ছোট নেকলেস কিনতে।’
গয়নার দোকানের বিক্রেতা মাসুম বলেন, ‘ঈদের আগ দিয়ে এই সময়ে গয়নার দোকানে অনেক ভিড় হয়। আমরাও অপেক্ষায় থাকি এই সময়ের জন্য। তবে ঈদের ছুটি এবার আগে থেকে শুরু হওয়ায় এবার এসবের কেনাকাটাও আগে থেকে শুরু হয়েছে। ফলে এখন অন্য সময়ের মতো উপচে পড়া ভিড় নেই তবে ভিড় কমও নয়। এবার শেষ সময়ে ক্রেতাদের অনেক চাপ না থাকলেও বেচাবিক্রি ভালো।’
শেষ সময়ের প্রসাধনী কেনাকাটায় এখন তালিকা হাতে শপিংমলে ঘুরছেন ক্রেতারা। তালিকার কোনো জিনিস বাদ গেল কি না, তা দেখে কেনাকাটা সারছেন। শেষ সময়ে কাজল-আইলাইনার-মাসকারা-লিপস্টিক ও মেহেদীর মতো প্রসাধনীগুলো কিনছেন অনেকেই।