
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা ‘মার্চ ফর ইউনিটি’তে যোগ দিতে দলে দলে শহিদ মিনারে আসতে শুরু করেছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ছাত্র-জনতা।
মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) সকাল থেকে খণ্ড-খণ্ড মিছিল নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও শহিদ মিনার এলাকায় জড়ো হতে থাকেন তারা।
সরেজমিনে দেখা যায়, রাজধানীর আশেপাশের এলাকাসহ মুন্সিগঞ্জ, রাজবাড়ী, বগুড়া, রাজশাহী, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সমাবেশে যোগ দিতে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে এসেছেন শিক্ষার্থীরা।
এ সময় কথা হয় রাজবাড়ী সরকারি কলেজের এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ফাহমিদ ইমতিয়াজ অর্ণবের সঙ্গে। রাজবাড়ী সদর থেকে বাসে তারা ৫০ জন শহিদ মিনারে এসেছেন।
তিনি খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমাদের ঘোষণাপত্র দেওয়ার কথা ছিল, সঙ্গত কারণে সেটি দেওয়া হচ্ছে না। আজকের এমন সমাবেশের মধ্য দিয়ে সরকারসহ রাজনৈতিক দলগুলোকে আমরা জানান দিতে চাই, আমরা সবাই এক ও ঐক্যবদ্ধ। কোনো ভাবেই আমাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করা যাবে না। এই বার্তাটি সবার মাঝে পৌঁছাতে আমরা যে যা পেরেছি সেই টাকা দিয়ে রাজবাড়ী থেকে এখানে এসেছি।’
১৭ জুলাই বগুড়ার শেরপুরের ধুনট মোড়ে ১৮টি রাবাট বুলেট লেগেছিল শিক্ষার্থী হোসাইন ইসলামের শরীরে। তিনি তার জমজ ভাই হাসান ইসলামকে নিয়ে বৈষম্যবিরোধীদের ডাকে শহিদ মিনারে এসেছেন। এখনও শরীরে বুলেটে ক্ষত নিয়ে চলতে হচ্ছে হোসাইনকে। নিয়মিত চিকিৎসকের কাছেও যেতে হয়।
খবরের কাগজের সঙ্গে কথা হলে হোসাইন ইসলাম বলেন, ‘আমি ও আমার ছোট ভাইকে সঙ্গে নিয়ে এখানে এসেছি। এ ছাড়াও শেরপুর থেকে আমরা ছাড়াও আরও বেশ কয়েকজন এসেছি। আমরা জানান দিতে চাই, আমরা সবাই এক আছি এই দেশের জন্য। যে কারণে আমি গুলি খেয়েছি সেই আন্দোলন যেন কোনো ভাবেই বৃথা না যায়।’
খাগড়াছড়ি থেকে আসা মাদরাসাশিক্ষার্থী মো. মহিউদ্দিন খবরের কাগজকে বলেন, ‘সরকার যে ঘোষণাপত্র দেবে সেই ঘোষণাপত্র যেন একটা বৈষম্যহীন ঘোষণাপত্র হয়। আমরা চাই, ফ্যাসিস্ট সরকার যেন কোনোভাবেই আর দেশে ফিরতে না পারে। সেই সরকারের বিচার নিশ্চিতসহ স্বপ্নের এক কাঙ্খিত বাংলাদেশের স্বপ্ন যেন এই ঘোষণাপত্রে থাকে সেই আকাঙ্ক্ষা থেকে এখানে আসা। যেন কোনোভাবেই ছাত্র-জনতার জুলাই বিপ্লব ব্যর্থ হয়ে না যায়।’
এ রিপোর্ট লিখা পর্যন্ত শহিদ মিনার এলাকায় একে একে অনেকেই জড়ো হতে দেখা যায়। এসময় তারা ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাইরে’, ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা’, ‘রক্তের বন্যায় ভেসে যাবে অন্যায়’, ‘আবু সাঈদ মুগ্ধ শেষ হয়নি যুদ্ধ,’ ‘ফাঁসি ফাঁসি ফাঁসি চাই, খুনি হাসিনার ফাঁসি চাই’সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানকে সমুন্নত রাখতে গত শনিবার ‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র’ প্রকাশের ঘোষণা দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও নাগরিক কমিটি। কথা ছিল আজ মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে ঘোষণাপত্র পাঠ করা হবে। যেখানে নতুন বাংলাদেশের রূপরেখাসহ সেকেন্ড রিপাবলিকের ঘোষণার দাবি আসবে। এছাড়া কথা ছিল ঘোষণাপত্রে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিট বা জনআকাঙ্খাকে দালিলিক রূপ দেওয়া। এর কয়েকদিনের মাথায় রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনা চলে, জন্ম দেয় অনেক প্রশ্ন আর বিতর্কের। এর মাঝে সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা আসে, অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র সরকার দেবে।
সরকারের এমন ঘোষণায় গতকাল সোমবার বৈঠকে বসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও নাগরিক কমিটি। সোমবার রাতেই জরুরি মিটিংয়ে বসেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতারা। রাজধানীর বাংলামোটরে নিজেদের কার্যালয়ে রাত পৌনে ২টার দিকে সংবাদ সম্মেলন করে জানানো হয়, আজ মঙ্গলবার বিকেল ৩টায় কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে ‘মার্চ ফর ইউনিটি’ কর্মসূচি পালন করা হবে।
আরিফ জাওয়াদ/অমিয়/