
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আহত ও শহিদ হওয়া ২ হাজার ২২৯ পরিবারকে নগদ সহায়তা দিয়েছে জুলাই গণহত্যায় শহিদ হওয়া ব্যক্তিদের স্মরণে প্রতিষ্ঠিত জুলাই শহিদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন। যদিও পর্যাপ্ত ভেরিফায়েড তথ্যের অভাবে পৌঁছাতে বিলম্বিত হচ্ছে ফাউন্ডেশনের সহায়তা।
বুধবার (১ জানুয়ারি) রাজধানীর শাহবাগে ফাউন্ডেশনের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক ও নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম বা এমআইএস শাখার ভেরিফায়েড তালিকা অনুযায়ী আমরা ১৯৮ জন শহিদ পরিবারে কাছে পৌঁছানো বাকি রয়েছে। আজকে এমআইএসে দেখলাম ১১ হাজার ৩০৬ জন আহতদের তথ্য ভেরিফায়েড হয়েছে, এর মধ্যে আমরা ১ হাজার ৬০১ জনের কাছে পৌঁছেছি। এই সংখ্যা দুটোর পেছনে দূরত্ব থাকার একটিই কারণ হচ্ছে এমআইএস এখনও সংশোধিত তালিকা প্রকাশ করে যাচ্ছে। কয়েকমাস আগেই এই সংখ্যা ছিল ২৪ হাজারের মতো, তারা এখনও বিভিন্ন মাধ্যমে ক্রস চেক করছেন। যার ফলে আমরা সেটিকে স্ট্যান্ডার্ড হিসেবে ধরতে পারছি না। যদি ধরতে পারতাম, আমরা চাইলেই ১১ দিনে এই ১১ হাজার আহতদের তাদের ফান্ড দিয়ে দিতে পারতাম।’
এমআইএস ও ফাউন্ডেশনে যাদের ভেরিফায়েড তথ্য রয়েছে তারা ইতোমধ্যে সহায়তা পেয়েছে উল্লেখ করে সারজিস বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমরা যাদের সহায়তা দিয়েছি, তাদের নাম এমআইএসে এবং জুলাই শহিদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের কাছে ফাইল রয়েছে। এই দুই প্যারামিটার যখন পূরণ হয়েছে তখন আমরা তাদের সহায়তা দিয়ে দিয়েছি। এমআইএসকে আমরা বলছি, তারা যেন তালিকাটি গেজেট আকারে প্রকাশ করেন। তাহলে আমরা সেটিকে স্ট্যান্ডার্ড ধরে সহায়তা করতে পারব। এই তালিকা যেন প্রশ্নবিদ্ধ না হয় সেজন্য তথ্য ভেরিফায়েড করতে বিলম্ব হওয়াতে সহায়তা পৌঁছাতেও দেরি হচ্ছে।’
বাড়তে পারে আর্থিক সহায়তা
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আহতরা ১ লাখ এবং শহিদ পরিবার ৫ লাখ টাকার আর্থিক সহযোগিতা পাচ্ছেন। এই সহযোগিতার আকার চলতি মাসেই বাড়তে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে আহতদের ক্যাটাগরি করেও প্রদান করা হতে পারে আর্থিক সহযোগিতা।
এ প্রসঙ্গে ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস বলেন, ‘এখন আমরা আহতদের ১ লাখ টাকা করে ফান্ড দিচ্ছি, হয়ত এই মাসেই ফাউন্ডেশনের সাধারণ সভা শেষে আহতদের ৩ লাখ এবং শহিদ পরিবারদের ৩০ লাখ টাকা দেওয়া হতে পারে। এ মাসের মধ্যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে। এছাড়া শহিদ ও আহত পরিবারের সদস্যদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা, প্রয়োজনে সম্মানীর ব্যবস্থা এবং বিনামূল্যে চিকিৎসা প্রদানে ফাস্ট ট্র্যাকের ব্যবস্থা। এগুলো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, এখন বাস্তবায়ন করা বাকি রয়েছে।’
অর্থ সংগ্রহ ও সহায়তা প্রদান
জুলাই অভ্যুত্থানে আহত ও শহিদ পরিবারকে ৪৭ কোটি ৩২ লাখ ৩২ হাজার ৭২৯ টাকা সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ বলেন, ‘গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রথম এক্সিকিউটিভ কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। ১ অক্টোবর প্রথম ডিসবার্সমেন্টে প্রথম আহত ব্যক্তিকে ১ লাখ টাকা প্রদান করা হয়, তখনও আমাদের অপারেশন শুরু করতে পারিনি। পরবর্তী সময়ে ১৫ অক্টোবর থেকে পুরোপুরিভাবে অপারেশন শুরু হয়। এখন পর্যন্ত আমরা ব্যাংক একাউন্টে ১০৯ কোটি ২০ লাখ ২৩ হাজার ৫ টাকা গ্রহণ করেছি। এছাড়া টাকা এখন পর্যন্ত ডিসবার্সমেন্ট বা টাকা খরচ করেছি ৪৭ কোটি ৩২ লাখ ৩২ হাজার ৭২৯ টাকা। এখন পর্যন্ত এই টাকা ২ হাজার ২২৯ জনকে সহায়তা করা হয়েছে, এর মধ্যে ৬২৮ শহিদ পরিবার এবং ১ হাজার ৬০১ আহত পরিবাকে সহায়তা করা হয়েছে।’
যাদের তথ্য নেই, তথ্য প্রদানে যা প্রয়োজন হবে
গেল বছরের ২১ ডিসেম্বর জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে নিহত ও আহত ব্যক্তিদের প্রথম ধাপের খসড়া তালিকা প্রকাশ করেছে গণঅভ্যুত্থান সংক্রান্ত বিশেষ সেল। এ তালিকায় নেই অনেকেরই নাম। তালিকায় তথ্য প্রদানে ভেরিফিকেশনে জন্য শহিদের ক্ষেত্রে ওই ব্যক্তির মৃত্যুসনদ বা প্রত্যয়ন পত্র, শহিদ ব্যক্তির জাতীয় পরিচয়পত্র কিংবা জন্ম সনদের ফটোকপি এবং নমিনির জাতীয় পরিচয়পত্র কিংবা জন্ম সনদের ফটোকপি।
এছাড়া আহত ব্যক্তির ক্ষেত্রে জুলাই শহিদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন থেকে একটি ফরম নিয়ে তা পূরণ করে যে হাসপাতালের চিকিৎসা নিয়েছেন সেই চিকিৎসক কর্তৃক সত্যায়িত করতে হবে। যেখানে ওই চিকিৎসকের স্বাক্ষর এবং সিলমোহর থাকবে। এছাড়া যেই হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন সেই হাসপাতালে ভর্তির ফরম কিংবা ছাড়পত্র প্রয়োজন হবে যেখানেও সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক সত্যায়িত করবে। এবং নমিনির জাতীয় পরিচয় পত্র কিংবা জন্ম সনদের ফটোকপি লাগবে।
সেই সঙ্গে আহত ও শহিদ ব্যক্তি বিবাহিত হলে বাবা-মা ও স্ত্রী তিনজনেরই জাতীয় পরিচয় পত্র কিংবা জন্ম সনদের ফটোকপি প্রয়োজন হবে। অন্যদিকে অবিবাহিত হলে বাবা-মার মধ্যে যেকোনো একজনেরটি হলেই চলবে।
এ প্রসঙ্গে সারজিস বলেন, ‘আহত ব্যক্তি বা শহিদ পরিবারের সদস্যরা যদি আমাদের কাগজ দিতে পারেন, সেক্ষেত্রে আমরা এখান থেকেই তাদের তথ্য ভেরিফায়েড করে দিতে পারব এবং তাদের আর কোথাও যেতে হবে না এবং ফাউন্ডেশন থেকেই এমআইএসে ইনপুট দেওয়া হবে।’
এতে অন্যান্যদের মধ্যে জুলাই শহিদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের মিডিয়া অ্যান্ড পিআর এক্সিকিউটিভ জাহিদ হোসেন, এইচ আর অ্যাডমিন সোহেল মিয়া, অবৈতনিক অর্থ-সম্পাদক আহসান হাবিব চৌধুরী, সদস্য মীর মুগ্ধের পিতা মীর মোস্তাফিজুর রহমান, গোলাম নাফিদের পিতা গোলাম রহমান, শহিদ ইমাম হাসানের ভাই রবিউল অওয়াল ভূঁইয়াসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
আরিফ জাওয়াদ/মাহফুজ/এমএ/