
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও দৈনিক কালের কণ্ঠের সম্পাদক কবি হাসান হাফিজ বলেছেন, ভারতীয় মিডিয়া আমাদের বাংলাদেশ সম্পর্কে বিশ্ববাসীর কাছে ভুল বার্তা দিচ্ছে। জাতীয় সংকট আমাদের আছে। ষড়যন্ত্র হচ্ছে, আরও অনেক ষড়যন্ত্র হবে। এসবের বিরুদ্ধে আমাদের সোচ্চার থাকতে হবে।
শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে তিনি এ কথা বলেন। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব ভূঁইয়্যা।
কবি হাসান হাফিজ বলেন, চট্টগ্রাম বিট্রিশবিরোধী আন্দোলনের সূতিকাগার। আমি গর্বিত যে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্য সেন হলের ছাত্র ছিলাম। আমি এই পেশায় এসেছি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ছোট ভাই মুহাম্মদ জাহাঙ্গীরের হাত ধরে। আমি সম্পাদক হওয়ার পর থেকে মাত্র তিন দিন ছুটি নিয়েছি। একদিন জাতীয় প্রেস ক্লাবের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে। আরেক দিন ইকোনোমিক রিপোটার্স ফোরামের নির্বাচনে এবং আজকে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের জন্য। আমার দুইবার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করার সুযোগ হয়েছে। আমি ওনাকে বলেছি, আমাদের একজন মাহাথির মোহাম্মদ লাগবে, আমাদের একজন রিকুয়ানিও লাগবে। আমরা ১০০ বছর ৫০ বছর অপেক্ষা করতে পারব না। আমরা একটি স্বাধীন, সার্বভৌম দেশ হিসেবে নিজেদেরকে মাথা তুলে দাঁড়াতে চাই। আমরা যে সুযোগ পেয়েছি সেটি যদি নষ্ট হয়ে যায় তাহলে হয়তো আরও স্বৈরাচার আমাদের ওপর চেপে বসবে। আমি এও বলেছি, আপনাদেরকে বেশি সময় দেবে না। একটা যৌক্তিক সময় দেবে। এর মধ্যে যতটা পারা যায়।
তিনি আরও বলেন, আমরা মিডিয়া যেন দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিই। আমরা যেন স্বাধীনতার নামে স্বেচ্ছাচারিতা না করি। আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংস্কার চাই, পরির্বতন চাই। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-সাংবাদিকসহ অনেক মানুষ প্রাণ দিয়েছে। আমাদের সবার রক্তের সঙ্গে যেন আমরা বেঈমানি না করি।
তিনি বলেন, দেশে ও দেশের বাইরে ষড়যন্ত্র চলছে। আমাদের গণমাধ্যমগুলো এখনো সঠিক লাইনে আসে নাই। ভারতীয় মিডিয়া আমাদের দেশ নিয়ে বিশ্ববাসীর কাছে ভুল বার্তা দিচ্ছে। আমাদেরকে রুখে দাঁড়ানোর এখনই সময়। এখনও কেন রক্ত ঝড়বে, আমাদের সীমান্তের কাঁটাতারে ফেলানীর মতো লাশ দেখতে চাই না। আমাদের বন্ধুত্ব হতে হবে সমতা ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে।
হাসান হাফিজ বলেন, আমরা যেন সত্যিকারের বৈষম্যমুক্ত, সাম্যের, ন্যায়ের এবং শোষণমুক্ত, মুক্তচিন্তার প্রতিধ্বনি থাকবে সেই রকম একটা বাংলাদেশ চাই। সাংবাদিকদের দায়িত্ব অনেক বেশি। আমরা সবাই মিলে কাজ করব।
তিনি বলেন, জাতীয় প্রেসক্লাব আপনাদের পাশে আছে। আপনারা যখনই ঢাকায় যাবেন আপনাদের জন্য আমাদের দরজা সবসময় অবারিত। আমরা একসঙ্গে এগিয়ে যাব।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব ভূঁইয়া বলেন, নতুন বাংলাদেশে নতুন স্বপ্ন দেখছি আমরা। নতুন করে সাংবাদিকতাকে আবার বাংলাদেশে এস্টাবলিশ করার জন্য স্বপ্ন দেখছি। গত ১৫ বছরে বাংলাদেশের সাংবাদিকতা চলে গিয়েছিল জাদুঘরে। আজকে সাংবাদিকতাকে জাদুঘর থেকে বের করে আনতে হবে।
তিনি বলেন, জাতীয় প্রেসক্লাব ও চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করব। যার ফলে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাংবাদিকরা ঢাকায় গেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সুযোগ সুবিধা ভোগ করতে পারবে।
চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের অন্তবর্তী কমিটির সদস্য সচিব জাহিদুল করিম কচির সভাপতিত্বে সংবর্ধনা সভায় বক্তব্য রাখেন প্রেসক্লাব অন্তবর্তী কমিটির সদস্য মুস্তফা নঈম, গোলাম মাওলা মুরাদ, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ, সাধারণ সম্পাদক সালেহ নোমান, চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন ও মঈনুদ্দিন কাদেরী শওকত।
প্রেসক্লাবের সিনিয়র সদস্য শাহনেওয়াজ রিটনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রেসক্লাবের সদস্য, সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
অনু্ষ্ঠানে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি কবি হাসান হাফিজ ও সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার বার্তা সম্পাদক আইয়ুব ভূঁইয়্যাকে ক্রেস্ট তুলে দেন চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের অন্তর্বর্তীকালীন কমিটির সদস্য সচিবসহ নেতারা।
মাহফুজ/এমএ/