
দেশে নবজাতকদের মধ্যে অপরিণত জন্মের হার ক্রমশ উদ্বেগজনক মাত্রায় পৌঁছেছে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ভর্তি হওয়া নবজাতকদের মধ্যে ৬৪ শতাংশই অপরিণত অবস্থায় জন্ম নিয়েছে। বিষয়টি নবজাতক স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে গুরুতর চ্যালেঞ্জের ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সোমবার (১২ জানুয়ারি) বিএসএমএমইউর এ-ব্লক অডিটোরিয়ামে বিশ্ববিদ্যালয়টির সেন্ট্রাল সেমিনার সাব কমিটি আয়োজিত ‘অপরিণত বয়সে জন্মগ্রহণ: সচেতনতাই মূল পদক্ষেপ’ শীর্ষক সেমিনারে নিওনেটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এম এ মান্নান ‘প্রিম্যাচুরিটি: এ্যাকসেস টু কোয়ালিটি কেয়ার এভরিহোয়ার’ শীর্ষক প্রবন্ধে এসব তথ্য উপস্থাপন করেন।
সেমিনারে প্রিম্যাচুরিটি নিয়ে নানা দিক আলোচনা করা হয়। গর্ভাবস্থায় সঠিক পুষ্টি, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, মানসিক চাপ কমানো, অপরিণত নবজাতক এর জন্য ক্যাঙ্গারু মাদার কেয়ার নিশ্চিত করা, পাশাপাশি নবজাতককে প্রথম এক বছর সমন্বিত চিকিৎসার অধীনে রাখার উপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
বিশ্বে প্রতি বছর দেড় কোটি অপরিণত নবজাতক জন্ম নেয়। তাদের মধ্যে ১০ লক্ষ নবজাতক বিভিন্ন জটিলতায় মারা যায়। এই সংখ্যা মোট নবজাতকের মৃত্যুর ৩৫ শতাংশ উল্লেখ করে এম এ মান্নান বলেন, 'প্রিম্যাচিউর নবজাতকদের জন্য সঠিক চিকিৎসা ও পরিচর্যা অত্যন্ত জরুরি। সচেতনতা বৃদ্ধি ও সঠিক যত্নসহ ‘ক্যাঙ্গারু মাদার কেয়ার’ পদ্ধতির মাধ্যমে প্রিম্যাচুর নবজাতকদের জীবন রক্ষা ও সুস্থতা বৃদ্ধি নিশ্চিত করা সম্ভব।'
সেমিনারে ‘লং-টার্ম নিউরোডেভেল্পমেন্টাল আউটকামস ইন প্রিম্যাচুর ইনফান্টস: এ্যাভিডেন্স-বেইসড স্ট্র্যাটেজিস ফর ফলোআপ’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএসএমএমইউর পেডিয়াট্রিক নিউরোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. কানিজ ফাতেমা।
তিনি বলেন, 'যে সকল শিশু অপরিণত অবস্থায় জন্মগ্রহণ করে তাদের মধ্যে ১০ শতাংশ থেকে ৫০ শতাংশের ভবিষ্যতে স্নায়বিক বিকাশজনিত সমস্যা যেমন: সেরিব্রাল পালসি, অটিজম, অতিচঞ্চলতা, মৃগীরোগ ইত্যাদি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ জন্য অপরিণতভাবে জন্মগ্রহণকারী শিশুদের জন্মের প্রথম এক বছর সমন্বিত চিকিৎসার অধীনে রাখা প্রয়োজন।'
‘প্রিম্যাচুর বার্থ: এ্যান্টেন্যাটাল পারসপেক্টিভ’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ফিটোম্যাটার্নাল মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. তাবাসসুম পারভীন।
তিনি বলেন, 'বিশ্বের সর্বোচ্চ প্রি-টার্ম জন্মের হার বাংলাদেশে, যা ১৬ দশমিক ২ শতাংশ। এ অবস্থা মোকাবিলায় প্রাক-গর্ভাবস্থার যত্ন, অন্তঃসত্ত্বা মায়ের যত্ন, প্রসবকালীন যত্ন এবং অন্তত চারটি পোস্টনেটাল যন্ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রাক-গর্ভাবস্থা এবং শুরুর অন্তঃসত্ত্বা যত্নে ঝুঁকি নির্ধারণ করা উচিত। যেমন- কিশোর বয়সে গর্ভধারণ, একাধিক গর্ভাবস্থা, সংক্রমণ, দীর্ঘমেয়াদী রোগ, অতিরিক্ত কাজের চাপ, জীবনযাত্রার আচরণ, অপুষ্টি এবং এগুলোর চিকিৎসা করা। যখন প্রি-টার্ম ডেলিভারির ঝুঁকি থাকে, তখন নবজাতকের শ্বাসপ্রশ্বাসের কষ্ট কমাতে অন্তঃসত্ত্বা মা কে কর্টিকোস্টেরয়েড দেওয়া উচিত। শিশুর নিউরোপ্রটেকশনের জন্য মায়ের ম্যাগনেসিয়াম সালফেট, অ্যান্টিবায়োটিকস এবং টোকোলাইটিক্স ব্যবহার করা উচিত। ডেলিভারির পর সব প্রি-টার্ম নবজাতকের ক্যাঙ্গারু মাদার কেয়ার দরকার। সর্বনিম্ন খরচে অথবা কোনো খরচ ছাড়াই এসব প্রচেষ্টার মাধ্যমে আমরা প্রি-টার্ম জন্মের তিন-চতুর্থাংশ কমিয়ে আনতে পারি।'
সেন্ট্রাল সেমিনার সাব কমিটির চেয়ারপারসন অধ্যাপক ডা. আফজালুন নেছার সভাপতিত্বে এবং ডা. খালেদ মাহবুব মোর্শেদের সঞ্চালনায় সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম। বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. মো. আবুল কালাম আজাদ। এ ছাড়া আরও বক্তব্য রাখেন মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. শামীম আহমেদ ও শিশু অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মো. আতিয়ার রহমান।
আরিফ সাওন/নাবিল/সিফাত