ত্রাণ ও দুর্যোগবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক ই আজম বলেছেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থান ছিল এক ন্যায়সঙ্গত সমাজ প্রতিষ্ঠার লড়াই। যেখানে তরুণরা স্বৈরাচারী দমননীতির বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে আসে এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের দাবি তোলে।
শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় ইউনিটি চট্টগ্রাম শিল্পকলা অ্যাকাডেমির আর্ট গ্যালারিতে দুই দিনব্যাপী আর্ট এক্সিবিশন 'দ্য আর্ট অব ডেমোক্রেসি, ইউনিটিতে- জার্নি অব ইউনিটি' শুরু হয়। আর্ট এক্সিবিশন উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
ফারুক ই আজম বলেন, 'জুলাই বিপ্লবে ইতিহাস ধরে রাখার তরুণদের এমন উদ্যোগ যেন পূর্ণতা পায়। ইতোমধ্যে জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানে নিহতদের পরিবারদের পাশে দাঁড়িয়েছে সরকার। আহতদের সুচিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। অনেককে বিদেশে চিকিৎসা করানো হচ্ছে। জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচারটা যেন তাড়াতাড়ি হয়। আমরা আশাবাদী। আর বৈষম্য করা যাবে না। পুরো রাষ্ট্রকে সুস্থ ধারায় ফিরিয়ে আনতে হবে।'
মঞ্চে উঠে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন উপস্থাপন করেন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার পক্ষ থেকে ইতিহাস ভুলিয়ে দেওয়ার চিরকালীন প্রচেষ্টার বিষয়টি।
তিনি বলেন, '৫২ ভাষা আন্দোলন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ; সব সংগ্রামই বৈষম্যের বিরুদ্ধে। জুলাই বিপ্লব বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দ্বারা সৃষ্টি হলেও এটি মূলত ক্ষমতার বিরুদ্ধে মানুষের লড়াই। আর সেই বিপ্লবের ইতিহাস ধারণ করে এখন চলবে বিস্মৃতির বিরুদ্ধে স্মৃতির লড়াই। এই স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে বিজয়কে কোনোভাবেই নস্যাৎ করতে দেওয়া যাবে না। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের এই আন্দোলন আমাদের ঐক্যবদ্ধ করেছে এবং আমরা এই ঐক্য ধরে রাখব।'
‘দ্য আর্ট অব ডেমোক্রেসি, ইউনিটিতে- জার্নি অব ইউনিটি’ প্রকল্পের পরিচালক মিনহাজ উদ্দিন বলেন, 'রক্তাক্ত জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের স্মৃতি ও ইতিহাস ধরে রাখার গুচ্ছ প্রয়াস ‘দ্য আর্ট অব ডেমোক্রেসি, ইউনিটিতে জার্নি অব ইউনিটি’। বছরজুড়ে বিভিন্ন ক্যাম্পাসে চিত্রপ্রদর্শনী, তথ্যচিত্র নির্মাণ, আর্কাইভ বুক, ডাটাবেইজ ওয়েবসাইট থাকছে এ প্রকল্পে।
প্রকল্পের উপদেষ্টা ওয়াহিদ জামান জানান, জুলাই বিপ্লবের ইতিহাসকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ছড়িয়ে দিতে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে অপশক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যের বার্তা পৌঁছে দিতে ডকুমেন্টারি নির্মাণ, আর্কাইভ বুক, ম্যাগাজিন প্রকাশের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মূলত আজকে জুলাই বিপ্লবের বিভিন্ন ঘটনাপ্রবাহের চিত্রপ্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে পুরো প্রকল্পটির উদ্বোধন করা হয়েছে।
‘ঐক্যের গণজোয়ারে আবারও এক হই'- এ স্লোগানে শুরু হওয়া প্রদর্শনী উদ্বোধনের পর আগত অতিথি ও দর্শনার্থীরা শিল্পকলার আর্ট গ্যালারি দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় প্রদর্শনীস্থল ঘুরে দেখেন। ২০১৮ সালের কোটাবিরোধী আন্দোলন ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৬০টি ছবি স্থান পেয়েছে প্রদর্শনীতে।
এর আগে জুলাই বিপ্লবের ইতিহাসভিত্তিক ম্যাগাজিনের মোড়ক উন্মোচন করেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম।
২০২৪ সালের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ছাত্রছাত্রীরাও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। প্রদর্শনীতে গণ-অভ্যুত্থানের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তের ছবি, আন্দোলনকারীদের স্মৃতিচারণ এবং ভবিষ্যৎ আন্দোলনের করণীয় বিষয়ে আলোচনা করা হয়।
প্রদর্শনীটি শুক্র ও শনিবার দুই দিন চলবে।
জোবাইদা/