ঢাকা ২৫ মাঘ ১৪৩১, শনিবার, ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
English
শনিবার, ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৫ মাঘ ১৪৩১

সিডিএর ১৩ প্রকল্পে অনিয়ম

প্রকাশ: ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮:২৬ এএম
আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮:৩৫ এএম
সিডিএর ১৩ প্রকল্পে অনিয়ম
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) প্রায় সাড়ে ২২ হাজার কোটি টাকার ১৩টি উন্নয়ন প্রকল্পের অনিয়ম অনুসন্ধানের কাজ শুরু করেছে তদন্ত কমিটি। তদন্তের প্রথম দিন বেশ কয়েকটি প্রকল্প পরিদর্শন এবং প্রকল্পসংশ্লিষ্ট কাগজপত্রাদি সংগ্রহ করেছেন কমিটির সদস্যরা। 

বিষয়টি নিশ্চিত করে তদন্ত কমিটির সদস্যসচিব ও সিডিএর সচিব রবীন্দ্র চাকমা খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমরা তদন্তের প্রাথমিক কাজ শুরু করেছি। ইতোমধ্যে আউটার রিং রোড, বায়েজিদ লিংক রোড, সিডিএ স্কয়ার পরিদর্শন করা হয়েছে। ক্রমান্বয়ে অন্যান্য প্রকল্পও পরিদর্শন করব। যেহেতু তদন্তকাজ সবেমাত্র শুরু হয়েছে, তাই এই মুহূর্তে কোনো প্রকল্পের অনিয়ম নিয়ে মন্তব্য করার সুযোগ নেই। সব কাগজপত্র পর্যালোচনা তদন্ত শেষে বলতে পারব, কোনো প্রকল্পে অনিয়ম হয়েছে কি না, হয়ে থাকলে কী ধরনের অনিয়ম হয়েছে।’

এই তদন্ত কমিটির সদস্যরা হিসেবে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব কামাল উদ্দিনকে আহ্বায়ক এবং সিডিএর সচিব রবীন্দ্র চাকমাকে সদস্যসচিব করা হয়েছে। কমিটির অপর সদস্যরা হলেন পরিকল্পনা শাখার উপসচিব-২ মো. নাজমুল আলম, সিডিএর বোর্ড সদস্য স্থপতি সৈয়দা জেরিনা হোসাইন ও অ্যাডভোকেট সৈয়দ কুদরত আলী।

তদন্তাধীন সিডিএর ১৩ প্রকল্প হলো ৪ হাজার ২৯৮ কোটি টাকার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ২ হাজার ১৭ কোটি টাকার বাকলিয়া এক্সেস রোড, ৬৯৮ কোটি টাকার মুরাদপুর ফ্লাইওভার, ১৪৭ কোটি টাকার বহদ্দারহাট ফ্লাইওভার, ৫৮ কোটি টাকার কদমতলী ফ্লাইওভার, ৮ হাজার ৬২৬ কোটি টাকার জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প, ২ হাজার ৭৭৯ কোটি টাকার কালুরঘাট-চাক্তাই রিং রোড প্রকল্প, ৩ হাজার ৩২৪ কোটি টাকার চিটাগাং সিটি আউটার রিং রোড প্রকল্প, ৩২০ কোটি টাকার বায়েজিদ লিংক রোড প্রকল্প, ৩৫ কোটি টাকার সল্টগোলা ডরমেটরি প্রকল্প।

এ ছাড়া সিডিএর ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্প- সিডিএ স্কয়ার, কল্পতরু প্রকল্প এবং চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন মাস্টার প্ল্যান প্রকল্প নিয়েও তদন্ত করবে কমিটি। এসব প্রকল্পের মোট ব্যয় প্রায় সাড়ে ২২ হাজার কোটি টাকা। তদন্তাধীন প্রকল্পের মধ্যে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য 
প্রকল্পকাজের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আলোচনায় ছিল। 

বাকলিয়া এক্সেস রোড
বাকলিয়া এক্সেস রোডের ওপর ১০ তলা ভবন নির্মাণের অনুমোদন দিয়ে আলোচনায় আসে সড়কটি। নবাব সিরাজউদৌল্লাহ সড়ক থেকে বাকলিয়া থানা পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়ক নির্মাণকাজ শুরুর আগেই সড়কের অ্যালাইনমেন্টের ওপর ১০ তলা একটি ভবন নির্মাণের অনুমোদন দেয় সিডিএ। পরে এই ভবনের কারণে সড়কটি বাঁকা করে নির্মাণ করা হয়। 

বহদ্দারহাট ফ্লাইওভার
চট্টগ্রাম শহরের প্রথম ফ্লাইওভার হলো বহদ্দারহাট ফ্লাইওভার। ২০১২ সালে এই ফ্লাইওভারের গার্ডার ধসে ১৩ জন নিহত হন। আলোচিত সেই দুর্ঘটনায় আট আসামির সাত বছর করে কারাদণ্ড হয়। নির্মাণের এক দশক পার না হতেই ফ্লাইওভারটির চান্দগাঁও আবাসিকগামী র‌্যাম্পের একটি পিলারে ফাটল ধরার ঘটনা ধরা পড়ে। যদিও সিডিএ বিষয়টি অস্বীকার করে। তবে ওই র‌্যাম্প দিয়ে ভারী যানবাহন ওঠানামা বন্ধ করে দেওয়া হয়। 

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে
প্রকল্পের নাম ‘লালখান বাজার থেকে শাহ আমানত বিমানবন্দর পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। কিন্তু লালখান বাজারেই এক্সপ্রেসওয়েতে গাড়ি ওঠার র‌্যাম্প নেই। এই মোড়ে শুধু নামার সুযোগ রাখা হয়েছে। এ কারণে শুরু হয়েছে উল্টোপথে যানবাহন চলাচলের প্রবণতা। যারা শৃঙ্খলা মেনে এক্সপ্রেসওয়েতে উঠতে চান, তাদের ঘুরতে হবে দুই কিলোমিটার। এদিকে এই এক্সপ্রেসওয়েতে ১৪টি র‌্যাম্প নির্মাণের প্রস্তাব থাকলেও ৫টির কাজ আপাতত না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থাটি। মূলত র‌্যাম্প নির্মাণের কারণে যানজটের সৃষ্টি হতে পারে এই আশঙ্কা থেকেই র‌্যাম্পগুলো নির্মাণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিডিএ। অন্যদিকে বাওয়া স্কুলের সামনে র‌্যাম্প নির্মাণের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলছে। 

এ ছাড়া টাইগারপাসের দৃষ্টিনন্দন দুটি পাহাড়ের সৌন্দর্য মলিন করে র‌্যাম্প নির্মাণের বিরুদ্ধে একাট্টা হয়েছিল চট্টগ্রামের সচেতন মহল। এমনকি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের তৎকালীন মেয়র টাইগারপাস রক্ষার জন্য সিডিএকে চিঠি দিয়েছিলেন। কিন্তু সিডিএ তাতে সাড়া দেয়নি। তারা টাইগারপাসের দুই পাহাড়ের একাংশ কেটে র‌্যাম্প নির্মাণ করে। এ ক্ষেত্রে সিডিএ নিজেই নিজের আইন ভঙ্গ করে। কারণ চট্টগ্রামের ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান (ডিএপি) এবং মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী বাটালী হিল থেকে শুরু করে সিআরবি পর্যন্ত এলাকা ‘হেরিটেজ জোন’ হিসেবে চিহ্নিত। টাইগারপাসের পাহাড়গুলোও এই জোনের অন্তর্ভুক্ত। 

১৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি ২০১৭ সালের ১১ জুলাই জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে অনুমোদন পায়। ২০১৮ সালের নভেম্বরে প্রকল্পের নির্মাণকাজ শুরু হয়। প্রথমে ৩ হাজার ২৫০ কোটি ৮৩ লাখ ৯৪ হাজার টাকা প্রকল্প ব্যয় নির্ধারণ হয়েছিল। পরে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৪ হাজার ২৯৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকায়। সম্প্রতি এই এক্সপ্রেসওয়েতে টোল আদায় শুরু করেছে সিডিএ। 

জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প
সিডিএর চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনর্খনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন প্রকল্প প্রথম দফায় সংশোধন করায় ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৮ হাজার ৬২৬ কোটি ৬২ লাখ টাকা। শুরুতে ব্যয় ছিল ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা। তিন বছরের কাজ সাত বছরেও শেষ করতে না পারায় একলাফে ব্যয় বৃদ্ধি পায় ৩ হাজার ১০ কোটি টাকা। বর্ধিত ব্যয়ের মধ্যে অর্ধেক ১ হাজার ৫০৩ কোটি টাকা সরকার প্রকল্পের জন্য দিতে রাজি হয়। বাকি ১ হাজার ৫০৬ কোটি টাকার মধ্যে ঋণ হিসেবে ৭৫৩ কোটি টাকা দেবে সরকার। বাকি ৭৫৩ কোটি টাকা সিডিএর নিজস্ব তহবিল থেকে দিতে হবে। 

এখন পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি হয়েছে ৭২ শতাংশ। সিডিএর যে আর্থিক সামর্থ্য, তাতে সরকারি ঋণ ও নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। তাই ১ হাজার ৫০৬ কোটি ৪৮ লাখ টাকা সরকারের তহবিল থেকে অনুদান প্রয়োজন। বাস্তবায়নকারী সংস্থা থেকে প্রকল্পের প্রায় ৭০ শতাংশ কাজের অগ্রগতির কথা দাবি করা হলেও বাস্তবে বর্ষা এলেই নগরবাসী জলাবদ্ধতায় ভোগেন। নতুন নতুন এলাকায় পানি জমছে। সেই অর্থে এই প্রকল্পে তেমন সুফল মিলছে না।

চিটাগাং সিটি আউটার রিং রোড
১৩ বছর ধরে কাজ চললেও এখন পর্যন্ত পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি চট্টগ্রাম সিটি আউটার রিং রোড। নগরের পতেঙ্গা থেকে সাগরিকা পর্যন্ত সমুদ্রপাড়ে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক নির্মাণের এই প্রকল্প নেওয়া হয় ২০১১ সালে। মূল সড়কের কাজ শেষে যান চলাচল শুরু হয়েছে। ২০১১ সালে মূল প্রকল্প অনুমোদনের সময় ব্যয় ধরা হয়েছিল ৮৫৬ কোটি ২৮ লাখ টাকা। তৃতীয় দফা সংশোধনের পর প্রকল্প ব্যয় দাঁড়ায় ২ হাজার ৬৭৫ কোটি টাকায়। তবে এ টাকায় কাজ শেষ করতে পারেনি সিডিএ। নতুন করে মেয়াদ যুক্ত করায় খরচ ৬৪৮ কোটি টাকা বেড়ে মোট ব্যয় ৩ হাজার ৩২৪ কোটি ১৫ লাখ টাকা দাঁড়ায়। চতুর্থ দফায় বৃদ্ধি পাওয়া টাকার মধ্যে ৩৮৮ কোটি টাকা ঋণ হিসেবে দিতে রাজি হয় সরকার, কিন্তু ঋণ নিয়ে তা পরিশোধের সামর্থ্য নেই সিডিএর। 

বায়েজিদ লিংক রোড
চট্টগ্রামের বায়েজিদ বোস্তামী থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত লিংক রোড নির্মাণের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে ২০১৬ সালে ছাড়পত্র নেয় সিডিএ। কিন্তু ছাড়পত্রের শর্ত লঙ্ঘন করে পাহাড় কাটার কারণে সিডিএকে ১০ কোটি টাকা জরিমানা করে পরিবেশ অধিদপ্তর। অত্যন্ত খাড়াভাবে কাটা সড়কের পাশের পাহাড়গুলো বর্ষাকালে মূর্তিমান আতঙ্ক হয়ে ওঠে। প্রতি বর্ষায় পাহাড়ধসের কারণে এই সড়কটি বেশ কয়েকবার বন্ধ হয়েছে।

আবহাওয়ার পূর্বাভাস: ৬ জেলায় শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে

প্রকাশ: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:১৫ পিএম
আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:২২ পিএম
আবহাওয়ার পূর্বাভাস: ৬ জেলায় শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে
ছবি: খবরের কাগজ

রাজশাহী, পাবনা, নওগাঁ, দিনাজপুর, মৌলভীবাজার এবং চুয়াডাঙ্গা জেলার ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।

শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এ তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর।

এ ছাড়া অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।

অন্যদিকে শেষরাত থেকে ভোর পর্যন্ত সারা দেশের কোথাও কোথাও হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে।

পূর্বাভাসে আরও বলা হয়েছে, সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকার পাশাপাশি দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে। 

সুমন/

গাজীপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক

প্রকাশ: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০৩ পিএম
আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:৪২ পিএম
গাজীপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন

গাজীপুর সদর উপজেলার রাজবাড়ি মাঠে বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

শনিবার (৮ ফেব্রয়ারি) বেলা ১১টার দিকে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা।

এতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত থাকবেন।

ইতোমধ্যে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশ স্থলে আসতে শুরু করেছে নেতা-কর্মীরা।

এর আগে আজ ভোর চারটার দিকে তাদের ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে এই কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

ওই পোস্টে বলা হয়, ‘গাজীপুরের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠকদের ওপর আওয়ামী সন্ত্রাসী মোজাম্মেল-জাহাঙ্গীরের চাপাতিবাহিনীর হামলার প্রতিবাদে আজ শনিবার বিশাল বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। সমাবেশে উপস্থিত থাকবেন সারাদেশের আপামর ছাত্রজনতা ও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দরা।’

অমিয়/

জুলাই গণ-অভ্যুত্থান ন্যায়সঙ্গত সমাজ প্রতিষ্ঠার লড়াই: ফারুক ই আজম

প্রকাশ: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১:৪৮ এএম
আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:৪৩ পিএম
জুলাই গণ-অভ্যুত্থান ন্যায়সঙ্গত সমাজ প্রতিষ্ঠার লড়াই: ফারুক ই আজম
ছবি : খবরের কাগজ

ত্রাণ ও দুর্যোগবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক ই আজম বলেছেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থান ছিল এক ন্যায়সঙ্গত সমাজ প্রতিষ্ঠার লড়াই। যেখানে তরুণরা স্বৈরাচারী দমননীতির বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে আসে এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের দাবি তোলে। 

শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় ইউনিটি চট্টগ্রাম শিল্পকলা অ্যাকাডেমির আর্ট গ্যালারিতে দুই দিনব্যাপী আর্ট এক্সিবিশন 'দ্য আর্ট অব ডেমোক্রেসি, ইউনিটিতে- জার্নি অব ইউনিটি' শুরু হয়। আর্ট এক্সিবিশন উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। 

ফারুক ই আজম বলেন, 'জুলাই বিপ্লবে ইতিহাস ধরে রাখার তরুণদের এমন উদ্যোগ যেন পূর্ণতা পায়। ইতোমধ্যে জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানে নিহতদের পরিবারদের পাশে দাঁড়িয়েছে সরকার। আহতদের সুচিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। অনেককে বিদেশে চিকিৎসা করানো হচ্ছে। জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচারটা যেন তাড়াতাড়ি হয়। আমরা আশাবাদী। আর বৈষম্য করা যাবে না। পুরো রাষ্ট্রকে সুস্থ ধারায় ফিরিয়ে আনতে হবে।'

মঞ্চে উঠে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন উপস্থাপন করেন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার পক্ষ থেকে ইতিহাস ভুলিয়ে দেওয়ার চিরকালীন প্রচেষ্টার বিষয়টি।

তিনি বলেন, '৫২ ভাষা আন্দোলন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ; সব সংগ্রামই বৈষম্যের বিরুদ্ধে। জুলাই বিপ্লব বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দ্বারা সৃষ্টি হলেও এটি মূলত ক্ষমতার বিরুদ্ধে মানুষের লড়াই। আর সেই বিপ্লবের ইতিহাস ধারণ করে এখন চলবে বিস্মৃতির বিরুদ্ধে স্মৃতির লড়াই। এই স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে বিজয়কে কোনোভাবেই নস্যাৎ করতে দেওয়া যাবে না। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের এই আন্দোলন আমাদের ঐক্যবদ্ধ করেছে এবং আমরা এই ঐক্য ধরে রাখব।' 

‘দ্য আর্ট অব ডেমোক্রেসি, ইউনিটিতে- জার্নি অব ইউনিটি’ প্রকল্পের পরিচালক মিনহাজ উদ্দিন বলেন, 'রক্তাক্ত জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের স্মৃতি ও ইতিহাস ধরে রাখার গুচ্ছ প্রয়াস ‘দ্য আর্ট অব ডেমোক্রেসি, ইউনিটিতে জার্নি অব ইউনিটি’। বছরজুড়ে বিভিন্ন ক্যাম্পাসে চিত্রপ্রদর্শনী, তথ্যচিত্র নির্মাণ, আর্কাইভ বুক, ডাটাবেইজ ওয়েবসাইট থাকছে এ প্রকল্পে। 

প্রকল্পের উপদেষ্টা ওয়াহিদ জামান জানান, জুলাই বিপ্লবের ইতিহাসকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ছড়িয়ে দিতে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে অপশক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যের বার্তা পৌঁছে দিতে ডকুমেন্টারি নির্মাণ, আর্কাইভ বুক, ম্যাগাজিন প্রকাশের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মূলত আজকে জুলাই বিপ্লবের বিভিন্ন ঘটনাপ্রবাহের চিত্রপ্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে পুরো প্রকল্পটির উদ্বোধন করা হয়েছে।

‘ঐক্যের গণজোয়ারে আবারও এক হই'- এ স্লোগানে শুরু হওয়া প্রদর্শনী উদ্বোধনের পর আগত অতিথি ও দর্শনার্থীরা শিল্পকলার আর্ট গ্যালারি দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় প্রদর্শনীস্থল ঘুরে দেখেন। ২০১৮ সালের কোটাবিরোধী আন্দোলন ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৬০টি ছবি স্থান পেয়েছে প্রদর্শনীতে। 

এর আগে জুলাই বিপ্লবের ইতিহাসভিত্তিক ম্যাগাজিনের মোড়ক উন্মোচন করেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম।

২০২৪ সালের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ছাত্রছাত্রীরাও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। প্রদর্শনীতে গণ-অভ্যুত্থানের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তের ছবি, আন্দোলনকারীদের স্মৃতিচারণ এবং ভবিষ্যৎ আন্দোলনের করণীয় বিষয়ে আলোচনা করা হয়।

প্রদর্শনীটি শুক্র ও শনিবার দুই দিন চলবে।

জোবাইদা/

সংস্কার কমিশনের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ আজ

প্রকাশ: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১:২৬ এএম
সংস্কার কমিশনের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ আজ

অন্তর্বর্তী সরকার কর্তৃক রাষ্ট্র সংস্কারে গঠন করা হয় ছয়টি কমিশনের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে আজ।

সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) সংস্কার কমিশনের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন ও সুপারিশমালা রাজনৈতিক দল ও গণ-অভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তির কাছে পাঠানো হবে। এরপর রাজনৈতিক দল ও গণঅভ্যুত্থানের পক্ষের সব শক্তির সঙ্গে আলোচনা এবং সমঝোতাক্রমে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রথম আনুষ্ঠানিক বৈঠক ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে হবে।‌ এ তারিখ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেই ঠিক করা হবে।

একইসঙ্গে কমিশনের প্রধানরা পরবর্তী আশু করণীয়, মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা বা ভবিষ্যতে নির্বাচিত সরকার কী করতে পারে- সেটির সর্বসম্মত সুপারিশমালা পেশ করবেন।

গত বছরের ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনুস রাষ্ট্রের বিভিন্ন খাতে সংস্কারের জন্য ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করে দেন। এসব কমিশনকে ৯০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়।

গত ১৫ জানুয়ারি সংবিধান, নির্বাচন কমিশন, পুলিশ সংস্কার ও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এই চারটি এবং গত বুধবার জনপ্রশাসন ও বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টার কাছে পেশ করে।

অমিয়/

এখনো বিছানায় জুয়েল, দিশেহারা কৃষক বাবা

প্রকাশ: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১:১২ এএম
এখনো বিছানায় জুয়েল, দিশেহারা কৃষক বাবা
জুয়েল রানা

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পেটে গুলিবিদ্ধ হন জুয়েল রানা। একাধিক হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েও এখনো তিনি বিছানায়। তার দরকার উন্নত চিকিৎসা। কিন্তু দরিদ্র পরিবারের পক্ষে তার চিকিৎসা ব্যয় মেটানো আর সম্ভব হচ্ছে না। জুয়েলের ভবিষ্যৎ নিয়ে এখন দিশেহারা তার কৃষক বাবা আব্দুল জব্বার শেখ।

জুয়েল রানা (২৮) সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘গত ১৯ জুলাই ঢাকার বিজয় সরণি এলাকায় মিছিলে ছিলাম। আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালায়। হঠাৎ আমার পেটে গুলি বিদ্ধ হয়। সহযোদ্ধারা আমাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে আমার শরীরে অস্ত্রোপচার হয়। এরপর একাধিক হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েও সুস্থ হতে পারিনি। আরও উন্নত চিকিৎসা দরকার বলে ডাক্তার জানিয়েছেন।’

চিকিৎসাধীন মো. জুয়েল রানা আরও বলেন, ‘আমাদের এই স্বাধীন বাংলাদেশে আর কোনো স্বৈরাচারী, ফ্যাসিস্ট সরকার দেখতে চাই না। আমরা চাই বৈষম্যবিরোধী, অসাম্প্রদায়িক ও সঠিক একটি সরকারব্যবস্থা।’ 

জুয়েল রানার বাড়ি বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার শ্রীপুর গ্রামে। তিনি সরকারি ভোলা কলেজের দর্শন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের মেধাবী ছাত্র। মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়নের ছাত্রদলের সহসভাপতি ও জেলা ছাত্রদলের সদস্যও তিনি। তার স্ত্রীর নাম মুনিয়া আক্তার (২৪)। বাবা আব্দুল জব্বার শেখ কৃষিকাজ করেন। মা তাছলিমা বেগম গৃহিণী।

মুনিয়া বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পেটে গুলিবিদ্ধ হয়েও অলৌকিকভাবে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছেন তিনি। বর্তমানে তিনি বিছানায়। বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এখন নিয়মিত থেরাপি নিতে জেলা হাসপাতালে যেতে হয়। তার দরকার উন্নত চিকিৎসা। এ জন্য আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন।’

মুনিয়া আক্তার জানান, জুয়েলসহ তিনি গ্রামে পরিবারের সঙ্গেই বসবাস করেন। পরিবারে বাবা-মা ছাড়াও এক ভাই ও এক বোন রয়েছে। পড়াশোনার পাশাপাশি পরিবারের অর্থসংকট ঘুচাতে জুয়েল ছোটখাটো ব্যবসা করতেন। 

তিনি আরও জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সাড়া দিয়ে তিনি ১৯ জুলাই ঢাকার বিজয় সরণি এলাকায় মিছিলে অংশ নেন। এ সময়ে পেটে গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন। আহত অবস্থায় রানাকে একাধিক ছাত্ররা উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। এখানেই তার শরীরে সফল অস্ত্রোপচার হয়। 

এরপর তার পেটে আবার দ্বিতীয় অস্ত্রোপচার করা হয় বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। তার শরীরের অবস্থা কিছুটা উন্নতি হলে তাকে শ্রীপুর গ্রামের নিজ বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু গত ১১ আগস্ট শরীরের অবস্থার অবনতি হলে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগে তাকে আবার ভর্তি করা হয়। এখনো তার চিকিৎসা চলছে। 

মুনিয়া বলেন, ‘একদিকে চিকিৎসার খরচ, অন্যদিকে সংসার। রানার যেটুকু আয় রোজগার ছিল তাও বন্ধ। ফলে প্রয়োজনীয় অর্থের অভাবে সুচিকিৎসাও হচ্ছে না। পুরো পরিবার এখন দিশেহারা অবস্থায় আছে।’ 

এ বিষয়ে বরিশাল মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব মো. জিয়াউদ্দিন সিকদার বলেন, ‘মো. জুয়েল রানা একজন ছাত্রদলের সক্রিয় কর্মী। আওয়ামী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে তিনি সক্রিয় ছিলেন।’ 

তিনি আরও বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পেটে গুলিবিদ্ধ জুয়েল রানার প্রয়োজন সুচিকিৎসা।’ 

তিনি সংশ্লিষ্ট সবাইকে জুয়েল রানার সুচিকিৎসার জন্য এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

এ প্রসঙ্গে আলাপকালে বরিশাল জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহিদ ও আহত ব্যক্তিদের প্রকাশিত খসড়া তালিকা অনুযায়ী সুচিকিৎসার জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে যথাসাধ্য সাহায্য, সহযোগিতা করা হচ্ছে। শহিদ পরিবারগুলোর খোঁজ-খবরও নেওয়া হচ্ছে।’ সূত্র : বাসস