চট্টগ্রামে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর গায়েবানা জানাজা পড়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। এরপর তার প্রতীকী কফিন নিয়ে শিক্ষার্থীরা টানাহেছড়া শুরু করেন। কেউ কেউ তাতে কিল, ঘুষি ও জুতা দিয়ে মারতে থাকেন। শুধু তাই নয় শিক্ষার্থী ও ছাত্রজনতার একটি দল স্বরাস্ট্র উপদেষ্টাকে নানা ঠাট্টা, হাসি, মশকরা করতে থাকেন।
শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেল তিনটার দিকে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে এ কর্মসূচি পালন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা। এ সময় শিক্ষার্থীরা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে নিয়ে ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
এ সময় শিক্ষার্থীদের একজন রায়হান বলেন, ‘যে জোরে কথা বলতে পারেন না, যখন বিভিন্ন দায় নিয়ে এবং ভবন ঘেরাও নিয়ে তাকে যখন প্রশ্ন করা হয়, তখন তিনি মেয়েদের মতো উত্তর দেন যে, বিচারিক কাজ চলমান। আমরা এই নির্লজ্জ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বেহায়াপনার জন্য তার গায়েবানা জানাজা আদায় করেছি।’
শিক্ষার্থীরা এ সময় আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানান তারা। একই সঙ্গে তারা গাজীপুরে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন। সারা দেশে আওয়ামী লীগের যারা ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে তাদেরকে চিহ্ণিত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তারা।
এ সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রতীকী জানাজার নামাজে ইমামতি করা মাদ্রাসা শিক্ষক ওসমান গণি বলেন, ‘আমি আন্দোলনে গুলি খেয়েছি। অনেক ছাত্র আহত ও শহিদ হয়েছেন। এতো এতো রক্ত ঝরেছে। এখন আবারও আওয়ামী লীগ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠছে। কোনভাবেই এটা বরদাশত করা হবে না। আমরা প্রয়োজনে আবার মাঠে নামব, আন্দোলন করব, গুলি খাব এবং শহিদ হব। কিন্তু আর কোনো ফ্যাসিবাদকে ফিরে আসতে দেওয়া হবে না।’
এ সময় অনেককে বিভিন্ন হাসির অভিনয় করতে দেখা যায়। একদল শিক্ষার্থী গোল হয়ে দাঁড়ান আর মাঝখানে একজন মাইকে উচ্চস্বরে বলেন, ‘আল্লাহ...তোমার কাছে বিচার দিলাম...আমাদের যে ভাইয়েরা শহিদ হয়েছেন তাদের বিচার করার তৌফিক স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে দাও..., এই গণ-অভত্থানের সঙ্গে যারা বেইমানী করছে তাদেরকে তুমি তুইলা নাও..., যারা আমাদের ভাইদের খুনিদের সঙ্গে আপস করতেছে তাদেরকেও তুমি তুইলা নাও.... ইত্যাদি।’
এ সময় অন্যরা তার সঙ্গে সুর মেলান। একই সঙ্গে তারা উল্লাস ও কান্নার অভিনয় করেন।
এর আগে নগরের জামালখান, চেরাগী পাহাড় ও আশেপাশের এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। তারা আওয়ামী লীগের মাথাচাড়া দেওয়ার জন্য সরকারের নীরবতাকে দায়ী করেন।
সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক রাসেল আহম্মেদ বলেন, ‘এই যে সারা দেশে আওয়ামী লীগ দৃষ্টতা দেখাচ্ছে, সেসব হচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতার কারণে। এই সরকারের আইন উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা তাদের ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। তারা নীরব ভূমিকা পালন করছে। এই কর্মসূচির মাধ্যমে আমরা বুঝাতে চাচ্ছি সরকার ব্যর্থতার দিকে ধাবিত হচ্ছে। তাদেরকে এখুনি পুরো উদ্যমে ঘুরে দাঁড়াতে হবে এবং শক্ত হাতে এসব মোকাবিলা করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ছয় মাসেও সরকার কিছু করতে পারেনি। দৃশ্যমান কোনো বিচারিক অগ্রগতি নেই। কেন আমরা জীবন দিলাম। কেন স্বৈরাচার বিদায় করলাম। আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের গুণ্ডারা এখন রাস্তায় নামে আর পুলিশ অথর্বের ভূমিকায় আছে। কোনো কাজ করতেছে না।’
এ সময় সমাবেশে শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, ‘স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জীবিত অবস্থায় জিন্দা লাশ। সে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে বিচার কাজ করার চিন্তা-ভাবনা করতেছে। কিন্তু সে পারতেছে না। সে ব্যর্থ, আমরা তার পদত্যাগ চাই।’
শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘যখন সাখাওয়াত আওয়ামী লীগের পক্ষে বক্তব্য দেয় তখন তাকে বাদ দিয়ে জাহাঙ্গীরকে স্বরাস্ট্র উপদেষ্টা করা হয়। কিন্তু আমরা শুনেছি সে একজন লেফটেন্যান্ট জেনারেল, অথচ কথা শুনলে মনে হয় সে একজন হাবিলদার বা কনস্টেবল। সে জোরে কথা বলতে পারে না।’
এ সময় সমন্বয়ক রিদোয়ান সিদ্দিকী, তানভীর শরীফ, আরিফ মঈনুদ্দিন, আশরিফা আক্তার মুনীরা, সাদিয়া আফরিন, জোবায়েরুল মানিক, নাছির উদ্দিন, রাফহান রাফি, নাঈম ও খলিলুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এতে প্রায় তিন শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেন।
সুমন/