
এক দশমিক ৫২ শতাংশ নাগরিককে ভোটার তালিকায় যুক্ত করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে আজ সোমবার (২০ জানুয়ারি) থেকে সারাদেশে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ শুরু করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সকাল সাড়ে ১০টায় ঢাকা জেলার সাভার উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দিন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন চার নির্বাচন কমিশনার, এনআইডি মহাপরিচালকসহ ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
ইসির নির্বাচন প্রস্তুতির প্রথম ধাপ হলো ভোটার তালিকা চূড়ান্তকরণ। ইতোমধ্যে এই কাজ পুরোদমে শুরু করেছে সংস্থাটি। টানা দুই সপ্তাহ (৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত) চলবে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের তথ্য সংগ্রহের এই কার্যক্রম। এবার যাদের জন্ম ২০০৮ সালের ১ জানুয়ারি বা তার আগে তাদের তথ্যসংগ্রহ করা হবে। নিবন্ধন কেন্দ্রেই নাগরিকদের বায়োমেট্রিক গ্রহণের কাজ সম্পন্ন করা হবে ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত। উপজেলা/থানা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে ভোটার এলাকা স্থানান্তরের আবেদন গ্রহণ, মৃত ভোটারদের নাম কর্তনের তথ্যাদি এবং নতুন ভোটারের তথ্য সফটওয়ারের সাহায্যে ডাটাএন্ট্রি ও ডাটা আপলোড করা হবে ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত।
আইন অনুযায়ী, এসব নতুন ভোটারের তথ্য আগামী ২০২৬ সালের ২ জানুয়ারি তালিকায় যুক্ত হবে। এরপর দাবি-আপত্তি নিষ্পত্তি শেষে আগামী বছরের ২ মার্চ চূড়ান্ত তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করবে ইসি। এর আগে গত ২ জানুয়ারি চলতি বছরের খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ হয়েছে। তাতে যুক্ত হয়েছে ১৮ লাখ ৩৩ হাজার ৩৫২ নতুন ভোটার। সবমিলিয়ে মোট ভোটার সংখ্যা ১২ কোটি ৩৬ লাখ ৮৩ হাজার ৫১২ জন। ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি যারা ভোটার হওয়ার যোগ্য হয়েছেন ওই তালিকায় তাদের যুক্ত করা হয়েছে।
এই কার্যক্রম সম্পর্কে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন জানিয়েছেন, আগামী ৬ মাসের মধ্যে নিবন্ধন কার্যক্রম তারা শেষ করতে চান। পুরো কর্মযজ্ঞে নিয়োজিত করা হয়েছে প্রশিক্ষিত ৬৫ হাজার লোকবল। তারা ১ দশমিক ৫২ শতাংশ নাগরিককে ভোটার তালিকায় যুক্ত করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করবেন।
নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ জানিয়েছেন, ৪০ থেকে ৪৫ লাখ ভোটার হালনাগাদ কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। তালিকায় দ্বৈত ভোটার যেন না থাকে, মৃত ভোটার যেন বাদ যায় এবং নতুনদের অন্তর্ভুক্ত করে নির্ভুল ভোটার তালিকা প্রণয়নের জন্যই বাড়ি বাড়ি তথ্য হালনাগাদ করতে ইসির এই উদ্যোগ।
হালনাগাদ ভোটার তালিকা নতুন ভোটার হতে আগ্রহীদের যেসব কাগজপত্র তথ্য সংগ্রহকারীদের দিতে হবে- ১৭ ডিজিটের অনলাইন জন্মসনদের কপি; জাতীয়তা/নাগরিকত্ব সনদের কপি; নিকট আত্মীয়ের এনআইডির ফটোকপি (বাবা-মা, ভাই-বোন প্রভৃতি); এসএসসি/দাখিল/সমমান, অষ্টম শ্রেণি পাসের সনদের কপি (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে); ইউটিলিটি বিলের কপি (বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি/চৌকিদারি রশিদের ফটোকপি)।
ভোটার হওয়ার সময় যেসব বিষয়ে সতর্ক থাকা জরুরি- নিজের নাম, বাবা-মা এর নাম, জন্ম নিবন্ধন বা শিক্ষা সনদের সাথে হুবহু মিলিয়ে লিখতে হবে; জন্ম তারিখ অবশ্যই জন্ম নিবন্ধন বা শিক্ষা সনদ অনুযায়ী হতে হবে; স্থায়ী ঠিকানা লেখার ক্ষেত্রে অবশ্যই ভোটারের প্রকৃত স্থায়ী ঠিকানা লিখতে হবে; কোনো অবস্থাতেই দ্বৈত বা দু'বার ভোটার হওয়া যাবে না। এ বিষয়ে গতকাল এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ইসি জানিয়েছে, একাধিকবার ভোটার হওয়া আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। কেউ একাধিকবার ভোটার হলে আঙুলের ছাপ পরীক্ষার মাধ্যমে তা সহজেই শনাক্ত করা যায়।
ইসির তথ্য অনুযায়ী, সাধারণত তিন বছর পর বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা হয়। সবশেষ ২০২২ সালে নেওয়া ৩ বছরের তথ্যের শেষ ধাপের হালনাগাদ কার্যক্রম চলে গেলো ডিসেম্বর পর্যন্ত। সর্বশেষ গত ২ জানুয়ারি চলতি বছরের খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ হয়। তাতে যুক্ত হয়েছে ১৮ লাখ ৩৩ হাজার ৩৫২ নতুন ভোটার। সবমিলিয়ে মোট ভোটার সংখ্যা ১২ কোটি ৩৬ লাখ ৮৩ হাজার ৫১২ জন। ২০০৭-২০০৮ সালে ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা প্রণয়নের পর এর আগে ভোটার তালিকা হালানাগাদ করা হয়েছে ছয় বার। ২০০৯-২০১০ সাল, ২০১২-২০১৩ সাল, ২০১৫-২০১৬ সাল, ২০১৭-২০১৮ সাল, ২০১৯-২০২০ ও ২০২২-২০২৩ সালে বাড়ি বাড়ি গিয়ে হালনাগাদ কার্যক্রম পরিচালনা করেছে ইসি।
এলিস/এমএ/