গুজব তো সব সময়ই গুজব। ফলে কোনো রকম গুজবে সেনাবাহিনী বিচলিত নয়। বরং সেনাবাহিনী আরও একতাবদ্ধ হয়ে দেশ ও জাতির পাশে থেকে কাজ করে যাচ্ছে। সেনাবাহিনী সততা, ন্যায়-নীতির সঙ্গে প্রত্যয় ও সহনশীলতার সঙ্গে দেশ ও জাতির স্বার্থে কাজ করছে, ভবিষ্যতেও করবে।
বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) দুপুরে আনুষ্ঠানিক ব্রিফিংকালে এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন সেনাবাহিনী সদর দপ্তরের মিলিটারি অপারেশনস পরিদপ্তরের কর্নেল স্টাফ মো. শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘সেনাবাহিনী সরকারের নির্দেশে এই মুহূর্তে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে নিয়োজিত রয়েছে। সেনাবাহিনী সরকার নির্দেশিত যেকোনো দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে এবং পালন করে যাবে।’
ঢাকা সেনানিবাসের অফিসার্স মেসে আয়োজিত সেনাসদরের প্রেস ব্রিফিংকালে (৫ম) আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সেনাবাহিনীর বিগত দুই মাসের কার্যক্রম তুলে ধরেন কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম।
তিনি এ সময় বলেছেন, বিগত দুই মাসে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী অন্যান্য সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বিত উদ্যোগে বিভিন্ন ধরনের অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত ২ হাজার ৪৫৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ছাড়া ৫ আগস্টের পর থেকে এ পর্যন্ত মোট ৭ হাজার ৮২২ জনকে বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। যাদের মাঝে কিশোর গ্যাং, তালিকাভুক্ত অপরাধী, মাদক ব্যবসায়ী, অপহরণকারী, চোরাচালানকারী, প্রতারক ও দালাল চক্র, চাঁদাবাজ, ডাকাত, ছিনতাইকারী ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এরই ধারাবাহিকতায় গত দুই মাসে সেনাবাহিনী ৩২০টি অবৈধ অস্ত্র ও ৫৬৪ রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার করে। এ ছাড়া এই পর্যন্ত সর্বমোট ৯ হাজার ৩৭০টি অবৈধ অস্ত্র ও ২ লাখ ৮৫ হাজার ৫২ রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে বলেও জানান তিনি।
কর্নেল শফিকুল ইসলাম বলেন, ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ঘরমুখী মানুষের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দিতে ও সুশৃঙ্খলভাবে যানবাহন চলাচল নিশ্চিত করতে সেনাবাহিনী ঈদের আগে ও পরে মিলে ২ সপ্তাহের বিশেষ কার্যক্রম গ্রহণ করে। এর অংশ হিসেবে জাতীয় মহাসড়কগুলোতে নির্বিঘ্নে যান চলাচল নিশ্চিত করতে ঢাকাসহ দেশের সব জেলার বাসস্ট্যান্ড, রেলস্টেশন এবং লঞ্চ টার্মিনাল ও মহাসড়কে দিন-রাত টহল পরিচালনা, স্পর্শকাতর স্থানে চেকপোস্ট স্থাপন এবং জনগণের মধ্যে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা হয় যা মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। ফলে সড়ক দুর্ঘটনাসহ অন্যান্য অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড গত বছরের তুলনায় বহুলাংশে হ্রাস পায় যা জনসাধারণকে নির্বিঘ্নে গন্তব্যে পৌঁছানোসহ পরিবার-পরিজনের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ ও আনন্দঘনভাবে ঈদ উদযাপনে সহায়ক ভূমিকা রাখে।
সশস্ত্র বাহিনীর ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতায় কাজ করার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে কর্নেল শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা কাজ করতে গিয়ে কোনো বাধা পাচ্ছি না। আমরা যেকোনো অপরাধীকে গ্রেপ্তারের পর অন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করে থাকি। পরবর্তী আইনি বিচারকাজটি সেনাবাহিনীর দায়িত্বের বহির্ভূত। ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতায় সেনাবাহিনী কাজ করে যাচ্ছে, যেখানে যতটুকু ব্যবহার করার দরকার, ততটুকুই ব্যবহার করা হচ্ছে।’
বৈষয়িক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ সুপার পাওয়ারদের কেন্দ্রবিন্দু এমন প্রসঙ্গের জবাবে কর্নেল শফিকুল ইসলাম বলেন, বন্ধুপ্রতিম দেশের সঙ্গে সব সময় সুসম্পর্ক বজায় রয়েছে। সম্প্রতি সেনাপ্রধানের রাশিয়া ও ক্রোয়েশিয়া সফর এমনই একটি নিয়মিত কার্যক্রম। এই সফরে সেনাপ্রধান বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন, বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রি পরিদর্শন করেন। এর ফলে সামরিক সহযোগিতা আরও প্রসার হবে।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচিতে ও আগে কয়েকটি জায়গায় নিষিদ্ধ সংগঠনের পতাকা হাতে নিয়ে মিছিল করার প্রসঙ্গে সাংবাদিকরা প্রশ্ন তুললে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘মার্চ ফর গাজার বিক্ষোভে সেনাবাহিনী কালো পতাকাধারীদের রহিত করেছে। কালো পতাকাধারী হলেই যে সে জঙ্গি সংগঠনের এটির কোনো প্রমাণ আমরা এখনো পাইনি।’ তবে এ বিষয়ে সেনাবাহিনী সোচ্চার রয়েছে। গোয়েন্দা বাহিনীও তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।
খাগড়াছড়িতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) পাঁচ শিক্ষার্থীকে অপহরণের প্রসঙ্গে জানতে তিনি বলেন, অপহৃত পাঁচ শিক্ষার্থীর অবস্থান কিছুটা শনাক্ত করা গেছে। এ বিষয়ে বিশেষ অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রামের নিরাপত্তা পরিস্থিতি ভালো, নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
এ সময় তিনি রাজধানীতে বিভিন্ন ধরনের অবরোধ মোকাবিলায় কার্যকরী পদক্ষেপ, মায়ানমার সীমান্তে আরাকান আর্মিদের বাংলাদেশের জেলেদের ও মাছভর্তি ট্রলার ধরে নিয়ে যাওয়া ঠেকাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ, বিগত সময়ে শিল্পাঞ্চলগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ১৩৭টি ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছে এবং ৩১ বার বিভিন্ন মূল সড়ক অবরোধ থেকে অবমুক্ত করাসহ সেনাবাহিনীর বিভিন্ন কার্যক্রম তুলে ধরেন। এ ছাড়া সম্প্রতি সাতক্ষীরার আশাশুনিতে খোলাপেটুয়া নদীর প্রায় ৩০০ মিটার বাঁধ ভেঙে গেলে আশপাশের প্রায় ৯টি গ্রাম প্লাবিত হওয়ার প্রেক্ষাপটে সেনাবাহিনীর ত্রাণসহ মানবিক সহায়তা এবং মায়ানমারে ৭.৭ মাত্রার ভূমিকম্পে মানবিক বিপর্যয়ে প্রতিবেশী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ সরকারের জরুরি উদ্ধার, ত্রাণ ও চিকিৎসা সহায়তায় সেনাবাহিনীর ভূমিকা উল্লেখ করেন।