‘নারী, শান্তি ও নিরাপত্তা বিষয়ক এজেন্ডার স্থানীয়করণ’ কর্মশালায় বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা। ছবি: সংগৃহীত
নারীর ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও অধিকার নিশ্চিত করতে বহুমুখী উদ্যোগ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধিরা। তারা বলেছেন, সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা বৃদ্ধি করতে হবে। এজন্য আর্থিক সহযোগিতা নিয়ে দাতা সংস্থাগুলোকেও এগিয়ে আসারও আহ্বান জানান তারা।
রবিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর একটি অভিজাত হোটেলে বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ (বিএনপিএস) আয়োজিত ‘নারী, শান্তি ও নিরাপত্তা বিষয়ক এজেন্ডার স্থানীয়করণ’ কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ সব কথা বলেন তারা। গ্লোবাল নেটওয়ার্ক অব উইমেন পিসবিল্ডার্স (জিএনডব্লিউপি) এর সহযোগিতায় আয়োজিত কর্মশালার উদ্বোধন করেন বিএনপিএস’র পরিচালক শাহনাজ সুমী।
অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন কানাডিয়ান হাইকমিশন অব বাংলাদেশের সেকেন্ড সেক্রেটারি স্টিফেন এসব্রাসসার্ড, জিএনডব্লিউপির ঊর্ধ্বতন কর্মসূচি পরিচালক জেসমিন নারিয়ো গ্যালাস, ইউএন উইমেন বাংলাদেশের এনালিস্ট তানিয়া শারমিন, বাংলাদেশ পুলিশ নারী নেটওয়ার্কের সাধারণ সম্পাদক শাহালা পারভিন পিপিএম, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেমসহ অনেকে।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, নানা ধরনের সামাজিক ও রাজনৈতিক সংঘাতের কারণে দেশের নারীরা বিশেষ পরিস্থিতির মুখে পড়ছে। নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ এখন একটি বড় চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে সাইবার সহিংসতা বেড়েছে। ১৮ থেকে ২৩ বছর বয়সী নারীরা বেশি সহিংসতার শিকার হচ্ছেন। এই অবস্থায় নারীর ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। এর জন্য সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা বৃদ্ধি করতে হবে। এসময় বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা নারীদের শান্তি ও নিরাপত্তা নিয়ে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখী হতে হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধিরা।
তারা বলেছেন, রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি দেশের নারীদের অনেক সময় শান্তি প্রতিষ্ঠা প্রক্রিয়ার বাইরে রাখা হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সামাজিক ও কাঠামোগত পরিবর্তন জরুরি। সেই জরুরি কাজের লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন বলেও জানান তারা।
পুলিশ নারী নেটওয়ার্কের সাধারণ সম্পাদক শাহালা পারভিন জানান, গণঅভ্যুত্থানের পর পুলিশদের জন্য মানবাধিকার বিষয়ক প্রশিক্ষণ চালু করা হয়েছে। এছাড়া পুলিশ বিভাগে নারীদের নেতৃত্বস্থানীয় পদে আনার জন্য ইতোমধ্যে ৬টি জেলায় ৬জন নারী পুলিশ কর্মকর্তাকে পুলিশ সুপার পদে এবং ২জনকে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পদে পদায়ন করা হয়েছে। রোহিঙ্গা নারীদের শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নারী পুলিশ নিয়োগ করা হয়েছে, যারা ক্যাম্পে বিভিন্ন ধরনের অভিযান পরিচালনা করছেন।
কর্মশালায় জানানো হয়, সরকার ইতোমধ্যে নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে একটি হেল্পডেস্ক চালু করেছে। সেটির কার্যকর ব্যবস্থাপনার জন্য একটি নীতিমালা প্রণয়ন করেছে। একটি ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার চালু রয়েছে। সহিংসতামূলক কার্যক্রমের তদন্ত ও দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নারী পুলিশদের সমন্বয়ে একটি প্রকল্প চালু করেছে। এছাড়া ২০২০ সালে সাইবার জগতে নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে একটি সাইবার ইউনিটও চালু করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, বিএনপিএস নারীর প্রতি বৈষম্য নিরসনে ১৯৮৬ সাল থেকে তৃণমূল পর্যায় থেকে শুরু করে নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে কাজ করে আসছে। অন্যান্য কাজের পাশাপাশি সংস্থাটি ২০১৭ সাল থেকে নারী, শান্তি ও নিরাপত্তা ইস্যুতে দেশের নারী সংগঠনগুলোকে সঙ্গে নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সরকারের সঙ্গে কাজ করছে।
তিথি/মাহফুজ